পৃথিবীর অজানা তথ্য
পৃথিবীর কিছু অজানা ও বিস্ময়কর তথ্য নিয়ে আজকের আলোচনা। অনেক তথ্য থেকে ১০টি আকর্ষণীয় তথ্য বাছাই করে পাবলিশ করেছি। আমাদের পৃথিবীর নানা অজানা ঘটনা ও অজানা রহস্য নিয়ে বিজ্ঞানীগণের পরিশ্রমের সীমা নেই। প্রতিনিয়ত আমরা নতুন আবিষ্কার ও নতুন আকর্ষণীয় তথ্য পাচ্ছি। এই নতুন রহস্য, তথ্য ও তত্ত্ব উন্মোচনের ফলে পুরোনো মতবাদ ও বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করছি। পৃথিবী, অন্যান্য গ্রহ, নক্ষত্র ও মহাকাশ সম্পর্কে অজানা ইতিহাস উন্মোচনের জন্য বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় প্রযুক্তি এখন অনেক এগিয়ে গেছে। এখন খুব সহজেই আমরা অনেক জটিল বিষয় জানতে পারি। বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, প্রকৃতি সহ অজানা স্থান, অজানা প্রাণী, অজানা ইতিহাস, নানা প্রাকৃতিক বিস্ময় ইত্যাদি এখন একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াও জ্ঞান অর্জন করতে শিক্ষকের প্রয়োজন হয়না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্লগ, জার্নাল, ভিডিও ডকুমেন্টারি আমাদের সবকিছুকেই সহজ করে দিয়েছে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবাই সবার মতো করে জ্ঞান চর্চা করছে এবং সবার উপর ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমি ব্লগের মাধ্যমে চেষ্টা করছি, তাই আজ কিছু জানা অজানা তথ্য ও আকর্ষণীয় ঘটনা নিয়ে হাজির হয়েছি।
পৃথিবীর অজানা তথ্য |
পৃথিবীর রহস্য
১। রহস্যময় পৃথিবীর অজানা তথ্য - পৃথিবী আসলে সূর্যের চারদিকে ঘুরেনা
এই কথাটি শুনে হয়তো অবাক হচ্ছেন, এ যেন এক নতুন অজানা তথ্য। মনেমনে বিরক্ত হচ্ছেন বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশনের জন্য। ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনা করে জেনেছি এবং এটাকে চিরন্তন সত্য হিসাবেই মেনে আসছি। এখন যদি শুনতে হয় এই চিরন্তন সত্য পুরোপুরি সঠিক নয় তাহলে অবাক হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এটাই সত্য যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরেনা। শুধু পৃথিবী কেন সৌরজগতের কোন গ্রহই সূর্যের চারদিকে ঘুরেনা, এমনকি এই মহাবিশ্বের কোন গ্রহই কোন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরেনা। স্পেসিফিক এই বিষয়টি নিয়ে অন্য কোন ব্লগে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে। আসলে এটা পদার্থবিজ্ঞানের জটিল এক বিষয়ে তাই অল্প কথায় বিষয়টি বুঝাতে পারবোনা। তবে এতটুকু না বললেই নয়- গ্রহ এবং নক্ষত্ররা আসলে তাদের সাধারণ ভর কেন্দ্রের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। ভরের এই সাধারণ কেন্দ্রকে ব্যারিসেন্টার বা ভরকেন্দ্র বলা হয়। আমাদের সৌরজগতের ব্যারিসেন্টার বা ভরকেন্দ্র সূর্যের কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি। সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি ভর সূর্যের, সে তুলনায় অন্যান্য গ্রহের ভর খুব সামান্যই তাই সৌরজগতে সূর্যের ভর ও বিশালত্বের কারনে গড় ব্যারিসেন্টার বা ভরকেন্দ্রের অবস্থান সূর্যের নিকটবর্তী। সমস্ত গ্রহ সহ সূর্য নিজেও এই গড় ভরকেন্দ্রের অবস্থানের চারপাশে অবিরাম ঘুরছে। ভরকেন্দ্রের অবস্থান সূর্যের কাছাকাছি হওয়ার কারনে আমরা মনে করি পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহগুলিও সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। তাই এটা বলা যায় আপাত দৃষ্টিতে মনে হলেও পৃথিবী আসলে সূর্যের চারদিকে ঘুরেনা। যেহেতু পৃথিবীর ঘূর্ণন বিষয়টি একদম বেসিক কিন্তু এর ইন্টার্নাল সায়েন্সটা বেশ জটিল। তাই খুব সম্ভবত শিশু-কিশোরদের বুঝার সুবিধার্থে ব্যারিসেন্টার বা ভরকেন্দ্রের তত্ত্বটির বদলে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যাইহোক পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে, এই তত্ত্বটিও ভুল বলা যাবেনা কিন্তু পুরোপুরি সঠিকও বলা যাবেনা। তবে শতভাগ সঠিক হলো পৃথিবীসহ সমস্ত গ্রহ নক্ষত্র তাদের ব্যারিসেন্টার বা ভরকেন্দ্রের চারদিকে ঘুরে।
২। পৃথিবীতে অন্যান্য "চাঁদ" আছে
আমাদের চাঁদ ছাড়াও মহাকাশে আরও দুটি বস্তু রয়েছে যা পৃথিবীর কাছাকাছি প্রদক্ষিণ করে। তারা সত্যিই "চাঁদ" নয়, কিন্তু তারা সেখানে আছে! তাদের মধ্যে একটি হল একটি গ্রহাণু যা আমরা সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবীকে অনুসরণ করে। একে ক্রুইথনে বলে। আর একটি ভিন্ন গ্রহাণু আমাদের কাছাকাছি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে কিন্তু এর কক্ষপথ ঘোড়ার নালের আকৃতির, তাই এটি প্রতি ৯৫ বছরে পৃথিবীর কাছাকাছি আসে। এটিকে গ্রহাণু 2002 AA29 বলা হয়। এই দুটি ছাড়াও আরো কিছু গ্রহাণূ আছে যথা- 2010 TK7 গ্রহাণূ, একটি ট্রোজান গ্রহাণু “এল৪” (L4) এবং 2006 RH120।
৩। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর সর্বত্র সমান নয়
পৃথিবী মসৃণ এবং নিখুঁত হলে মাধ্যাকর্ষণ সর্বত্র একই রকম হত। কিন্তু পৃথিবীতে পর্বত, মহাসাগর, উপত্যকা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পৃথিবী জুড়ে মহাকর্ষের পার্থক্যগুলিকে অভিকর্ষের অসঙ্গতি বলা হয়। GRACE (গ্র্যাভিটি রিকভারি অ্যান্ড ক্লাইমেট এক্সপেরিমেন্ট) নামে একটি মিশনে একটি উপগ্রহ রয়েছে যা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এবং পৃষ্ঠের মাধ্যাকর্ষণকে ম্যাপ করে। এই উপগ্রহের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর সর্বত্র সমান নয়।
৪। পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থানটি সমুদ্রের কাছে
উত্তর চিলির আতাকামা মরুভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান। কথিত আছে, সেখানে একটি শহরে ৪০০ বছরে একবারও বৃষ্টি হয়নি! সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল, এই আতাকামা মরুভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম জলের উৎস প্রশান্ত মহাসাগরের ঠিক পাশেই রয়েছে।
৫। শুধু একটি বরফ যুগ ছিল না
আপনি পৃথিবীতে বরফ যুগের কথা শুনে থাকবেন। এটি এমন একটি সময় ছিল যখন উলি ম্যামথগুলি বিচরণ করত। তবে এটি ৩০,০০০ বছর আগে একবার ঘটেনি। বিজ্ঞাণীদের ধারণা অতীতে চারটি ভিন্ন বরফ যুগ ছিল। ওই সময়ে, পৃথিবী সম্পূর্ণরূপে বরফে আবৃত হত।
৬। দিন দীর্ঘ হচ্ছে
৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে যখন পৃথিবী প্রথম গঠিত হয়েছিল, তখন একটি দিন প্রায় ছয় ঘন্টা দীর্ঘ ছিল। তারপর থেকে, পৃথিবী ঘূর্ণন গতি ধীর হয়ে গেছে, এখন ঘুরতে বেশি সময় লাগে। প্রতি ১০০ বছরে, দিনটি ০.০০১৭ সেকেন্ড দীর্ঘ হয়। কেন? চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ ও মাধ্যাকর্ষণের ফলে সৃষ্ট জোয়ার-ভাটা পৃথিবীর ঘূর্ণনকে কমিয়ে দিচ্ছে। সমগ্র পৃথিবীতে জোয়ারের উত্থান এবং পতনের সাথে সাথে এটি এমন একটি শক্তি তৈরি করে যা পৃথিবীর ঘূর্ণনকে ধীর করে দেয়।
৭। পৃথিবী পুরোপুরি গোলাকার নয়
যদিও আমাদের পৃথিবী গোলাকার, তবে এটি পুরোপুরি গোলাকার নয়। পৃথিবীর ঘূর্ণনের সময় সৃষ্ট শক্তির কারণে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু কিছুটা চ্যাপটা বা সমতল হয়। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি এবং অন্যান্য শক্তির কারনে গ্রহটির আকার খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে পরিবর্তিত হলেও এটি এখনও গোলাকার বলা যায় তবে পুরোপুরি নয়। আমরা যখন পৃথিবীর ছবি দেখি, এটি আপাতদৃষ্টিতে গোলাকার দেখায়। কিন্তু এটা আসলে পুরোপুরি গোলাকার নয়।
৮। মহাদেশগুলি সর্বদা চলমান থাকে
প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে, আমরা আজ যে সমস্ত মহাদেশ দেখতে পাচ্ছি সেগুলি একটি বড় সুপারমহাদেশ ছিল যার নাম পাঞ্জিয়া (Pangaea)। আমরা আজ যে মহাদেশগুলি দেখতে পাচ্ছি সেগুলি সুপারমহাদেশ থেকে ভূপ্রাকৃতিক কারনে মূলভূমি থেকে আশেপাশে ছড়িয়ে গেছে এবং ধীরে ধীরে সরে গিয়ে বর্তমানের রূপে ফিরেছে। এভাবেই উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশগুলির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পাঞ্জিয়া প্রথম সুপারমহাদেশ ছিল না। প্রায় ৮০০ মিলিয়ন বছর আগে, সমস্ত মহাদেশগুলিকেও একসাথে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। আমরা এই পূর্ববর্তী সুপারমহাদেশকে রডিনিয়া বলি। ভূঅভ্যন্তরে মহাদেশীয় বা উপমহাদেশীয় টেকটোনিক প্লেটগুলি এখনো স্থির অবস্থায় নেই এরাও সর্বদাই চলমান অবস্থায় আছে।
৯। সমুদ্রের স্তরের পরিবর্তন
শেষ বরফ যুগে, বরফের হিমবাহে এত বেশি পানি আটকা পড়েছিল যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩৯০ ফুট (১২০ মিটার) পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল। এটি প্রায় ৪০ তলা উঁচু একটি দালানের মতো উচ্চতা সম্পন্ন। তারও অনেক আগে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এখনকার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এটি ২৩০ ফুটের মতো উঁচু ছিল। আজ ভূমির এমন কিছু অংশ রয়েছে যা সমুদ্রের জলের অনেক নীচে ছিল। আবার, সাহারা মরুভূমি একসময় সমুদ্রের নীচে ছিল।
সূর্যের রহস্য
১০। সূর্য সম্পর্কে অজানা তথ্য - সূর্য চিরকাল জ্বলবে না
সমগ্র মহাবিশ্বের কোন কিছুই চিরকাল স্থায়ী হয় না। সৌরজগতের প্রাণ সূর্যও একদিন ধংস হয়ে যাবে, এবং ধংস হয়ে একটি ব্ল্যাকহোলে পরিণত হবে যা একসময় পুরো সৌরজগতকে গ্রাস করবে। তবে খুব শীঘ্রই সূর্য ধংস হয়ে যাচ্ছে না। আমাদের সূর্যের শক্তি প্রায় পাঁচ বিলিয়ন বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ততোক্ষণে যদি পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে জীবকূলের বসবাসের জন্য পৃথিবী ছেড়ে একটি নতুন গ্রহ খুঁজে বের করতে হবে। সৌভাগ্যবশত, আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় রয়েছে, এর জন্য আমাদের আগামী পাঁচ বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হবে।
উপসংহার
এই ব্লগের বিষয়বস্তু বড়দের জন্য তেমন কাজে লাগবে না। অবশ্য এটা ছোটদের উদ্দেশ্যেই লেখা। জ্ঞান বিজ্ঞান ট্যাগে ছোটদের জন্য পৃথিবীর বিস্ময়কর তথ্য সহ অজানা বিজ্ঞান, অজানা প্রযুক্তি, অজানা সংস্কৃতি, অজানা ঐতিহ্য ইত্যাদি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখবো। আমার লেখা তথ্যের সত্যতার জন্য নাসার ওয়েবসাইটকে রেফারেন্স হিসাবে নিতে পারেন। কিছু অজানা তথ্য নিয়ে আবার হাজির হবো।
Feriwala এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
0 Comments