Feriwala - Inspiring Heart and Lives

Header Ads Widget

পরকীয়া: সম্পর্কের গোপন অধ্যায়

পরকীয়া

কোনদিন প্রেমে পড়েননি এমন  মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। প্রেম হলো একটি অত্যন্ত সুন্দর ও গভীর সম্পর্ক, যা দুই মানুষের মধ্যে একটি আদরের ও সমর্থনের ভাবনা থেকে উৎপত্তি হয়। এটি প্রেমিকের মধ্যে আপনবদ্ধতা, আদর, সহানুভূতি, সম্মতি, আত্মীয়তা এবং পরস্পরের সমর্থনের ভাবনা সহ নানা উৎসাহের অনুভূতি সৃষ্টি করে। প্রেমের অন্তর্গত আত্মশক্তি, সম্মান, সম্মতি এবং অবস্থা মানের অন্যত্র সৃষ্টি করে এবং এটি একজন মানুষের জীবনে অভাবনীয় পরিবর্তন আনতে পারে। প্রেম মানব সমাজের মধ্যে একটি অপার বাঁধা, যা সাহস, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ভালবাসার ভাবনার সাথে জড়িত। তবে সবধরনের প্রেম একরকম হলেও এক ধরনের প্রেম একটু আলাদা, যার নাম পরকীয়া।

পরকীয়া প্রেম
পরকীয়া প্রেম | Photo by Feriwala Studio 


পরকীয়া প্রেম হলো বিবাহিত বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কের বাইরে অন্য কারো সঙ্গে প্রেম বা শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো। এক কথায় বলা যায় পরকীয়া প্রেম হলো একটি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। এটি সাধারণত গোপনে ঘটে থাকে এবং সামাজিক বা ধর্মীয় নিয়মের বিপরীতে চলে। পরকীয়া প্রেমের কারণে সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা, মানসিক চাপ, এবং পারিবারিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সমাজে এটি একটি বিতর্কিত বিষয়, কারণ এটি নৈতিকতা এবং বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেকের মতে, এটি সম্পর্কের মধ্যে আবেগের ঘাটতি, অপরিসীম আকাঙ্ক্ষা বা অতৃপ্তি থেকে জন্ম নেয়। অনেকদিন ধরেই পরকীয়া প্রেমের উপর প্রবন্ধ লেখার চিন্তা করেছি। আজ এই ব্লগে পরকীয়া প্রেম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।


পরকীয়া প্রেমের মূল্যায়ন

পরকীয়া এক অনৈতিক সম্পর্ক। পরকীয়া হলো খুবই সুস্বাদু বিষাক্ত ও নিষিদ্ধ একটা ফল। যা বিতৃষ্ণ, অতৃপ্ত মানুষের তৃষ্ণা ও তৃপ্তি মেটায় আবার জীবন ধংসের কারন হিসেবেও দেখা দেয়। যতো ধরনের প্রেম আছে তারমধ্যে পরকীয়া প্রেমকে প্রচন্ড শক্তিশালী প্রেম বলে মনে করা হয়। প্রতিটা প্রেমে স্বার্থটা অতি সূক্ষ্মভাবে বিদ্যমান থাকে। আপাতদৃষ্টিতে নিঃস্বার্থ মনে হলেও আসলে স্বার্থ ছাড়া কোন প্রেম হয়না। আর পরকীয়া প্রেম গড়েই উঠে শতভাগ স্বার্থের উপর ভিত্তি করে। পরকীয়া প্রেমে শারিরীক সম্পর্কই হলো মূল উদ্দেশ্য। তাই এই প্রেম যে নৈতিকতা বিরোধী সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পরকীয়া সম্পর্কের সমস্যা হলো এর আকর্ষণ ক্ষমতা, যে ক্ষমতার কারেনে মানুষ এর নেগেটিভ বা এর ক্ষতিকর দিক জেনেও এই সম্পর্কের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এই আকর্ষণের কারনেই মানুষ অবচেতনভাবেই পরকীয়া প্রেমের কাহিনী, পরকীয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন নাটক, গল্প, উপন্যাস ও চলচ্চিত্র ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট হয়। 


পরকীয়া প্রেমের লক্ষণ

সঙ্গীর আচরণে পরকীয়ার লক্ষণগুলো শতভাগ প্রকাশ নাও হতে পারে আবার প্রকাশ পেলেও সেগুলো যে পরকীয়া সেটাও সঠিক নাও হতে পারে তবে লক্ষণগুলি প্রকাশ পেলে যাচাই-বাছাই করলে বুঝতে পারা যাবে যে এটা পরকীয়া কিনা। যারা পরকীয়ায় জড়ায় তাদের মধ্যে কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয়, যেমনঃ আপনি যদি বিনা কারনে সঙ্গী কর্তৃক অবহেলার শিকার হন; সঙ্গী যদি কোন কারন ছাড়াই পরিবারে সময় কমিয়ে দেয়; আপনার সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে চায় ও কথা কম বলতে চায়; সঙ্গী সবার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে একাকীত্বে থাকতে চায়; আপনার সাথে ঘুরতে যাওয়া বা একসাথে অন্য কোন কাজে আগ্রহ প্রকাশ না করে কোন অজুহাত দেখায়; অযৌক্তিক রাগ করা এবং তুচ্ছ কারনে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করা; ফোন, ইন্টারনেট, স্যোসাল মিডিয়াতে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করা; হঠাৎ নিজের ফিটনেস ও সেীন্দয্যের প্রতি অতিরিক্ত সচেতন হওয়া; এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ব্যাপারে উদাসিন থাকা এবং অভ্যাসগত বা শুধূ আপনাকে খুশি করতে যাতে সঙ্গীর প্রতি সন্দেহের সৃষ্টি না হয় সেই কারনে যৌন সম্পর্ক করছেন কিনা- এগুলোই হলো সঙ্গী পরকীয়া প্রেমে জড়িয়েছে কিনা তার লক্ষণ।


পরকীয়া প্রেমের কারণ

পরকীয়া প্রেমের কারণগুলি বিভিন্ন হতে পারে এবং এগুলি ব্যক্তির মানসিক অবস্থা, সম্পর্কের গতিশীলতা, এবং সামাজিক প্রভাবের উপর নির্ভর করে। নিচে কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলোঃ


সম্পর্কে আবেগের ঘাটতিঃ দীর্ঘদিনের সম্পর্কের মধ্যে অনেক সময় উত্তেজনা বা রোমান্সের অভাব দেখা দেয়, যা একজনকে নতুন কিছু খুঁজতে উৎসাহিত করতে পারে।
অনুভূতির অবহেলাঃ একজন সঙ্গী যদি নিজেকে অবহেলিত বা অবমূল্যায়িত মনে করে, তবে সে অন্য কারো কাছে সেই ভালোবাসা বা স্বীকৃতি খোঁজার চেষ্টা করতে পারে।
শারীরিক আকর্ষণঃ শারীরিক আকর্ষণও পরকীয়া প্রেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে। কেউ হয়তো শারীরিক আকর্ষণের কারণে নতুন কারো প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।
বিরক্তি বা একঘেয়েমিঃ দীর্ঘদিনের সম্পর্কে একঘেয়েমি আসতে পারে, যা থেকে মুক্তি পেতে কেউ নতুন কিছু খোঁজার চেষ্টা করে।
প্রতিশোধ বা অসন্তোষঃ কখনো কখনো সঙ্গীর বিরুদ্ধে রাগ বা অসন্তোষের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কেউ পরকীয়া প্রেমে জড়াতে পারে, বিশেষ করে যদি সঙ্গী আগে থেকেই কোনো ভুল করে থাকে।
মানসিক বা সামাজিক চাপঃ অনেক সময় মানসিক চাপ বা সামাজিক প্রভাবের কারণে মানুষ অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক করতে পারে, যেমন কাজের চাপ, বন্ধুবান্ধবের প্রভাব ইত্যাদি।
বৈবাহিক জীবনে সমস্যার সমাধানে অক্ষমতাঃ কিছু মানুষ তাদের সম্পর্কের সমস্যাগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়ে নতুন সম্পর্কের মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পেতে চায়।
আত্মবিশ্বাসের অভাবঃ আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে কেউ অন্য কারো কাছে আত্মপ্রত্যয় বা সমর্থন খুঁজতে পারে, যা পরকীয়ার দিকে ধাবিত করে।
সাংস্কৃতিক বা সামাজিক প্রভাবঃ কিছু সমাজ বা সংস্কৃতিতে পরকীয়া সম্পর্কের প্রতি কিছুটা শিথিলতা থাকে, যা মানুষকে এর প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে।

এই কারণগুলো হলো পরকীয়ার সাধারণ কারন। পরকীয়া সম্পর্কের মনস্তাত্বিক কারনগুলো অতিগুরুত্বপূর্ণ। পরকীয়া সম্পর্কের মনস্তাত্ত্বিক কারন নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ



পরকীয়া কেন হয়? পরকীয়ার সাইকোলজিক্যাল বিশ্লেষণ

পরকীয়া প্রেম বিশ্লেষণ করলে দুটি মানুষের মানসিক ও শারিরীক মিলন এবং এক বা একাধিক বিচ্ছেদ বা ভগ্নপ্রায় সম্পর্কের ঘটনা পাওয়া যায়। যারা শারিরীক ও মানসিক ভাবে আনস্যাটিসফাইড তারাই পরকীয়ায় জড়ায়। এক কথায় বলতে গেলে দুজন আনস্যাটিসফাইড মানুষের যে সম্পর্কের মাধ্যমে মিলন ঘটে সেটাই পরকীয়া। একটি চলমান প্রেম বা বৈবাহিক সম্পর্কে বিভিন্ন কারনেই দুজনের মাঝে দূরত্ব, শূণ্যতা, অশান্তি সৃষ্টি হয়। বর্তমান সঙ্গীর কাছে মানসিক বা দৈহিক সুখ থেকে বঞ্চিত হলে মানব মন এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনা তাই মন চাহিদা মেটানোর জন্য বিকল্প মানুষ খুঁজে। সে সময় মনের মতো বিকল্প কাউকে খু্ঁজে পেলে তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি এবং একটি ভালোবাসার জটিলতা যুক্ত একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্কের নামই পরকীয়া। সাধারনত একটি বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা অবস্থায় অন্যকোন বিবাহিত বা অবিবাহিত কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক বলে মনে করা হয়। আবার অবিবাহিত প্রেমিক জুটির মধ্যে তৃতীয় পক্ষের আগমনও একধরনের পরকীয়া।


পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার জন্য বর্তমান সঙ্গীর দোষত্রুটিও কম দায়ী নয়। বর্তমান সঙ্গীটি যদি তার সঙ্গীর চাহিদা পূরন করতো তাহলে পরকীয়া সম্ভব হতোনা। তাই যারা পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ায় তাদেরকে সমাজের ধারা অনুযায়ী ঢালাওভাবে খারাপ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক হবেনা। এর কারন হলো আনস্যাটিসফাইড যেকেউ যেকোন সময় পরকীয়ায় জড়িতে যেতে পারে সে ভদ্রলোক হোক বা অভদ্রলোক হোক। তারা সঙ্গীর কাছ থেকে যা চায় তা পায়না বলেই একজন পারফেক্ট মানুষকে ফিল করে যে তার নির্দিষ্ট চাহিদা পুরন করবে, হোকনা সে অন্যের সঙ্গী। মানুষ পারফেক্ট একজন সঙ্গীর শূণ্যস্থান পূরন করতে বদ্ধ পরিকর। সে হয়তো বাধ্য হয়েছে পরকীয়ায় জড়াতে। তাই শুধু যারা পরকীয়ায় জড়ায় তারাই দোষী তেমনটা নয়, যার কারনে সঙ্গী পরকীয়ায় জড়িয়ে যায় সেও সমানভাবে দোষী। ব্যাপারটা এমন না যে সংসারে বা সম্পর্কে কোন ঝামেলা নেই তবুও কেউ পরকীয়ায় বা অনৈতিক কোন সম্পর্কে জড়িয়েছে, এমনটা হলে সে অবশ্যই চরিত্রহীন। তবে পরকীয়া সমাজে গৃহীত হতে পারতো যদি চলমান খারাপ সম্পর্ক বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নতুন করে নতুন কাউকে নিয়ে শুরু করলে। কিন্তু সেটা তো পরকীয়া হতো না, সেটা সাধারন একটা প্রেম বা বৈবাহিক সম্পর্ক হয়ে যেতো। অনেকেই অপূর্ণ চাহিদা না মিটিয়েও ভঙ্গুর সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে পারিপার্শ্বিক চিন্তা করে পরকীয়ায় জড়ায় না তবে তারা যে আজীবন অসুখী থাকে এটা খুব সহজেই বলা যায়। মানুষের জীবনে মানসিক বা শারিরীক চাহিদা না মিটলে বা অসুখী জীবন কাটালে সে জীবনের মূল্যই বা কি? এইভাবে বিতৃষ্ণ, অসুখী জীবন পরিচালনাও সমর্থন যোগ্য নয় আবার পরকীয়াও ঠিক নয় তাই এই ঝামেলার সমাধানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।


পরকীয়ার সম্পর্কে সঙ্গী দুজনের মনেই ব্যাপকভাবে থাকে- না পাওয়ার তীব্র হতাশা। মনের মতো সঙ্গী পেয়ে না পাওয়াগুলো পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে এবং মনের মধ্যে অতি তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টি করে। তাদের চাওয়াগুলোর বাইরে দুজনের কেউই অন্যকিছুতে আগ্রহ দেখায় না, নতুন সঙ্গীর কাছ থেকে যতটুকু চাওয়া অপূরণীয় ছিলো সেটা সুদে-আসলে পূরন করে। পরকীয়া ভালোবাসা একে অপরের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, এই ভালোবাসার গভীরতা অন্যান্য প্রেমঘটিত সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে বেশী।  এখানে আবেগ ভালোবাসা যা কিছু তা সবই ঐ চাওয়াটুকু ঘিরেই, বাকী যা কিছু আছে তাতে কোন ভ্রূক্ষেপ থাকেনা। এক্ষেত্রে কোনরকম পিছুটান থাকেনা, সম্পর্কের দায়বদ্ধতা থাকেনা বলে শতভাগ আবেগ ভালোবাসায় সিক্ত হয় দুজনে, মিলিত হয়ে একেঅপরের চাহিদার শেষ বিন্দু পর্যন্ত মিটিয়ে নেয়। দুজনেই জানে তারা সমাজের চোখে অপরাধী, দুজনেই অবৈধ, দুজনেই জানে তারা কাউকে ঠকাচ্ছে, দুজনেই জানে তারা একেঅপরের কাছে কি চায়, কতটুকু চায়, কেন চায়, চাওয়ার সীমা কতোটুকু? তাই দুজনের মধ্যে বোঝাপড়ার ভিত্তি খুব শক্তভাবে গড়ে উঠে। তাছাড়া কোন পিছুটান ও দায়বদ্ধতা বা অন্যকোন বিষয়ে আগ্রহ থাকেনা বলে তারা শুধু একেঅপরের চাওয়া পূরনের লক্ষেই কাজ করে। দীর্ঘদিনের না পাওয়াগুলো সুদেআসলে উসুল করে একেঅপরের কাছ থেকে সমস্ত আবেগ ও ভালোবাসার মাধ্যমে। এই প্রেম কোন জাত, ধর্ম, স্থান, কাল, বয়স কিছুই মানেনা। দুজনে শুধু বাঁধনহারার মতো মিলনের মাধ্যমে একেঅপরের চাহিদা পরিপূর্ণভাবে মেটানোই এই প্রেমের একমাত্র লক্ষ বা উদ্দেশ্য। এই পরকীয়ায় সম্পর্কে একেঅপরের প্রতি আবেগ ভালোবাসার তীব্রতা এতোটাই শক্তিশালী হয় পৃথিবীর অন্য যেকোন সম্পর্কও পরকীয়ার সাথে তুলনাই আসতে পারবেনা। এই প্রেম এতোই শক্তিশালী যেকোন অত্যন্ত গভীর প্রেম বা বৈবাহিক সম্পর্ককে এক নিমিষেই ধংস করে দিতে পারে। পরকীয়া প্রেমে একবার জড়িয়ে গেলে খুব সহজে পরকীয়া থেকে মুক্তির উপায় নেই। তাই পরকীয়া প্রেমকে অন্যতম শক্তিশালী প্রেম বলে বিবেচনা করা হয়। যতো ধরনের প্রেম আছে তাতে প্লুটোনিক প্রেমের পরেই পরকীয়া প্রেম সবচেয়ে শক্তিশালী।


পরকীয়া প্রেমের প্রভাব

পরকীয়া প্রেম শুধুমাত্র দুই ব্যক্তির জীবনকেই প্রভাবিত করে না, বরং সম্পূর্ণ পরিবার এবং সমাজকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। আসুন বিস্তারিতভাবে দেখি পরকীয়া প্রেমের কী কী প্রভাব পড়তে পারেঃ


ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব

পরকীয়া প্রেমের মানসিক প্রভাবঃ পরকীয়া প্রেমের মানসিক প্রভাব অত্যন্ত গভীর হতে পারে। এটি প্রতারিত ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ক্ষতি, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, এবং অনিদ্রার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অপরাধবোধ, হতাশা, একাকিত্ব, লজ্জা, এবং রাগের মতো অনুভূতিগুলো উভয় পক্ষের মাঝেই দেখা দিতে পারে। পরকীয়ার কারণে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবিশ্বাস, সন্দেহ, এবং ট্রমা তৈরি হতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্পর্কের অবনতিঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব বাড়ে, পারস্পরিক বিশ্বাস হারিয়ে যায়।
সামাজিক বিতর্কঃ পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ভয়।
স্বাস্থ্য সমস্যাঃ চাপ, উদ্বেগ, অবসাদজনিত শারীরিক সমস্যা।


পারিবারিক জীবনে প্রভাব

বিবাহবিচ্ছেদঃ পরকীয়া প্রেমের কারণে বিবাহ ভাঙা বা বিবাহবিচ্ছেদ বর্তমানে একটি কমন এবং গুরুতর সমস্যা। এটি দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা ও আস্থার ভাঙন ঘটায়, যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তীব্র মানসিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতি প্রায়ই সম্পর্কের স্থায়ীত্বকে নষ্ট করে এবং বিবাহবিচ্ছেদের দিকে ঠেলে দেয়। প্রতারণার কারণে সম্পর্কের মধ্যে যে বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়, তা অনেক ক্ষেত্রেই আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না, ফলে বিবাহ ভেঙে যায়।
সন্তানদের মানসিক ক্ষতিঃ সন্তানরা পিতা-মাতার মধ্যকার অশান্তি, বিচ্ছেদ দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে।
আর্থিক সমস্যাঃ বিবাহবিচ্ছেদের ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
পরিবারের সম্মানহানিঃ সমাজে পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়া।


সামাজিক প্রভাব

সমাজে নেতিবাচক প্রভাবঃ পরকীয়া প্রেম সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হতে পারে।
বিশ্বাসের সংকটঃ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের সংকট তৈরি হতে পারে।


কর্মক্ষেত্রে প্রভাব

কর্মক্ষেত্রে সমস্যাঃ পরকীয়া প্রেমের কারণে কর্মক্ষেত্রে ঘনঘন অনুপস্থিত থাকা, কাজে মনোযোগ না দেওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কর্মজীবনের অবনতিঃ কর্মক্ষেত্রে সুনাম নষ্ট হওয়া, চাকরি হারানোর সম্ভাবনা।
পরকীয়া প্রেমের পরিণতি কখনোই সুখকর হয় না। পরকীয়া প্রেমে জড়িত মানুষ, পরিবার এবং সমাজের জন্য একটি বিশাল ক্ষতি।


পরকীয়া প্রেম কি অপরাধ?

আমাদের সমাজে পরকীয়াকে অত্যন্ত নিৎকৃষ্ট ও অতি মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। আমিও সম্পর্কটাকে তেমনটাই মনে করি। কারন হলো পরকীয়া সংসার ভাঙ্গার অন্যতম মূল কারন। পরকীয়ার সম্পর্কের কারনে নিজেদের মানসিক ও দৈহিক স্বার্থপূরণের লক্ষে বর্তমান সম্পর্কের সঙ্গীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়, সঙ্গীকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাকে ঠকানো হয়। পরকীয়া প্রেমের উপকারিতা নেই এতোটুকুও, প্রেমিক প্রেমিকার সাময়িক মানসিক শারীরিক শান্তি ছাড়া সমাজে, সংসারে এই সম্পর্ক কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনা। এই সম্পর্ক এক নিমিষেই ধংস করে দেয় সাজানো গোছানে সুন্দর ও সুখের সংসার। তাই আমাদের সমাজ সহ সমস্ত ধর্মেই পরকীয়াকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে মূল্যায়ণ করা হয়েছে।


পরকীয়ার প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কিছু কারণ

বিশ্বাসঘাতকতাঃ পরকীয়া বৈবাহিক বা দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের ভিত্তি, বিশ্বাস, ধারণাকে ভেঙে ফেলে।
পারিবারিক অস্থিরতাঃ এটি পারিবারিক কলহ, বিবাদ, বিচ্ছেদ, সন্তানদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বৈবাহিক সম্পর্কের সমস্যার বড় একটি কারন হলো এই পরকীয়া প্রেম, যার কারনে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা অহরহ।
সামাজিক অপমানঃ সমাজে পরকীয়াকারী ব্যক্তির প্রতি নেতিবাচক ধারণা বিদ্যমান, তাদের সম্মান ও গুরুত্ব নষ্ট হয়।
নৈতিকতাঃ অনেক ধর্ম ও নৈতিক নীতি পরকীয়া কে নিষিদ্ধ করে এবং পাপ বলে মনে করে।
মানসিক যন্ত্রণাঃ পরকীয়া মানসিক যন্ত্রণা, ঈর্ষা, রাগ, বিষণ্ণতা, আত্ম-সম্মানহীনতা বয়ে আনতে পারে।



পরকীয়া প্রেম থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়?

পরকীয়া প্রেম একটি জটিল সমস্যা যা অনেকের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এ থেকে বের হওয়া সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়। পরকীয়া প্রেমের শিকার হলে কী করা উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে নিচে কিছু কার্যকর পদ্ধতি উল্লেখ করা হলোঃ


নিজের ভুল স্বীকার করুনঃ পরকীয়া প্রেমের সমাধান করতে হলে এই পদক্ষেপটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। পরকীয়ায় জড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করুন এবং নিজের আচরণের দায়ভার নিন। নিজের প্রতি সৎ হওয়া এবং সমস্যার গভীরে যাওয়ার জন্য এই প্রথম পদক্ষেপটি গুরুত্বপূর্ণ। 
কারণ খুঁজে বের করুনঃ কেন এই সম্পর্ক গড়ে উঠলো, তার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। হয়তো আপনার মূল সম্পর্কে কোনো সমস্যা ছিল, হয়তো আপনি নিজেকে একাকী বোধ করছিলেন।
সম্পর্কটি ত্যাগ করুনঃ পরকীয়ার সম্পর্কটি সম্পূর্ণরূপে শেষ করুন। যার সঙ্গে আপনি পরকীয়ায় জড়িত, তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করুন এবং এই সম্পর্ক থেকে দূরে থাকুন।
মূল সম্পর্কের ওপর ফোকাস করুনঃ আপনার মূল সম্পর্কের দিকে মনোযোগ দিন। সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করুন।
সম্মিলিতভাবে থেরাপি বা কাউন্সেলিং নিনঃ দম্পতি থেরাপি বা কাউন্সেলিং থেকে পেশাদার সাহায্য নিন। একজন থেরাপিস্টের সহায়তায় আপনি ও আপনার সঙ্গী সম্পর্কের সমস্যা সমাধান করতে পারেন।
আত্মবিশ্লেষণ করুনঃ পরকীয়ার পেছনের কারণগুলো চিন্তা করুন। কী কারণে আপনি পরকীয়ায় জড়িয়েছেন, তা বোঝার চেষ্টা করুন এবং নিজেকে পর্যালোচনা করুন।
নিজেকে ক্ষমা করুনঃ নিজের প্রতি দয়া প্রদর্শন করুন এবং নিজেকে ক্ষমা করুন। ভুল থেকে শিক্ষা নিন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
নতুন শখ বা কার্যকলাপ শুরু করুনঃ নতুন কোনো শখ বা কার্যকলাপ শুরু করে মনোযোগ অন্যদিকে সরান। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন এবং ইতিবাচক কাজে মনোযোগ দিন।
সমর্থনের জন্য বন্ধু বা পরিবারের সাহায্য নিনঃ ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে আপনার সমস্যাগুলো শেয়ার করুন। তাদের সমর্থন আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তুলবে।
পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিনঃ নিজের এবং আপনার সঙ্গীর প্রতি প্রতিশ্রুতি দিন যে আপনি পরিবর্তিত হবেন এবং সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীল হবেন।
আত্মনিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করুনঃ নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। প্রলোভনের সামনে আত্মনিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করুন এবং শক্তিশালী থাকুন।


এই পদক্ষেপগুলো মেনে চললে পরকীয়া প্রেম থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে এবং নিজের জীবন এবং সম্পর্ককে পুনর্গঠিত করতে পারবেন।


উপসংহার

সবশেষে পরকীয়া অত্যন্ত শক্তিশালী সম্পর্ক এটা আপনাকে পারিবারিক গুরুত্ব কমিয়ে দিতে পারে, পরিবারের কাছে ছোট করে দিতে পারে, পরিবারের মাঝে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে, সমাজের চোখে অপরাধী বানিয়ে দিতে পারে। একটি পরকীয়া একটি সুখের সংসারকে শশ্মানে পরিণত করতে পারে যার ফল শুধু আপনি নয় আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ভোগ করবে। তাই পরকীয়া প্রেম থেকে দূরে থাকুন। পরিবারের প্রতি দায়ীত্ববোধ জাগ্রত করুন। যে সঙ্গীর কাছে নিজেকে অবহেলিত মনে করে পরকীয়ায় জড়াতে চান সেই সঙ্গীর সাথে খোলামেলা কথা বলুন। তার কাছে আপনার মূলত কি চাহিদা সেটা বুঝিয়ে বলুন। আর যার সঙ্গী পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেও সঙ্গীকে বোঝার চেষ্টা করুন, সঙ্গীর সাথে কথা বলুন। সঙ্গীর যেসমস্ত চাহিদা অল্প চেষ্টা করলেই মিটে যায় সেগুলো মেটান বাকীগুলোর ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যান। আপনার সঙ্গী পরকীয়ায় জড়ানোর পরোক্ষ কারন আপনি কারন সঙ্গীর প্রতি অবহেলা অনাদর বা দায়ীত্ববোধের অভাবের কারনে আপনার সঙ্গী অন্যকারো প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরকীয়ায় জড়ানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে বা জড়িয়েছে। তাই দুজনেই আন্তরিকতার সাথে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করুন প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাথে কাউন্সেলিং করুন। পরকীয়ায় জড়াবেন না, সঙ্গী না বুঝলে বা কোন চেষ্টাতে পরিস্থিতির কোন সমাধান না হলে বিচ্ছেদের চিন্তা করুন, বিচ্ছেদ পরকীয়া থেকে বেটার সমাধান। পরে না হয় আবার নতুন করে সূস্থ্য বৈধ একটা সম্পর্ক তৈরি করুন কিন্তু কোনমতেই পরকীয়া নয়।


Feriwala এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Post a Comment

0 Comments