Feriwala - Inspiring Heart and Lives

Header Ads Widget

রিভার্স সাইকোলজি কি? মানুষকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

রিভার্স সাইকোলজি

রিভার্স সাইকোলজি (Reverse Psychology) হলো একটি মনস্তাত্ত্বিক কৌশল যেখানে একজন ব্যক্তিকে এমন কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করা হয় যা তিনি স্বাভাবিকভাবেই করতে চান না। এই কৌশলের মূল ভিত্তি হলো মানুষের স্বাধীনতার প্রতি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া এবং নিয়ন্ত্রণের প্রতি তাদের প্রতিরোধ। যখন কেউ সরাসরি নির্দেশ বা পরামর্শ দেয়, তখন অনেকেরই একটি অভ্যন্তরীণ প্রবৃত্তি থাকে সেটির বিরোধিতা করার। রিভার্স সাইকোলজির মাধ্যমে এই প্রবৃত্তিকে কাজে লাগিয়ে এমন একটি পরামর্শ বা নির্দেশ দেওয়া হয় যা ব্যক্তি প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে প্রতিক্রিয়া জানায়। এটি এমন একটি কৌশল যখন আপনি কাউকে এমন কিছু করতে বলেন, যা আপনি কখনই চান না অথবা যা করতে নিষেধ করেন সেটাই আপনি চান। মনোবিজ্ঞানীরা রিভার্স সাইকোলজি বর্ণনা করতে "কৌশলগত স্ব-বিরোধীতা" শব্দটি ব্যবহার করেন কারণ একজন প্রয়োগকারী ব্যক্তির অনুরোধ তাদের প্রকৃত ইচ্ছার সরাসরি বিরোধিতা করে।

রিভার্স সাইকোলজি
রিভার্স সাইকোলজি । ছবিঃ Trishalia Photographs


মানুষ স্বভাবতই স্বাধীনচেতা, সে কখনোই চায়না তার স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করুক। কিন্তু যখনই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে তার এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় তখনই তার অবচেতন মন বিদ্রোহ করে এবং সে নিষেধাজ্ঞার এর বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করে। "ধূমপান মৃত্যুর কারণ", "বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ", "এখানে প্রস্রাব করিবেন না", "ফুল ছেড়া নিষেধ" ইত্যাদি নিষেধাজ্ঞামূলক কথা আমাদের মনকে প্রভাবিত করে। স্বাধীনচেতা মনের কারনেই আমরা নিষেধাজ্ঞা শুনতে বা মানতে আগ্রহী নই তাই নিষেধাজ্ঞা ভাঙা আমাদের প্রিয় এবং স্বাভাবিক কাজ বলে মনে করি। মানুষের সাইকোলজিই এমন, যে কাজটা করতে নিষেধ করা হবে, সেই কাজই করা লাগবে। আমাদের এইরকম বিচিত্র মনোবৃত্তির উপরই রিভার্স সাইকোলজির মূল ভিত্তি। উদাহরণস্বরূপ, যখন একজন অভিভাবক শিশুকে কোনো কাজ না করতে বলে, শিশুটি প্রায়শই সেই কাজটি করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে, যেটি মূলত অভিভাবকের চাওয়া। আবার আপনি যদি চান যেন কেউ কোন কাজটি করে, তাহলে আপনি বলতে পারেন, "আমি জানি তুমি এটা করতে পারবে না।" এই ধরনের বক্তব্য শুনে অনেকেই সেই কাজটি করার জন্য অনুপ্রাণিত হতে পারে, কারণ এটা একটা সাইকোলজি স্ট্র্যাটেজি যা তাদের আত্মসম্মানকে আঘাত করে এবং ঐ কাজটি করতে মনকে প্রভাবিত করা। এই কৌশলটি অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকরী, যেমন অভিভাবকত্ব, শিক্ষা, সম্পর্ক, ব্যবসা, বিক্রয়, বিপণন ইত্যাদি।


রিভার্স সাইকোলজি সম্পর্কে সহজে বলা যায় এটি মানুষকে প্রভাবিত করার সাইকোলজিক্যাল কারসাজির একটি রূপ। এটি মানুষের জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যানিপুলেশন কৌশল। জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই আমরা সবাই এর প্রয়োগ করি। কৌশলটির সাইকোলজিক্যাল প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। এই সাইকোলজির সঠিক প্রয়োগে অনেক অসম্ভব কাজ কে সম্ভব করা যায়। এটি আপনার কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে সাহায্য করবে, অন্যের মনকে নিজের মতো করে কন্ট্রোল করতে সাহায্য করবে, অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। নেগেটিভ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে অন্যের মনকে প্রভাবিত করে আপনার চাওয়া অনুযায়ী পরিচালনা করতে পারবেন। তবে, এটি একটি সরল মানসিক কৌশল মনে হলেও, এর সফলতা নির্ভর করে পরিস্থিতি বোঝার এবং কৌশলটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করার উপর। তাই রিভার্স সাইকোলজি কৌশল ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন, কারণ এটি এক ধরনের মাইন্ড গেম যা ব্যক্তির মানসিকতার উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত বা অপব্যবহারের ফলে এটি বিশ্বাসের অভাব বা সম্পর্কের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, এই সাইকোলজি টেকনিক ব্যবহারের আগে উদ্দেশ্য এবং প্রেক্ষাপট ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত।


রিভার্স সাইকোলজি কাজ করে কেন?

রিভার্স সাইকোলজি কাজ করে কারণ এটি মানুষের মানসিকতার একটি সাধারণ প্রবণতার উপর ভিত্তি করে কাজ করে। মানুষ প্রায়ই স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অনুভূতি পছন্দ করে। যখন তাদের বলা হয় কিছু না করতে, তখন তাদের মন এই স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখে এবং ঠিক উল্টো কাজটি করার ইচ্ছা জাগে। এর কিছু কারণ হলো।


কেন এই কৌশলটি কাজ করে তার পিছনে কয়েকটি মনোবিজ্ঞানগত কারণ রয়েছেঃ

  • স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষাঃ মানুষ সাধারণত চায় যে তারা তাদের নিজের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারবে। যখন তাদের কিছু করতে নিষেধ করা হয়, তারা মনে করে তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে এবং তাই উল্টো কাজ করতে চায়।
  • চ্যালেঞ্জঃ মানুষ চ্যালেঞ্জ পছন্দ করে। যখন কাউকে বলা হয় যে তারা কোনো কাজ করতে পারবে না, তখন তা তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে এবং তারা সেই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করতে চায়।
  • প্রতিক্রিয়া থিওরিঃ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের উপর চাপিয়ে দেওয়া সীমাবদ্ধতাকে পছন্দ করে না। যখন কাউকে বলা হয় যে তারা কিছু করতে পারবে না, তখন তাদের মধ্যে সেটা করে দেখানোর একটি প্রবণতা তৈরি হয়। মানুষ ঠিক সেই কাজটিই করতে চায় যা তাদের করতে নিষেধ করা হয়েছে।
  • আবেগপ্রবণতাঃ কোনো বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে সেটি সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল বা আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পেতে পারে। এই কারণে, রিভার্স সাইকোলজির মাধ্যমে মানুষকে কোনো কিছুতে প্ররোচিত করা সহজ হয়।


তবে রিভার্স সাইকোলজি সবসময় কাজ করে না। এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছেঃ

  • সম্পর্কঃ এই কৌশলটি ব্যবহার করার আগে ব্যক্তির সাথে সম্পর্কের গভীরতা বিবেচনা করা জরুরি। অতিরিক্ত ব্যবহার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
  • ব্যক্তিত্বঃ সবার উপর এই কৌশলটি কার্যকর হয় না। কিছু ব্যক্তি এই কৌশলকে বুঝতে পারে এবং এর প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না।
  • পরিস্থিতিঃ পরিস্থিতি অনুযায়ী এই কৌশলটি ব্যবহার করা উচিত। সব পরিস্থিতিতে এই কৌশলটি কার্যকর হবে না।

রিভার্স সাইকোলজি দিয়ে কীভাবে কাউকে প্রভাবিত করা যায়?

রিভার্স সাইকোলজি কি কাজ করে? এই উত্তরে, হ্যা, রিভার্স সাইকোলজি কাজ করতে পারে কারণ যখন মানুষ একটি নির্দিষ্ট উপায়ে কাজ করার জন্য চাপ অনুভব করে, তখন তারা বিপরীতটি করতে পছন্দ করে। এটি একজন ব্যক্তিকে তার স্বাধীনতার বোধের জন্য হুমকি বোধ করায় তাতে তিনি অস্বস্তি অনুভব করেন যা সেই স্বাধীনতার পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে অনুপ্রাণিত করে। রিভার্স সাইকোলজি কার্যকর হওয়ার জন্য অনেকগুলি কারণ আছে। তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট বিবেচনা করবে তা ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য আপনাকে অবশ্যই অন্য ব্যক্তির মনস্তত্ত্ব ভালভাবে জানতে হবে। তারা বিপরীতভাবে প্রতিক্রিয়া জানার আগে এবং আপনি রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করছেন তা বুঝতে না পারার আগে তাদের অবশ্যই মনে হবে আপনি তাদের কিছু করতে চান। আপনি কি করছেন তা যদি তারা বুঝতে পারে তবে এটি ব্যর্থ হতে পারে। কিছু লোক অন্যদের তুলনায় রিভার্স সাইকোলজির জন্য বেশি সংবেদনশীল।


রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করে কাউকে প্রভাবিত করার কৌশলগুলি বেশ সূক্ষ্ম এবং কৌশলী হতে পারে। এখানে কিছু পদ্ধতি তুলে ধরা হলোঃ

  • প্রত্যক্ষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুনঃ কাউকে কোনো কিছু করতে উৎসাহিত করার জন্য, আপনি তাকে উল্টো কথা বলতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি চান যে কেউ একটি নির্দিষ্ট কাজ করুক, তবে তাকে বলুন, "তুমি এটা করতে পারবে না" বা "তুমি সম্ভবত এটা করতে চাইবে না।" এতে তার মধ্যে সেই কাজটি করার ইচ্ছা বাড়তে পারে।
  • বিকল্প প্রস্তাব করুনঃ কাউকে কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে বা কোনো কিছু করতে বললে, তাকে এমন একটি বিকল্প দিন যা সে পছন্দ করবে না। উদাহরণস্বরূপ, "তুমি হয়তো এটা করতে চাইবে না, কিন্তু এটি না করলে অন্য বিকল্পটি বেশ কঠিন হবে।" এতে তার মনে হবে যে প্রথম কাজটিই সবচেয়ে সহজ এবং সঠিক।
  • স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করুনঃ আপনি যদি জানেন যে কেউ একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে প্রতিক্রিয়া জানাবে, তবে সেই প্রতিক্রিয়া ব্যবহার করে তাকে প্রভাবিত করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ প্রায়শই আপনার কথার বিরোধিতা করে, তাহলে আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু বলতে পারেন যা সে উল্টো করবে।
  • আত্মবিশ্বাস চ্যালেঞ্জ করুনঃ আপনি কারো আত্মবিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে তার মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, "আমি জানি না তুমি এটা করতে পারবে কি না," অথবা "তোমার সাহস নেই এটা করার।" এতে সেই ব্যক্তি তার সক্ষমতা প্রমাণের জন্য কাজটি করতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।
  • কৌতূহল সৃষ্টি করুনঃ মানুষ প্রায়শই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আগ্রহী হয়। যদি আপনি কাউকে কিছু করতে না করতে বলেন বা বলেন যে কিছু করা কঠিন হবে, তবে সেই ব্যক্তির মধ্যে সেই কাজটি করার কৌতূহল জাগতে পারে।
  • আধিপত্যকে খর্ব করুনঃ যদি আপনি কাউকে অনুভব করতে পারেন যে সে কোনো কাজের জন্য পর্যাপ্ত যোগ্য নয়, তবে তার মধ্যে সেই কাজটি করার প্রেরণা জাগতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, "এটা খুব কঠিন, সবাই এটা করতে পারে না।" এটি ব্যক্তিকে প্রমাণ করার জন্য কাজটি করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।


রিভার্স সাইকোলজি সব সময় কাজ করে না এবং এটি ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। কোনো ব্যক্তি যদি বুঝতে পারে যে আপনি তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন, তাহলে এটি সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, এটি সব পরিস্থিতিতে কার্যকর না-ও হতে পারে, বিশেষত যেখানে ব্যক্তি সচেতনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। রিভার্স সাইকোলজি তখনই সবচেয়ে ভালো কাজ করে যখন এটি ব্যবহার করা হয় সতর্কভাবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী।



রিভার্স সাইকোলজি উদাহরণ

মানুষকে প্রভাবিত করার যতো টেকনিক আছে তারমধ্যে রিভার্স সাইকোলজি অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইচ্ছাকৃত বা অজান্তেই অনেক ক্ষেত্রেই রিভার্স সাইকোলজির মানসিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করি। এমনই কিছু উদাহরণ আলোচনা করা যাকঃ


বিক্রয়ে রিভার্স সাইকোলজি

বিক্রয় বা বিপণনে রিভার্স সাইকোলজির ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যদিও বিক্রয় বা বিপণনে রিভার্স সাইকোলজি গবেষণা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সময়ের সাথে সাথে আমরা নিত্য নতুন টেকনিক দেখতে পাবো। বিক্রয়ে রিভার্স সাইকোলজি কৌশলে বিক্রেতা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্রেতাকে একটি পণ্য বা সেবা না কেনার পরামর্শ দেয় বা নিরুৎসাহিত করে। এর ফলে, ক্রেতার মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং তারা সেই পণ্য বা সেবাটি কেনার দিকে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। বিক্রেতার এই রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করে বিক্রয় বাড়ান। কৌশলটি সাধারণত মানুষের স্বাধীনতা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবৃত্তিকে কাজে লাগিয়ে বিক্রয় বাড়ানোর লক্ষ্যে সুচতুরভাবে এটিকে প্রয়োগ করেন। এমন কিছু টেকনিকের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয় হলোঃ


ডোর-ইন-দ্য-ফেস টেকনিক (Door-in-the-Face Technique)

ডোর-ইন-দ্য-ফেস টেকনিক একটি প্রভাবশালী কৌশল যা একটি বিপরীত মনোবিজ্ঞান বা রিভার্স সাইকোলজি। এতে প্রথমে একটি বড় অনুরোধ করা হয়, যা প্রত্যাখ্যান হবে বলে আশা করা হয়। তারপর একটি ছোট, আরও যুক্তিসঙ্গত অনুরোধ করা হয়। ধারণাটি হলো, প্রথম অনুরোধটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর দ্বিতীয় অনুরোধটি মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, কারণ দ্বিতীয়টি তুলনামূলকভাবে ছোট এবং যুক্তিসঙ্গত মনে হয়।


ধরুন, একজন ভিক্ষুক আপনার কাছে এসে ১০০ টাকা চায়। আপনি অবশ্যই এত বড় পরিমাণ টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন এবং তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর, সে আপনার কাছে ১০ টাকা চায়। প্রথম অনুরোধের তুলনায় ১০ টাকা অনেক কম মনে হওয়ায়, আপনি দ্বিতীয় অনুরোধটি মেনে নিতে প্রবণ হতে পারেন। অনুরূপভাবে, বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে একটি উচ্চমূল্যের পণ্য প্রস্তাব করা হয়, যা সাধারণত প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপর, একটি সস্তা বিকল্প প্রস্তাব করা হয়, যা প্রথম বিকল্পের তুলনায় অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। ক্রেতা দ্বিতীয় প্রস্তাবটি তুলনামূলকভাবে ছোট এবং যুক্তিসঙ্গত মনে করে, তাই পণ্যটি ক্রয় করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।


দ্যাটস-নট-অল টেকনিক (That’s-not-all Technique)

দ্যাটস-নট-অল টেকনিক একটি প্রভাবশালী রিভার্স সাইকোলজি কৌশল যেখানে প্রাথমিক প্রস্তাবের পর আরও কিছু অতিরিক্ত সুবিধা বা বোনাস যোগ করা হয়, কিন্তু এটি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন ক্রেতা বা গ্রাহকরা বিশেষ সুযোগ পাচ্ছেন। এই কৌশলটি ক্রেতাকে আরও সন্তুষ্ট করে এবং প্রস্তাবটি গ্রহণ করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।


ধরুন, আপনি একটি বেকারিতে গেছেন কেক কিনতে। বিক্রেতা আপনাকে বলে, "এই কেকের দাম ৫০০ টাকা।" তারপর, যখন আপনি একটু দ্বিধায় আছেন, বিক্রেতা বলে, "আরো কিছু সুবিধা পাবেন, আপনি যদি এখনই এটি কিনেন, তাহলে আমরা আপনাকে একটি বিনামূল্যের কুকি এবং এক কাপ কফি দেব।" এখানে, বিক্রেতা প্রথমে মূল প্রস্তাবটি দেয় এবং তারপর অতিরিক্ত সুবিধা যোগ করে, যা ক্রেতাকে আরও আকৃষ্ট করে এবং কেনার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এটিই "দ্যাটস-নট-অল" টেকনিকের একটি সাধারণ উদাহরণ। এছাড়াও বিশেষ মূল্যছাড়, সীমিত অফার, সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য, হট সেল, সামার সেল, একটা কিনেলে একটা ফ্রি, কম্বো অফার ইত্যাদি বিজ্ঞাপনগুলো হলো দ্যাটস-নট-অল টেকনিকের উদাহরণ। 


নেগেটিভ সেলিং (Negative Selling)

নেগেটিভ সেলিং একটি কৌশল যেখানে বিক্রেতা বা বিপণনকারী পণ্য বা সেবা সম্পর্কে নেতিবাচক বা সমালোচনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করে ক্রেতার আগ্রহ তৈরি করার চেষ্টা করে। এতে ক্রেতার মধ্যে সংশয় বা প্রতিরোধ তৈরি না করে বরং পণ্যের সত্যিকারের শক্তি ও মূল্য তুলে ধরতে চায়। এই কৌশলটি প্রায়ই ক্রেতার মধ্যে পণ্যের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বাড়াতে এবং প্রতিযোগীদের সাথে তুলনা করতে ব্যবহৃত হয়।


ধরুন, একটি গাড়ি বিক্রয় সংস্থার বিক্রয়কর্মী বলছে, "এই গাড়িটি খুব শক্তিশালী এবং উচ্চ পারফরম্যান্স দেয়, তবে এটি খুব বেশি জ্বালানি সাশ্রয়ী নয়। যদি আপনার প্রাথমিক লক্ষ্য জ্বালানি সাশ্রয় হয়, তাহলে এটি আপনার জন্য সঠিক নয়। কিন্তু যদি আপনি শক্তি ও গতি চান, তাহলে এটি একটি দুর্দান্ত পছন্দ।" এখানে বিক্রয়কর্মী গাড়ির একটি নেতিবাচক দিক তুলে ধরছে (জ্বালানি সাশ্রয় নয়), যা ক্রেতার কাছে গাড়ির শক্তি এবং পারফরম্যান্সের দিকটি আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সহায়ক হতে পারে। এটি নেগেটিভ সেলিং-এর একটি উদাহরণ।


ডিকয় ইফেক্ট (Decoy Effect) ও অ্যাসিমেট্রিক ডমিন্যান্স (Asymmetric Dominance)

  • ডিকয় ইফেক্টঃ একটি প্রভাবশালী কৌশল যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় ক্রেতাদের পছন্দকে প্রভাবিত করতে ব্যবহৃত হয়। এই কৌশলে, বিক্রেতা একটি তৃতীয় বিকল্প (Decoy) যোগ করে, যা দুটি মূল বিকল্পের মধ্যে একটি বিকল্পকে তুলনামূলকভাবে বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে। ডিকয় বিকল্পটি সাধারণত এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যে এটি পছন্দের মূল বিকল্পটির চেয়ে কম আকর্ষণীয় হয়, কিন্তু অন্য একটি বিকল্পের তুলনায় কিছু ক্ষেত্রে বেশি সুবিধাজনক বলে মনে হয়।
  • অ্যাসিমেট্রিক ডমিন্যান্সঃ এটি ডিকয় ইফেক্টের একটি নির্দিষ্ট ধরন, যেখানে ডিকয় বিকল্পটি এমনভাবে তৈরি করা হয় যে এটি অন্য একটি বিকল্পের (Asymmetric Dominnated Option) তুলনায় সম্পূর্ণভাবে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে খারাপ হয়, তবে তা মূল বিকল্পটির তুলনায় ভালো বলে মনে হয়। ডিকয় বিকল্পটি মূলত দুইটি বিকল্পের মধ্যে একটি বিকল্পকে তুলনামূলকভাবে আরও ভালো দেখায়।


ডিকয় ইফেক্ট ও অ্যাসিমেট্রিক ডমিন্যান্স এর উদাহরণ

ধরুন, আপনি একটি নতুন ল্যাপটপ কিনতে চান। দোকানে তিনটি ল্যাপটপ রয়েছেঃ

ল্যাপটপ A: দাম ৫০,০০০ টাকা, প্রসেসর i5, র‌্যাম 8GB, স্টোরেজ 256GB
ল্যাপটপ B: দাম ৬০,০০০ টাকা, প্রসেসর i7, র‌্যাম 16GB, স্টোরেজ 512GB
ল্যাপটপ C: দাম ৫৫,০০০ টাকা, প্রসেসর i5, র‌্যাম 8GB, স্টোরেজ 512GB

ডিকয় ইফেক্টঃ ল্যাপটপ C হলো ডিকয় পণ্য। এটি ল্যাপটপ B এর সাথে খুব মিল, কিন্তু কিছুটা কম আকর্ষণীয় (প্রসেসর i5 বনাম i7)। ফোন C এর উপস্থিতির কারণে, ল্যাপটপ B আপনার কাছে আরও আকর্ষণীয় মনে হবে, কারণ এটি ল্যাপটপ C এর তুলনায় ভালো প্রসেসর সহ।

অ্যাসিমেট্রিক ডমিন্যান্সঃ ল্যাপটপ B হলো ডমিন্যান্ট পণ্য। এটি ল্যাপটপ A এর তুলনায় প্রসেসর, র‌্যাম এবং স্টোরেজ সব ক্ষেত্রেই ভালো। ফলে ল্যাপটপ B আপনার কাছে ল্যাপটপ A এর চেয়ে আরও আকর্ষণীয় মনে হবে।

এগুলো ছাড়াও আরো অনেক রিভার্স সাইকোলজি বেইজড টেকনিক আছে, যেগুলো এখানে উল্লেখ করা অপ্রয়োজনীয়।


বিপণনে রিভার্স সাইকোলজি

রিভার্স সাইকোলজি বিপণনের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিপণনকারীরা ভোক্তাদের পছন্দকে প্রভাবিত করতে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করে। বিক্রয়ে বিভার্স সাইকোলজির ব্যবহারের যে সমস্ত টেকনিক আলোচনা করা হয়েছে বিপণনের ক্ষেত্রেও সেগুলো প্রযোজ্য। ডোর-ইন-দ্য-ফেস টেকনিক, দ্যাটস-নট-অল টেকনিক, নেগেটিভ সেলিং, ডিকয় ইফেক্ট এবং অ্যাসিমেট্রিক ডমিন্যান্স টেকনিকগুলো বিপণনেও অত্যন্ত কার্যকর। 


** বিক্রয় বা বিপণনে সাইকোলজি টেকনিক সম্পর্কে “বিক্রয় বৃদ্ধির গোপন অস্ত্রঃ সাইকোলজিক্যাল প্ররোচনা কৌশল” নামে নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।


প্যারেন্টিংয়ে রিভার্স সাইকোলজি

অভিভাবকত্ব নিঃসন্দেহে জীবনের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং কাজ। একজন অভিভাবক হিসেবে, আপনার সন্তানের স্বাধীন প্রাপ্তবয়স্কদের পরিণত হওয়ার ক্ষমতাকে স্তব্ধ না করে তার আচরণকে প্রভাবিত করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। প্রায়শই, কোনটি সঠিক সে সম্পর্কে একটি শিশুর ধারণা থাকেনা তাই তাদের মন যা চাই তারা তাই করতে চায় যা আপনার ইচ্ছা বা স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে। পরবর্তিতে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পিতা-মাতা এবং সন্তানের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের তাদের জন্য সেরাটি বেছে নিতে অনুরোধ করার জন্য রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করে এই উত্তেজনা সমাধান করতে পারেন। একটি উদাহরণ হল যখন একটি শিশু স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চায় না। যদি পিতা-মাতা তাদের শিশুদেরকে বলে যে এই খাবারগুলো পিতা-মাতা বা বড়দের জন্য এবং শিশুরা সেগুলি খাবেনা, তাহলে শিশুরা এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় সেই নিষিদ্ধ খাবারই খাবে। আবার, যদি একটি শিশু তার খেলনা গুছিয়ে রাখতে না চায়, তবে তাকে বলুন, "আমি নিশ্চিত না তুমি এটা করতে পারবে কিনা।" এতে শিশু প্রায়ই উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সেই কাজটি করতে উৎসাহী হয়। রিভার্স সাইকোলজি শিশুদের মধ্যে স্বতন্ত্র চিন্তা এবং দায়িত্বশীলতার বোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এটি ব্যবহারে সতর্ক থাকা জরুরি, কারণ অতিরিক্ত বা ভুল প্রয়োগে শিশুরা নিজেদের বিশ্বাস এবং আপনার উপর আস্থা হারাতে পারে।


শিক্ষাদানে রিভার্স সাইকোলজি

শিক্ষকরা জটিল বিষয়গুলিতে শিক্ষার্থীদের জড়িত করার জন্য রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি বই সরাসরি সুপারিশ করার পরিবর্তে, একজন শিক্ষক ইঙ্গিত দিতে পারেন যে এটি তাদের গ্রেড স্তরের উপরে বা গ্রুপের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং। শিক্ষককে ভুল প্রমাণ করার জন্য শিক্ষার্থীরা বইটি পড়তে বাধ্য বোধ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করে বিষয়বস্তুর প্রতি আগ্রহী হতে পারে। একজন শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের কোনো কঠিন কাজ সম্পর্কে বলে, "এটি বেশ কঠিন, সম্ভবত তোমাদের অনেকের পক্ষেই এটি করা সম্ভব হবে না," তাহলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে এবং আরও উৎসাহিত হয়ে সেই কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে। রিভার্স সাইকোলজি দিয়ে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, "আমি জানি না তুমি এই অঙ্কটা করতে পারবে কি না, এটা তো বেশ কঠিন!" এতে শিশু সেই কাজটি করার জন্য উদ্বুদ্ধ হতে পারে, কারণ তারা নিজেদের ক্ষমতা প্রমাণ করতে চাইবে। "তুমি যদি হোমওয়ার্ক না করতে চাও, তাহলে এখনই ঘুমাতে যেতে পারো।" এতে শিশুটি হয়তো হোমওয়ার্ক করতেই বেশি আগ্রহী হবে। "তুমি এই পড়াটা এখন পড়বে না, কারণ এটি খুবই কঠিন, তুমি পরে চেষ্টা করতে পারো," এতে শিশুটি এখনই সেই কাজটি করতে চাইতে পারে। "তুমি হয় এই বইটি বুঝতে পারবে না, এটা তোমার জন্য একটু কঠিন," এমন কথায় শিশুটি বইটি পড়তে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে, কারণ তারা নিজেদের প্রমাণ করতে চায়।


রিভার্স সাইকোলজি এবং সম্পর্ক

সম্পর্কের ক্ষেত্রে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করা একটি হাতিয়ার হতে পারে এবং এটি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, আপনার সঙ্গী জোর দেয় যে তারা জন্মদিনের উপহার চায় না, কিন্তু বাস্তবে তারা তা চায়। আপনার সঙ্গীকে অবাক করার জন্য, আপনি যেভাবেই হোক তার জন্য একটি উপহার কিনবেন। এক্ষেত্রে আপনি সঙ্গী কর্তৃক রিভার্স সাইকোলজির স্বীকার হলেন। আবার, যদি আপনার পার্টনার কোনো বিষয় নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বা কিছু করতে অনীহা দেখায় বা কথা গোপন করতে চায় তাহলে আপনি তাকে বলতে পারে, "যদি তুমি না চাও বা না বলতে চাও বা না করতে চাও, তা হলে কোনো সমস্যা নেই," যা পার্টনারকে উল্টোভাবে সেই কাজটি করার জন্য উৎসাহিত করতে পারে। এই কৌশলটি ব্যবহার করার সময় পার্টনারের অনুভূতি ও সম্পর্কের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা উচিত।


রিভার্স সাইকোলজি এবং নেতৃত্ব

নেতৃত্বে রিভার্স সাইকোলজি একটি শক্তিশালী টুল হতে পারে, বিশেষত যখন নেতারা তাদের দলের সদস্যদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে এবং নিজেদের প্রতিভা ও সামর্থ্যকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে চান। এটি একটি কৌশল যা সদস্যদের মধ্যে প্রেরণা জাগাতে, তাদের ক্ষমতায়িত করতে, এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। নেতারা প্রায়ই এমন উপায়ে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করেন যা দলের সদস্যদের স্বাধীনতা দেয় এবং তাদের নিজের সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো নেতা বলে, "আমি নিশ্চিত নই যে তুমি এটা করতে পারবে, তবে তুমি চেষ্টা করতে পারো," তাহলে সেই ব্যক্তি নিজেকে প্রমাণ করার জন্য বেশি চেষ্টা করবে। রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করে নেতা সৃজনশীল চিন্তা উদ্দীপিত করতে পারে। যদি নেতারা সরাসরি সমাধান না দিয়ে বরং দলের সদস্যদের চিন্তা করতে বলেন, তাহলে তারা আরও সৃজনশীল এবং কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, "আমি জানি না এটি কীভাবে করা সম্ভব, তবে তোমাদের মধ্যে কেউ কি কোনো আইডিয়া দিতে পারো?" এটি দলের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তাকে উৎসাহিত করতে পারে। রিভার্স সাইকোলজি দলের সদস্যদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। নেতারা প্রায়ই সদস্যদের চ্যালেঞ্জ করেন, "এটা করার জন্য তোমার পর্যাপ্ত সাহস আছে তো?" এমন চ্যালেঞ্জ আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং সদস্যদের নিজস্ব সামর্থ্য প্রমাণে প্রেরণা দিতে পারে। নেতারা যখন রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করে, তারা প্রায়ই দলের সদস্যদের তাদের নিজস্ব কাজে দায়িত্ব নিতে এবং নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেন। উদাহরণস্বরূপ, "আমি নিশ্চিত নই যে তুমি এই প্রকল্পটি নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত, তবে তুমি চাইলে চেষ্টা করতে পারো।" এটি সদস্যদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, নেতৃত্বে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহারে সতর্ক থাকা জরুরি। এটি যদি অত্যধিক ব্যবহৃত হয় বা ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে এটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। সদস্যরা যদি মনে করে যে তারা প্রভাবিত হচ্ছে বা তাদের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে, তাহলে এটি তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। তাই নেতৃত্বে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করার সময় নেতাদের অবশ্যই দলের মানসিকতা এবং প্রয়োজন বোঝার জন্য সংবেদনশীল হতে হবে এবং এটি তখনই ব্যবহার করতে হবে যখন এটি কার্যকরী হবে।


উপসংহার

রিভার্স সাইকোলজির সঠিক প্রয়োগ জীবনের সব ক্ষেত্রেই করতে পারেন। সাংসারিক, সামাজিক, কর্মক্ষেত্র, প্রেম-ভালবাসা সহ সব ক্ষেত্রেই চতুরতার সাথে রিভার্স সাইকোলজির প্রয়োগে আপনি অনেক মানুষকেই আপনার ইচ্ছামত পরিচালনা বা আপনার মতামতকে প্রাধান্য দেয়াতে বাধ্য করতে পারেন। এর সঠিক প্রয়োগে আপনার জীবন থেকে প্রিয়জনের হারিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা কমিয়ে ফেলতে পারেন, প্রিয়জনকে বেশি ভালোবাসতে বাধ্য করতে পারেন, আপনার প্রতি প্রিয়জনের আসক্তি বাড়াতে পারেন, সর্বোপরি জীবনকে অনেক সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত করতে পারেন। 


রিভার্স সাইকোলজি হল একটি প্ররোচনা কৌশল যা মানুষকে নিজের মতানুযায়ী বাধ্য করার একটা কারসাজি। যদি একজন ব্যক্তি বুঝে ফেলেন যে আপনি সর্বদা এই তার উপর কৌশলটি ব্যবহার করছেন বা ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছেন তাহলে ঐ ব্যক্তি আপনাকে আর বিশ্বাস করতে পারবে না, আপনার উপর আস্থা হারাবে, আপনার উপর বিরক্ত হবে এবং আপনার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। এক্ষেত্রে রিভার্স সাইকোলজির ব্যবহার আপনাকে অবিশ্বাসের দিকে নিয়ে যেতে পারে, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারে। এই কৌশলটি ঘন ঘন ব্যবহার করা আপনার সঙ্গীর বিশ্বাসকে ক্ষয় করতে পারে এবং তাদের রাগকে ট্রিগার করতে পারে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি হতে পারে। তাই কারসাজি এবং লুকোচুরির বিপরীতে সৎ এবং সরল থাকা ভাল। শুধুমাত্র মানুষকে ম্যানিপুলেট করার জন্য রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করা উচিত নয়। কারো কোন কিছুতে প্রচন্ড আসক্তি থাকলে বা ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপরীতে প্রয়োগ করলে ফলাফল সঠিক নাও পেতে পারেন। তাই স্থান, কাল বিবেচনা করে ও যার উপর প্রয়োগ করা হবে তার সাইকোলজি জেনে কৌশলটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।


সচরাচর জিজ্ঞাস্য

১। প্রশ্নঃ কোন ধরনের মানুষ রিভার্স সাইকোলজির জন্য বেশি সংবেদনশীল?

উত্তরঃ রিভার্স সাইকোলজির জন্য সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল জনসংখ্যা হল কিশোর, শিশু, নার্সিসিস্ট, সোসিওপ্যাথ এবং যারা টাইপ A ব্যক্তিত্ব আছে। একগুঁয়ে এবং বিতর্কিত লোকেরা প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ার প্রবণতা বেশি। যারা গ্রাউন্ডেড, কমপ্লায়েন্ট এবং সহজপ্রবণ তারা সাধারণত রিভার্স সাইকোলজির প্রতি কম সংবেদনশীল। 


২। প্রশ্নঃ আপনি নিজের উপর রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করতে পারেন?

উত্তরঃ হ্যাঁ। আপনি নিজেকে বলতে পারেন যে আপনি কিছু করতে পারবেন না এবং তারপর আপনি নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং প্রমাণ করতে আরও অনুপ্রাণিত হবেন যে আপনি পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আমি নিজেকে বলব যে আমি গাড়ী চালাতে পারি না। আমি তখন এই সমালোচনাকে অভ্যন্তরীণ প্রেরণা হিসাবে ব্যবহার করব নিজেকে ভুল প্রমাণ করতে এবং গাড়ী চালাতে।


৩। প্রশ্নঃ রিভার্স সাইকোলজি কি একজন নার্সিসিস্টের উপর কাজ করে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, রিভার্স সাইকোলজি খুব সম্ভবত নার্সিসিস্টিক ব্যক্তিত্বের সাথে কাজ করে কারণ এই ব্যক্তিরা নিয়ন্ত্রণে থাকতে এবং নিজের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করে।


৪। প্রশ্নঃ যে আপনার উপর রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করছে তার সাথে আপনি কীভাবে মোকাবিলা করতে পারেন?

উত্তরঃ আপনি যদি মনে করেন যে অন্য কেউ আপনার উপর রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করার চেষ্টা করছে, তবে আপনি কিছু করতে পারেন। একবার আপনি বুঝতে পারলেন যে কেউ আপনার উপর রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করার চেষ্টা করছে, একটি বিকল্প হল তাদের ব্যাখ্যা করতে বলা যে তারা কেন তারা যে পছন্দের জন্য তর্ক করছে তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অথবা আপনি মূলভাবে নির্বাচিত পরিকল্পনার সাথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং ভান করতে পারেন যে আপনি চেষ্টা করা ম্যানিপুলেশনটি লক্ষ্য করেননি, অথবা আপনি এমন বিকল্পটি বেছে নিতে পারেন যা তারা স্পষ্টতই আপনাকে বেছে নিতে চায় না। যেভাবেই হোক, অন্য ব্যক্তি আপনাকে কী করার চেষ্টা করছে তার চেয়ে আপনার জন্য কোন বিকল্পটি সবচেয়ে ভাল তার উপর আপনার ফোকাস করা উচিত। সবশেষে, আপনি অন্য ব্যক্তিকে তাদের রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করার জন্য ডাকতে ভয় পাবেন না যাতে তারা ভবিষ্যতে আপনার উপর আবার একই কৌশল চেষ্টা করার সম্ভাবনা কম থাকে।


Feriwala এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Post a Comment

0 Comments