Feriwala - Inspiring Heart and Lives

Header Ads Widget

কোকা-কোলাঃ পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়ের রহস্য

কোকা-কোলা

কোকা-কোলা একটি আইকনিক ব্র্যান্ড যা ১৮৮৬ সালে আটলান্টা, জর্জিয়াতে জন পেম্বারটন নামক একজন ফার্মাসিস্টের দ্বারা উদ্ভাবিত হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নন-অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়গুলির মধ্যে একটি এবং এর স্বতন্ত্র স্বাদ ও ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য বিখ্যাত। প্রাথমিকভাবে এটি একটি ওষুধ হিসেবে বাজারজাত করা হয়েছিল, যা মাথাব্যথা এবং অবসাদ দূর করার জন্য ব্যবহৃত হতো। কোকা-কোলার মূল রেসিপিতে কোকা পাতার নির্যাস এবং কোলা বাদামের ক্যাফেইন ছিল, যা থেকে এর নামটি এসেছে। পেম্বারটন তাঁর তৈরি পানীয়টির প্রচলন করেন সবার জন্য একটি তাজা এবং রিফ্রেশিং পানীয় হিসেবে, যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী ফেনোমেনায় পরিণত হয়েছে। কোকা-কোলার স্বাদ গোপন রাখা হয় এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক গোপনীয়তার একটি। কোম্পানিটি বিশ্বব্যাপী বোতলজাতকারীদের একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পানীয়টি বিক্রি করে। বর্তমানে কোকা-কোলা কোম্পানি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যার পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন ধরনের কার্বনেটেড পানীয় এবং সফ্ট ড্রিঙ্ক বা কোমল পানীয় বা নন-কার্বনেটেড পানীয় রয়েছে।

কোকা-কোলা (Coca-Cola)
কোকা-কোলা (Coca-Cola) by alleksana, pexels.com 


কোকা-কোলা শুধুমাত্র একটি জনপ্রিয় পানীয় নয়, এটি একটি সংস্কৃতি। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উৎসব, খেলাধুলা এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে কোকা-কোলা একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে, কোকা-কোলা তার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি অনেক সমালোচনারও সম্মুখীন হয়। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে চিনি থাকার কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা, পরিবেশ দূষণ এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব। কোকা-কোলা তার জনপ্রিয়তা বজায় রাখার জন্য নতুন নতুন পণ্য এবং বাজারজাতকরণ কৌশল নিয়ে কাজ করছে। কোকা-কোলার বিজ্ঞাপন কৌশলও অত্যন্ত সফল হয়েছে, বিশেষ করে তাদের "শেয়ার আ কোক" এবং "ওপেন হ্যাপিনেস" ক্যাম্পেইনগুলো, যা ভোক্তাদের সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। কোকা-কোলার লোগো, বোতলের নকশা এবং এর স্বাদ এতটাই পরিচিত যে, এটি শুধু পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় নয়, বরং একটি গ্লোবাল কালচারাল আইকন হিসেবে বিবেচিত হয়।


কোকা-কোলার ইতিহাস

কোকা-কোলা ইতিহাস একটি সামান্য ওষুধের দোকানের পানীয় থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিখ্যাত পানীয় ব্র্যান্ডে পরিণত হওয়ার গল্প। কোকা-কোলার ব্যবসা, কোকা-কোলা মার্কেটিং কৌশল, কোকা-কোলার সাফল্য, কোকা-কোলার বাজার প্রভাব, কোকা-কোলার বিস্তৃতি ইত্যাদির ইতিহাস অত্যন্ত বৈচিত্রময়। ২০ শতকের প্রথম দিকে কোকা-কোলা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করে এবং আজ এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রতীকী পানীয় ব্র্যান্ডগুলির একটি হিসেবে স্বীকৃত।


কোকা-কোলা উৎপত্তি

কোকা-কোলার ইতিহাস ১৮৮৬ সালে শুরু হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার রাজ্যের রাজধানী আটলান্টার ফার্মাসিস্ট, ডক্টর জন স্টিথ পেমবার্টনের কৌতূহল বশতঃ একটি স্বতন্ত্র স্বাদযুক্ত কোমল পানীয় তৈরি করেছিলেন। তিনি মূলত এটি তৈরি করেছিলেন একটি ওষুধ হিসেবে, যা মাথাব্যথা এবং অবসাদ দূর করার জন্য ব্যবহৃত হতো। পানীয়টির মূল উপাদান ছিল কোকা পাতার নির্যাস এবং কোলা বাদাম থেকে প্রাপ্ত ক্যাফেইন। পেম্বারটন তাঁর পানীয়টির নাম দেন "পেম্বারটন’স ফ্রেঞ্চ ওয়াইন কোকা," কিন্তু ১৮৮৫ সালে আটলান্টার মদ্যপানবিরোধী আইন কার্যকর হওয়ার পর, তিনি এটি একটি অ্যালকোহলবিহীন সংস্করণে রূপান্তর করেন, যা পরবর্তীতে "কোকা-কোলা" নামে পরিচিত হয়। ডক্টর জন স্টিথ পেমবার্টন একটি স্বাদযুক্ত সিরাপ তৈরি করেন এবং এটিকে কার্বনেটেড জলের সাথে মিশ্রিত করেন। এই পানীয়কে তার আশেপাশের ফার্মেসিতে নিয়ে যান, সেখানে এটির নমুনা টেষ্ট করান। জানা যায় যারা নমুনা টেষ্ট করেছিলো তাদের দ্বারা এটি অতি চমৎকার এক পানীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছিল এবং দাবি করা হয়েছিল যে এটি গ্যাস, বমি বমি ভাব এবং মাথাব্যথা সহ অসুস্থতার প্রতিকার হবে। পরবর্তিতে ডক্টর জন এস. পেম্বারটন এই পানীয়কে একটি পেটেন্ট ওষুধ হিসাবে বিক্রি করেন। এই নতুন পানীয়টির প্রথম বিক্রয় হয় আটলান্টার জ্যাকবস ফার্মেসিতে, যেখানে এটি সিক্রেট ফর্মুলা এবং মনোরম স্বাদের জন্য দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ডক্টর জন স্টিথ পেমবার্টনের অংশীদার এবং বুককিপার ফ্র্যাঙ্ক এম. রবিনসন, পানীয়টিকে “কোকা-কোলা” নামকরণ করেন এবং আজও ব্যবহৃত ট্রেডমার্কযুক্ত স্বতন্ত্র স্ক্রিপ্ট ডিজাইন করেন।


কোকা-কোলার সম্প্রসারণ

কোকা-কোলার এই ছোট্ট উদ্ভাবন দ্রুতই একটি বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। কোকা-কোলার ইতিহাসে প্রথম বিপণন প্রচেষ্টা কুপনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছিল যা বিনামূল্যে পানীয়ের নমুনা প্রচার করে। ১৮৮৭ সালে একটি উদ্ভাবনী কৌশল হিসাবে বিবেচিত, কুপনিং এর পরে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন এবং অংশগ্রহণকারী ফার্মেসিগুলিতে কোকা-কোলা স্ক্রিপ্ট সহ প্রচারমূলক আইটেম বিতরণ করা হয়েছিল। ১৮৮৮ সালে জন পেম্বারটন মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে তাঁর কোম্পানির অধিকাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেন। এরপরে অ্যাসা গ্রিগস ক্যান্ডলার (Asa G. Candler) নামের একজন ব্যবসায়ী কোকা-কোলার সম্পূর্ণ মালিকানা অর্জন করেন এবং ১৮৯২ সালে কোকা-কোলা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ক্যান্ডলারের বুদ্ধিমত্তা এবং ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে কোকা-কোলা দ্রুতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয় হয়ে ওঠে। ক্যান্ডলার কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনের জন্য উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেন, এবং কোম্পানির লোগো, বোতলের নকশা, এবং স্বতন্ত্র ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে কোকা-কোলাকে একটি আইকনিক ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করেন।


কোকা-কোলা বোতলজাত করা

কোকা-কোলার বিপণন এবং প্রচারের ফলে চাহিদা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পায়। ১৮৯৪ সালে, কোকা-কোলার ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং পানীয়কে বহনযোগ্য করার সুবিধার্থে বোতলজাত যন্ত্র স্থাপন করেন। ১৮৯৫ সালের মধ্যে, অ্যাসা গ্রিগস ক্যান্ডলার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলা করার জন্য ডালাস, শিকাগো এবং লস এঞ্জেলেস সহ একাধিক শহরে সিরাপ প্ল্যান্ট তৈরি করেছিলেন। যদিও অ্যাসা গ্রিগস ক্যান্ডলার একজন বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী ছিলেন, তিনি বুঝতে পারেননি যে কোকা-কোলার ভবিষ্যতে বহনযোগ্য বোতলে থাকবে। বড় আকারের বোতলজাতকরণ সম্ভব হয়েছিল মাত্র পাঁচ বছর পরে। ১৮৯৯ সালে, টেনেসির চ্যাটানুগায় তিনজন উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী কোকা-কোলা বোতল বিক্রি করার একচেটিয়া অধিকার লাভ করেন। তিনজন উদ্যোক্তা অ্যাসা গ্রিগস ক্যান্ডলারের কাছ থেকে বোতলজাত করার অধিকার মাত্র ১ ডলারে কিনেছিলেন। বেঞ্জামিন থমাস, জোসেফ হোয়াইটহেড এবং জন লুপটন কোকা-কোলা বিশ্বব্যাপী বোতলজাতকরণ ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন। বোতল আকারে পানীয়টি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকলে, নকল কোকা-কোলা পানীয় উৎপাদিত হতে থাকে। এর ফলে দ্য কোকা-কোলা কোম্পানি তার পণ্যকে প্রকৃত হিসেবে বিজ্ঞাপন দেয় এবং প্রচারণা চালায়। ১৯৬১ সালে প্রথম স্বাক্ষরযুক্ত কনট্যুর-আকৃতির বোতল তৈরি করা শুরু হয়েছিল। এই স্বাক্ষরযুক্ত বোতলের নকশাটি কোকা-কোলা কোম্পানিকে তার পণ্যকে অনুকরণ থেকে আলাদা করে।


কোকা-কোলা বিশ্বব্যাপী বিস্তার

১৯১৯ সালে কোকা-কোলা কোম্পানিটি নতুন মালিকানায় চলে যায়। ১৯১৯ সালে, কোকা-কোলা কোম্পানি আর্নেস্ট উডরাফ নামে একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে একদল বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি হয়েছিল। তখন থেকে এর শেয়ারগুলি পাবলিকলি ট্রেডেড হতে শুরু করে। ১৯২৩ সালে, তার ছেলে রবার্ট ডব্লিউ. উডরাফ কোম্পানির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি উডরাফ কোম্পানির প্রসার ঘটান এবং কোকা-কোলাকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে নিয়ে আসেন। তখন থেকে কোকা-কোলা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করে এবং দ্রুতই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। কোকা-কোলা বোতলগুলিকে "সিক্স-প্যাক" হিসাবে বিতরণ করা শুরু করে, গ্রাহকদের তাদের বাড়ির জন্য পানীয় কিনতে উৎসাহিত করে। ১৯২৮ সালে, কোকা-কোলা অলিম্পিক গেমসের স্পনসর হয় তাতে কোম্পানিটিকে আরও বেশি আন্তর্জাতিক এক্সপোজার দিয়েছিল এবং একটি কোমল পানীয়ের একটি ঐতিহ্য শুরু করেছিল যা আজও অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, কোকা-কোলা আমেরিকান সৈন্যদের মধ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, এবং এটি আমেরিকান সংস্কৃতির একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে। বিশ্বযুদ্ধের পর কোকা-কোলা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎপাদন শুরু করে এবং একে একে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে পৌঁছে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোকা-কোলার আন্তর্জাতিক গ্রাহকরা পানীয় কেনার সময় আরও বিকল্পের জন্য অনুরোধ করেছিল। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোকা-কোলা একটি ৬.৫-আউন্স গ্লাস কনট্যুর বোতলে বিক্রি হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে এটির আকার পরিবর্তিত হয়ে বড় আকারের এবং অবশেষে ১৯৬০ সালে ধাতব ক্যানে উৎপাদন শুরু করে। ১৯৭৭ সাল নাগাদ, কোম্পানিটি তার প্রথম প্লাস্টিকের ২-লিটার বোতল উৎপাদন শুরু করে।


কোকা-কোলা বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন সর্বদা কোকা-কোলা কোম্পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটাই হলো কোকা-কোলা মার্কেটিং কৌশল। বছরের পর বছর ধরে, জিঙ্গেল এবং বিখ্যাত স্লোগানগুলি একটি মজাদার এবং সতেজ পানীয় হিসাবে কোকা-কোলার একটি তার নিজস্ব অবস্থান ও স্টাইল তৈরি করেছে। বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের দিক থেকে কোকা-কোলা প্রথম সারিতেই থাকবে। কোকা-কোলার বিজ্ঞাপন কৌশল বড় সফল উদাহরণ, বিশেষ করে তাদের "শেয়ার আ কোক" এবং "ওপেন হ্যাপিনেস" ক্যাম্পেইনগুলো কোকা-কোলার সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন যা ভোক্তাদের সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯২০ সাল প্রথমবার কোকা-কোলার বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়, সেই থেকে আজও কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত হচ্ছে। আজ, কোকা-কোলা শুধুমাত্র একটি পানীয় নয়, বরং একটি গ্লোবাল কালচারাল আইকন হিসেবে পরিচিত, যা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কোনায় পাওয়া যায়।


ডায়েট কোক এবং নতুন কোকের আত্মপ্রকাশ

১৯৮১ সালে, রবার্তো সি. গোইজুয়েটা কোকা-কোলা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং সিইও হন।  গোইজুয়েটা একটি নতুন পাবলিক কোম্পানী, Coca-Cola Enterprises Inc-এ বিভিন্ন মার্কিন কোকা-কোলা বোতলজাত ক্রিয়াকলাপ সংগঠিত করেছে। গোইজুয়েটা উদ্ভাবনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং তার নতুন নেতৃত্বে, কোম্পানী ডায়েট কোক (Diet Coke) চালু করেছে, যা কোকা-কোলা (Coca-Cola) ট্রেডমার্কের প্রথম এক্সটেনশন। ডায়েট কোক খুব জনপ্রিয় হয়েছিল এবং কয়েক বছরের মধ্যে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কম-ক্যালোরি কোমল পানীয় হয়ে ওঠে। ডায়েট কোকের সাফল্যের পর, গোইজুয়েটা একটি নতুন স্বাদ তৈরি করার জন্য কোকা-কোলাকে সংস্কার করার একটি উদ্যোগ নেয়। ১৯৮৫ সালে, প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে গোপন সূত্রের প্রথম পরিবর্তন হিসাবে নিউ কোক চালু করা হয়েছিল।  নতুন কোক স্বাদ পরীক্ষার ট্রায়ালে সফল হয়েছিল, কিন্তু জনসাধারণ দ্রুত কোম্পানীকে কোকা-কোলা ক্লাসিক হিসাবে বাজারে ফিরিয়ে আনার মূল সূত্রে ফিরে আসার দাবি জানায়। নতুন কোক শেষ পর্যন্ত ২০০২ সালে অস্বাভাবিক বিক্রির পরে বন্ধ হয়ে যায়।



কোকা-কোলা বয়কট

কোকা-কোলা বয়কটের ঘটনা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে সংঘটিত হয়েছে এবং এটি একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে কোকা-কোলার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। কোকা-কোলা বিতর্ক ও বয়কটের পেছনের কারণগুলো প্রায়শই সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বা পরিবেশগত উদ্বেগের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা কখনো কখনো আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে।


ভারতে বয়কট

১৯৭৭ সালে ভারতের কোকা-কোলা বয়কট একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সেই সময় ভারতীয় সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলির জন্য একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করেছিল, যার অধীনে এসব কোম্পানিকে তাদের মালিকানার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতীয় নাগরিকদের হাতে ছেড়ে দিতে হতো। কোকা-কোলা এই শর্ত মানতে অস্বীকার করে এবং এর ফলে তারা ভারত থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। প্রায় ষোল বছর পরে, ১৯৯৩ সালে, কোকা-কোলা আবার ভারতীয় বাজারে ফিরে আসে, কিন্তু এই বয়কটের ঘটনা কোকা-কোলার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষতির কারণ হয়েছিল এবং এটি কোম্পানির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।


কলম্বিয়ায় বয়কট

আরেকটি বড় ধরনের বয়কট ঘটে ২০০৩ সালে, যা "কিলার কোক" নামে পরিচিত। এই আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল কলম্বিয়া, যেখানে কোকা-কোলার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল যে তারা শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের ওপর সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেছে। এই অভিযোগের ফলে, কোকা-কোলা একটি বড় আকারের আন্তর্জাতিক বয়কটের সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যোগ দেয়। আন্দোলনকারীরা কোকা-কোলার পণ্য ব্যবহার বন্ধ করে দেয় এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোকা-কোলা নিষিদ্ধ করে। যদিও কোকা-কোলা কোম্পানি সব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং তাদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের অবৈধ কার্যকলাপের অংশগ্রহণ অস্বীকার করে, তবুও এই বয়কট কোকা-কোলার ইমেজ এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।


আরব লীগ বয়কট

১৯৬৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত আরব লীগ কোকা-কোলাকে ইসরাইলি দখলদারিত্বকে সমর্থন করার কারণে বয়কট করেছিল।


পরিবেশগত এবং সামাজিক বিষয় নিয়ে কোকা-কোলার বিরুদ্ধে আরো অনেক বয়কটের ঘটনা বিভিন্ন দেশে ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, কোকা-কোলার বিরুদ্ধে পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগ উঠেছে, যেমন অতিরিক্ত পানির ব্যবহার এবং প্লাস্টিক দূষণের কারণে। বিশেষ করে ভারত, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ এবং মেক্সিকোতে, স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো কোকা-কোলার কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তারা স্থানীয় জলাশয়গুলো শুষ্ক করে ফেলছে এবং পরিবেশগত ক্ষতি সাধন করছে। এসব অভিযোগের ফলে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কোকা-কোলা বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকবারই কোকা-কোলা বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছিলো। এছাড়াও ফিলিস্তিন সমর্থকরা ইসরাইলের সাথে কোকা-কোলার সম্পর্কের কারণে কোম্পানিকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। এই বয়কটের ঘটনাগুলো কোকা-কোলার জন্য একটি শিক্ষা হিসেবে কাজ করেছে, এবং কোম্পানিটি প্রায়শই এসব সংকটের জবাব দিতে তাদের নীতি এবং কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছে। এসব বয়কট কোকা-কোলার গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে কার্যক্রমের ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে এবং কোম্পানির ভাবমূর্তির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে। তবুও, এতোকিছুর পরেও কোকা-কোলার জনপ্রিয়তা কমেনি বরং বেড়েছে।


কোকা-কোলা কীভাবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হলো?

অনেক বাঁধা-বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ থাকা স্বত্ত্বেও কোকা-কোলা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং, উদ্ভাবনী বিজ্ঞাপন, এবং বিস্তৃত বণ্টন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কোকা-কোলা বিশ্বজয় করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোকা-কোলা তার স্বতন্ত্র লোগো, বোতলের নকশা, এবং সান্তা ক্লজের মতো ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে একটি গ্লোবাল আইকন হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান সৈন্যদের কাছে কোকা-কোলা সরবরাহ করা হয়, যা এর আন্তর্জাতিক পরিচিতি বাড়াতে সহায়ক হয়। যুদ্ধের পর, কোম্পানি বিভিন্ন দেশে তাদের উৎপাদন ও বণ্টন স্থাপন করে, ফলে এটি প্রায় প্রতিটি দেশে পৌঁছে যায়। কোম্পানিটি বিভিন্ন দেশে স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য ও বিজ্ঞাপন কৌশল পরিবর্তন করেছে, যা তাদের বাজার অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। এছাড়া, কোকা-কোলার নিয়মিতভাবে বড় ইভেন্ট এবং স্পোর্টস টুর্নামেন্ট স্পনসরশিপও বিশ্বব্যাপী এর জনপ্রিয়তায় ভূমিকা রেখেছে। সামাজিক সংযোগ এবং ভোক্তাদের অনুভূতির সাথে সংযুক্ত থাকার মাধ্যমে কোকা-কোলা একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


কোকা-কোলার গোপন ফর্মুলা

কোকা-কোলার ফর্মুলা হলো পৃথিবীর অন্যতম গোপন ফর্মুলা। কোকা-কোলার রহস্য একটি বিখ্যাত রহস্য যা বছরের পর বছর ধরে আলোচনা ও কৌতূহলের বিষয় হয়ে আছে। ডক্টর জন এস. পেম্বারটন ১৮৮৬ সালে কোকা-কোলার ফর্মুলাটি তৈরি করেন এবং পরবর্তিতে আশা জি. ক্যান্ডলার পেমবার্টন এর কাছ থেকে ফর্মুলা ও কোকা-কোলার সম্পূর্ণ স্বত্ব কিনে নেন। কোকা-কোলা অথরিটি এর জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে যুগ যুগ ধরে ফর্মুলা টি গোপন রেখেছেন। কোকা-কোলার গোপন ফর্মুলা এতটাই সুরক্ষিত যে এটি সম্পর্কে কেবলমাত্র কয়েকজন ব্যক্তি জানেন। এটি কোম্পানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ এবং এটিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কোকা-কোলা বহু ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বলা হয়ে থাকে, এই ফর্মুলাটি একটি নিরাপদ ভল্টে রাখা হয়েছে, এবং খুব কমসংখ্যক ব্যক্তিই এর আসল উপাদানগুলো সম্পর্কে অবগত। ১৯২৫ সাল থেকে ফর্মুলাটি আটলান্টার সানট্রাস্ট ব্যাংকের একটি নিরাপদ ভল্টে রাখা ছিল। ২০১১ সালে, কোকা-কোলা এই ফর্মুলাটি তাদের নিজস্ব মিউজিয়াম, "দ্য ওয়ার্ল্ড অফ কোকা-কোলা,"-তে স্থানান্তরিত করে, যা আটলান্টায় অবস্থিত। যদিও এটি দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শিত হয় না, তবে এটি মিউজিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে থেকে গেছে। কোকা-কোলারটি যেখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে, সেখানে অতি বিশ্বস্ত লোক ছাড়া প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ এবং ফর্মুলাটি ২৪ ঘণ্টা কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সংরক্ষিত রয়েছে। এভাবেই দুই শতকের বেশি সময় ধরে কর্তৃপক্ষ এই ফর্মুলা গোপন রেখেছে।


কোকা-কোলার ফর্মুলা ফাঁস হওয়ার গুজব

কোকা-কোলার গোপন ফর্মুলা ফাঁস হওয়ার গুজব দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে, যা এই ব্র্যান্ডের রহস্যময় ভাবমূর্তি এবং এর প্রতি মানুষের কৌতূহলকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফর্মুলাটি যে গোপন রাখা হয়েছে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে, এবং সময়ে সময়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে এটি ফাঁস হওয়ার দাবিও উঠেছে। একটি উল্লেখযোগ্য গুজবের ঘটনা ঘটে ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী, যখন আমেরিকান ওয়েবসাইট www.thisamericanlife.org (দিস আমেরিকান লাইফ) দাবি করে যে, তারা কোকা-কোলার গোপন রেসিপি বা ফর্মুলা ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার রহস্য উদঘাটন করেছে। তারা কোকা-কোলার গোপন ফর্মুলার একটি পুরনো কপি খুঁজে পেয়েছে। এই ফর্মুলার কপিটি ছিল ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী Atlanta Journal and Constitution Newspaper নামের একটি  সংবাদপত্রের আর্টিকেলে ছাপা হওয়া একটি রেসিপি, যা কোকা-কোলার প্রথম রেসিপির একটি অনুলিপি বলে দাবি করা হয়। এতে কোকা-কোলার মূল উপাদানগুলোর সঠিক পরিমাণসহ তালিকা দেওয়া হয়েছিল, যা কোম্পানির গোপন ফ্লেভারিং এজেন্ট "Merchandise 7X"-কেও অন্তর্ভুক্ত করেছিল। দিস আমেরিকান লাইফ ওয়েবসাইটটি ধারাবাহিকভাবে কোকা-কোলার গোপন রহস্য সংবাদপত্রের আর্টিকেলে ছাপা হওয়া কোকা-কোলা রেসিপির ছবি সহ নিবন্ধ আকারে প্রকাশিত করতে থাকে। ছবিতে মেলে ধরা একটি বইয়ে ওই ফর্মুলা লেখা ছিল যা পেমবারটনের হুবহু বলে দাবি করা হয়।

* দিস আমেরিকান লাইফ নামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন ক্লিক করুন।


কোকা-কোলা কোম্পানি এই দাবিগুলোকে অস্বীকার করে এবং জানায় যে, তাদের আসল ফর্মুলা কখনোই ফাঁস হয়নি। তারা আরও জানায় যে, ফর্মুলার সঠিক উপাদান এবং পরিমাণ এমন কিছু যা শুধুমাত্র কয়েকজন মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং এটি একটি সুরক্ষিত ভল্টে রাখা হয়। কোম্পানির এই প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও, মিডিয়া এবং জনমনে এই গুজবটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং ফর্মুলা সম্পর্কে নতুন করে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়। এর আগেও কোকা-কোলার ফর্মুলা ফাঁস হওয়ার দাবির ঘটনা ঘটেছে, তবে প্রতিবারই কোকা-কোলা কোম্পানি এটি অস্বীকার করেছে। ফর্মুলার গোপনীয়তা এবং এটি নিয়ে ছড়ানো গুজবগুলো কোকা-কোলার মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং ইমেজকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং এর প্রতীকী মর্যাদাকে বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। এই ধরনের গুজব এবং মিথ কোকা-কোলার গোপন ফর্মুলার চারপাশে তৈরি হওয়া রহস্যময় ভাবমূর্তিকে আরও গভীর করেছে এবং এটি বিশ্বব্যাপী ভোক্তাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।


কোকা-কোলার ফর্মুলা

www.thisamericanlife.org ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোকা-কোলা রেসিপির উপাদানগুলো নিম্নরূপঃ

  • ফ্লুইড এক্ট্রাক্ট কোকা – ৪ আউন্স (ফ্লুইড এক্ট্রাক্ট কোকো)
  • সাইট্রিক অ্যাসিড – ৩ আউন্স
  • ক্যাফেইন – ১০ আউন্স (সাইট্রেট ক্যাফেইন)
  • চিনি – ৩০ (একক উল্লেখ নেই)
  • জল – ২.৫ গ্যালন
  • লেবুর রস – ১ কোয়ার্ট (ইউকে ১.১৩৬ লিটার, ইউএস ০.৯৪৬ লিটার)
  • ভ্যানিলা – ১ আউন্স
  • কারামেল (রংয়ের ফ্লেভার) – ১.৫ আউন্স বা এরচেয়ে বেশি
  • অ্যালকোহল – ১ কোয়ার্ট (ইউকে ১.১৩৬ লিটার, ইউএস ০.৯৪৬ লিটার)
  • কমলার তেল – ৮০ ফোঁটা
  • লেবুর তেল – ১২০ ফোঁটা
  • জায়ফলের তেল – ৪০ ফোঁটা
  • ধনে পাতার রস – ২০ ফোঁটা
  • নেরুলি তেল (তিক্ত কমলা গাছের ফুল থেকে উৎপন্ন হয়) – ৪০ ফোঁটা
  • দারুচিনির তেল – ৪০ ফোঁটা


কোকা-কোলার পুষ্টিগুণ ও কোকা-কোলা পান করার উপকারিতা কি?

কোকা-কোলা স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। এর পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- কোকা-কোলায় প্রতি ৩৩০ মি.লি. ক্যানে প্রায় ৩৯ গ্রাম চিনি এবং ১৪০ ক্যালোরি থাকে। এতে কোন ভিটামিন, মিনারেল, বা প্রোটিন নেই, কিন্তু এতে ক্যাফেইন রয়েছে, যা জাগ্রত রাখতে সাহায্য করে। পুষ্টিগুণের দিক থেকে, এটি প্রধানত চিনি এবং ক্যালোরির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়, যা অতিরিক্ত সেবনে স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, এবং দাঁতের সমস্যা বাড়ার ঝুঁকি থাকে। কোকা-কোলার ক্যাফেইন উপাদান অতিরিক্ত সেবনে অনিদ্রা এবং উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তাই, নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে এবং সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে এটি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।


এতো জনপ্রিয়তা স্বত্ত্বেও কোকা-কোলা কোম্পানিকে আদালতের কাঠগড়ায়ও দাঁড়াতে হয়েছিল। ভারতের ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যাণ্ড এনভায়রনমেন্ট’ (CSE) কোকা-কোলার ১২টি পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে মানবদেহ ও উদ্ভিদ দেহের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশক, পোকামাকড় ধ্বংসকারী রসায়নিক দ্রব্যাদির মিশ্রণ এমন মাত্রায় রয়েছে যার কারণে পাকস্থলির বিভিন্ন অসুখ, দেহে খনিজ পদার্থের ঘনত্ব কমানো, স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা, জন্মকালীন বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। কোক-বটলিং প্ল্যান্টের বর্জ্যেও পাওয়া পাওয়া গেছে বিষাক্ত ক্যাডমিয়াম ও সিসা। ক্যাডমিয়াম বিকল করতে পারে কিডনি ও সিসার প্রভাবে শিশুদের মধ্যে দেখা দিতে পারে মানসিক জড়তা ও ভয়াবহ রক্তাল্পতা। তাছাড়াও কোকা-কোলায় যথেষ্ট পরিমান সুগার ব্যবহৃত হয়, এই সুগারের কারনে দাঁতে সমস্যা দেখা দিতে পারে, শরীরের ওজন বাড়ে, হাড়ের জয়েন্টে সমস্যার সৃষ্টি করে, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে যা হৃদরোগের ঝুকি বাড়িয়ে তোলে, ত্বকের লাবণ্যতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে ক্যাফেইন ও ফসফরিক অ্যাসিড পুষ্টি উপাদান শরীর থেকে বের করে দেয়, স্বল্পমাত্রার মাদক হলেও ক্যাফেইন শরীরে আসক্তির সৃষ্টি করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। পুষ্টিগত দিক বিবেচনা করলে কোকা-কোলা এবং পেপসির মধ্যে পার্থক্য নেই। কোকা-কোলা বা কোকা-কোলা প্রতিযোগী পেপসিসহ অন্যান্য কোন কোমল পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। আসলে তৃষ্ণা মেটানো বা মনের তৃপ্তি ছাড়া কোকা-কোলা বা এ জাতীয় সফট ড্রিংকস আমাদের কোন উপকারই করেনা।


কোকা-কোলা সম্পর্কে বিষ্ময়কর তথ্য

  • পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ কোকা-কোলার লোগোটি চেনেন।
  • বিশ্বে পণ্য হিসেবে একমাত্র কোকা-কোলাই দীর্ঘদিন নির্দিষ্ট দামে বিক্রয় করা হয়েছে। ১৮৮৬ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত, সত্তর বছরের বেশী সময় ধরে  কোকা-কোলার দাম পাঁচ সেন্টে স্থির ছিল।
  • কোক ছাড়াও কোকা-কোলা আরো প্রায় ৩৫০০ রকমের ড্রিংকস বা বেভারেজ তৈরি করে। একজন মানুষ প্রতিদিন অন্তত ৩টি করে ড্রিংকস বা বেভারেজ পান করলে সবরকমের আইটেমের স্বাদ নিতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লাগবে।
  • আজ পর্যন্ত উৎপাদিত কোকা-কোলার সবকটি বোতল যদি পাশাপাশি এক প্রান্তের সাথে আর এক প্রান্তে চেইনের মত করে রাখা হলে অন্তত ১০০০ বার চাঁদে আসা-যাওয়ার দূরত্বের সমান লম্বা চেইন হবে এবং পৃথিবীকে ৪০০০ বারের বেশি রাউন্ড দেয়া যাবে।
  • কোকা-কোলার বোতলগুলো পৃথিবীর সমস্ত মানুষের মাঝে বিতরন করা বোতলের পরিমাণ হবে হলে জনপ্রতি ১০০০ টির বেশি
  • পৃথিবীতে সেকেন্ডে ৮০০০ গ্লাসেরও বেশি কোকা-কোলা পান করা হয়।
  • প্রতিদিন কোকা-কোলা পণ্যের ১.৭ বিলিয়ন সার্ভিং পরিবেশন করা হয়
  • প্রায় ১৩৮ বছর ধরে স্বমহিমায় তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।
  • আটলান্টা, লাস ভেগাসে শুধু কোকা-কোলার জন্যই একটি করে মিউজিয়াম রয়েছে।
  • মহাকাশে স্পেস স্টেশনেও মেলে কোকের ভেন্ডিং মেশিন।

উপসংহার

কোকা-কোলার সাফল্যের পেছনে রয়েছে এর অনন্য স্বাদ, শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং, এবং উদ্ভাবনী মার্কেটিং কৌশল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোকা-কোলা শুধুমাত্র একটি পানীয় নয়, বরং একটি সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে, যা বিভিন্ন প্রজন্মের মানুষের জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে। কোকা-কোলার গোপন ফর্মুলা, সঠিকভাবে নির্বাচিত বিজ্ঞাপন, এবং বৈশ্বিক প্রসারণ কৌশল এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কোকা-কোলার এই রহস্যময় আকর্ষণ ও স্থায়ী জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী ভোক্তাদের মন ও মননে একটি বিশেষ স্থান তৈরি করেছে, যা অন্যান্য পানীয় ব্র্যান্ডের জন্য অনুসরণযোগ্য উদাহরণ হিসেবে রয়ে গেছে।


সচরাচর-জিজ্ঞাস্য

১। প্রশ্নঃ কোকা-কোলা কোন দেশের পণ্য? কোকা-কোলা কোম্পানির মালিক কে?

উত্তরঃ কোকা-কোলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পণ্য। কোকা-কোলার সদরদপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার এটলান্টায়, অবস্থিত। এটির প্রধান সদরদপ্তর ঠিকানা: The Coca-Cola Company, One Coca-Cola Plaza, Atlanta, Georgia 30313, USA. এই ঠিকানায় কোকা-কোলার প্রধান অফিস অবস্থিত। এটি ১৮৮৬ সালে জর্জিয়ার আটলান্টা থেকে একজন ফার্মাসিস্ট জন স্টিথ পেমবার্টন আবিষ্কার করেছিলেন। কোকা-কোলা দ্য কোকা-কোলা কোম্পানির মালিকানাধীন, যেটি একটি সর্বজনীনভাবে ব্যবসা করা বহুজাতিক কর্পোরেশন। Coca-Cola-এর মালিকানা অসংখ্য শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, কারণ এটি একটি সর্বজনীনভাবে অনুষ্ঠিত কোম্পানি যা নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে (NYSE) এ "KO" এর অধীনে তালিকাভুক্ত। বর্তমানে কোম্পানিটির একক স্বতন্ত্র মালিক নেই, বরং মালিকানা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বলা যায় কোম্পানির স্টকের শেয়ার হোল্ডাররাই মালিক।


২। প্রশ্নঃ কোকা-কোলা নাকি কোক?

উত্তরঃ "কোক" হলো কোকা-কোলা ব্র্যান্ডের একটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত নাম বা সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি কোকা-কোলা কোমল পানীয়ের সাথে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এটি কোকা-কোলার একটি জনপ্রিয় ডাকনাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোকা-কোলা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে "কোক" নামে পরিচিত এবং এটি সেই ব্র্যান্ডের স্বাদ এবং পরিচয়ের সঙ্গে সমার্থক হয়ে উঠেছে। "কোক" শব্দটি কখনো কখনো কোকা-কোলার প্রতিদ্বন্দ্বী কোমল পানীয়গুলির সাথেও ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে যখন কোনো বিশেষ ব্র্যান্ড উল্লেখ না করে শুধুমাত্র কার্বনেটেড সফট ড্রিঙ্ক বোঝানো হয়। তবে, কোকা-কোলা নিজেই এই নামের মালিকানা ধরে রেখেছে এবং এটি তাদের ব্র্যান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


৩। প্রশ্নঃ কোকা-কোলা কি ইসরাইলের পণ্য?

উত্তরঃ না, কোকা-কোলা ইসরাইলের পণ্য নয়। এর স্থাপত্য জন স্টিথ পেম্বার্টন ছিলেন আমেরিকান নাগরিক, যিনি ১৮৮৬ সালে এটি আবিষ্কার করেন। তারপরে এই পণ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।


৪। প্রশ্নঃ কোকা-কোলা বাংলাদেশে কখন আসে?

উত্তরঃ কোকা-কোলা বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় এবং সুপ্রতিষ্ঠিত কোমল পানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করার পর, কোকা-কোলা বাংলাদেশের বাজারে দ্রুত স্থান করে নিয়েছে। স্বাধীনতার পর, কোম্পানিটি তার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদন এবং বণ্টন কেন্দ্র স্থাপন করে। কোকা-কোলা তাদের পণ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ভোক্তাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে এবং বিভিন্ন সামাজিক ও স্পোর্টস ইভেন্টে স্পনসরশিপের মাধ্যমে আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আজ, কোকা-কোলা বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কোমল পানীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।


৫। প্রশ্নঃ কোকা-কোলা কি দিয়ে তৈরি হয়?

উত্তরঃ কোকা-কোলা রেসিপি বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণে তৈরি। যদিও সঠিক সূত্রটি একটি ঘনিষ্ঠভাবে সুরক্ষিত বাণিজ্য গোপনীয়তা যা "মার্চেন্ডাইজ 7X" নামে পরিচিত, সাধারণ উপাদানগুলি নিম্নরূপঃ কার্বনেটেড জল: হিসহিস শব্দ প্রদান করে; চিনি (বা উচ্চ-ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ): মিষ্টি যোগ করে; ক্যাফেইন: কফি বিন এবং চা পাতায় প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া একটি উদ্দীপক; ফসফরিক অ্যাসিড: একটি আম্লিক গন্ধ প্রদান করে এবং পানীয় সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে; প্রাকৃতিক স্বাদ: মশলা, ফল এবং ভেষজ মিশ্রণ থেকে উদ্ভূত।; ক্যারামেল রঙ: বৈশিষ্ট্যযুক্ত বাদামী রঙ যোগ করে।; সাইট্রিক অ্যাসিড: আম্লিক স্বাদ বাড়ায়। এই উপাদানগুলি একত্রিত হয়ে কোকা-কোলার স্বতন্ত্র স্বাদ তৈরি করে।


Feriwala এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Post a Comment

0 Comments