অফিস পলিটিক্স
অফিস পলিটিক্স বা কর্মক্ষেত্রের রাজনীতি হল আধুনিক কর্মক্ষেত্রের একটি বিস্তৃত এবং প্রায়ই অবাঞ্ছিত একটা দিক। অফিস পলিটিক্স প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই বিদ্যমান। অফিস পলিটিক্স বলতে কর্মক্ষেত্রের এক জটিল সামাজিক কাঠামো বোঝায়। এতে কর্মচারীরা তাদের কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব ও ক্ষমতার দ্বারা কৌশল প্রয়োগ করে অফিস ম্যানেজমেন্টের দলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
![]() |
অফিস পলিটিক্স |
অফিস পলিটিক্স কেন করে?
আপনি অফিসের পলিটিক্স পছন্দ করেন বা না করেন, এটা আপনার চাকরি জীবনের একটি অনিবার্য অংশ। অফিসে আপনার অবস্থান যাই হোক না কেন, কর্পোরেট পলিটিক্স থেকে আপনি কোন মতেই রেহাই পাবেন না। এটা চাকরি জীবনের একটি চরম সত্য। যদি আপনি পলিটিক্সে না জড়াতে চান তাহলে আপনি ঐ প্রতিষ্ঠানে বেশিদিন টিকতে পারবেন না। তাই অফিস পলিটিক্স কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় তা শেখার মাধ্যমে আপনি কর্মক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করতে পারেন ও আপনার ক্যারিয়ারকে সফল করতে পারেন যা আপনার এবং প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই মঙ্গলজনক। যেকোন প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীরা প্রত্যেকেই আলাদা ভূমিকা পালন করে। একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিভিন্ন স্বার্থ থাকে এবং এই স্বার্থগুলি সর্বদা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একজনের স্বার্থের সাথে অন্যদের স্বার্থের সাদৃশ্য হয় না। অফিসের পলিটিক্সে একজন ব্যক্তির সম্পৃক্ততার উদ্দেশ্যগুলি হলো- পদোন্নতির লক্ষ্যে, পেশাদার উন্নয়ন, চেইন অফ কমান্ড বাইপাস করতে পারা, একজনের ধারণা বিক্রি করা, একটি লক্ষ্যযুক্ত উদ্দেশ্য অর্জন করা, অফিস ম্যানেজমন্টের উপর প্রভাব বিস্তার করা বা নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, ফাঁকিবাজি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেতে অফিসের পলিটিক্সে জড়িত হয়। এই লক্ষ্যগুলিতে পৌঁছানোর জন্য অনুপ্রাণিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন রকমের ট্রিকস অ্যাপ্লাই করে। এই ট্রিকসগুলিকেই অফিস পলিটিক্স বা কর্মক্ষেত্রের রাজনীতি বলা যায়।
অফিস পলিটিক্সের কারন বিশ্লেষণঃ
ঈর্ষা এবং নিরাপত্তাহীনতা
ঈর্ষা এবং নিরাপত্তাহীনতা প্রায়ই অফিসের পলিটিক্সকে চালিত করে। সহকর্মীরা আপনার দক্ষতা, কৃতিত্ব বা স্বীকৃতির দ্বারা ঈর্শান্বিত হতে পারে বা হুমকি বোধ করতে পারে, যার ফলে তারা আপনার সাথে অবমাননাকর আচরণে জড়িত হতে পারে। একজন সহকর্মী যিনি আপনাকে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন তিনি ক্রমাগত আপনাকে ছোট করেন, আপনার কৃতিত্বকে ছোট করেন, আপনাকে হিংসা করেন, আপনাকে অসহযোগিতা করেন এবং আপনার খ্যাতি নষ্ট করার জন্য আপনার কাজ সম্পর্কে মিথ্যা গুজব ছড়ান।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং আত্ম-সংরক্ষণ
কিছু ব্যক্তি তাদের কেরিয়ারকে এগিয়ে নিতে বা কর্মজীবন সাফল্যময় করতে বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তাদের অবস্থান রক্ষা করতে এই ধরনের আচরণে নিযুক্ত হন। তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ম্যানিপুলেশন এবং জোট ব্যবহার করতে পারে। একজন সহকর্মী পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য ঊর্ধ্বতনদের সাথে জোট গঠন করতে পারে, এমনকি যদি এর বিনিময়ে অন্য সহকর্মীদের অবমূল্যায়ন করতেও হয় তবুও তারা করবে।
পরিবর্তনের ভয়
পরিবর্তনের প্রতিরোধের কারণে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপও বাড়তে পারে। কিছু কর্মচারী নতুন উদ্যোগ, কোন পরিবর্তন বা প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করতে রাজনৈতিক কৌশল ব্যবহার করতে পারে যা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রুলসকে হুমকিতে ফেলে দেয়। একজন পলিটিক্সকারী সহকর্মী প্রতিষ্ঠান-ব্যাপী নতুন উদ্যোগের ব্যাপারে বা পরিবর্তনের ব্যাপারে ক্রমাগত নেতিবাচকতা ছড়ায়, যা অন্যান্য কর্মচারীদের মনে প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনিশ্চয়তা, অবিশ্বাস এবং প্রতিবাদের দিকে পরিচালিত করে।
সম্পদ দখল
ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠান থেকে অনৈতিক অর্থনৈতিক বা অন্যান্য লাভজনক খাত থেকে সুবিধা পেতে অফিসের পলিটিক্সে জড়িত হতে পারে, তা বাজেট বরাদ্দ, প্রকল্পের মালিকানা প্রভাব খাটানো বা লোভনীয় অফিস স্পেস অ্যাক্সেস, অফিসিয়াল ট্যুর, অফিসিয়াল ক্রয় যাই হোক না কেন। একজন সহকর্মী আক্রমনাত্মকভাবে তার, তার বিভাগ বা তার দলের জন্য প্রতিষ্ঠানে পলিটিক্সের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে, যা প্রতিষ্ঠানে কাজের পরিবেশ নষ্ট করে এছাড়া দ্বন্দ্ব, বিরক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকে পরিচালিত করে।
ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা
কখনও কখনও কর্মক্ষেত্রের পলিটিক্স ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা প্রতিহিংসা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। সহকর্মীরা তাদের প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন ব্যক্তিদের লক্ষ্য করতে পারে যাদের সাথে তাদের বিরোধ রয়েছে। একজন সহকর্মী যিনি আপনার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ক্ষোভ পোষণ করেন, ক্রমাগত আপনার প্রকল্পগুলিকে দুর্বল করেন, নেতিবাচক তথ্য ছড়িয়ে দেন এবং সক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আপনার খ্যাতি নষ্ট করার জন্য কাজ করেন।
অফিসের পলিটিক্সের ধরন
ক্রেডিট চোর
ক্রেডিট চোর হল এমন লোক যারা অন্য ব্যক্তির কাজের স্বীকৃতি বা প্রশংসা চুরি করে এটিকে তাদের নিজের বলে প্রচার করে। এটি ঘটে যখন কেউ আপনার ধারণা, অবদান বা কঠোর পরিশ্রমের জন্য ক্রেডিট নেয় এবং আপনার প্রচেষ্টায় কাজে সফল হলেও আপনাকে উপেক্ষা করে। আপনি একটি টিম মিটিংয়ে একটি যুগান্তকারী ধারণা উপস্থাপন করেন, কিন্তু একজন সহকর্মী এটির কৃতিত্ব নিতে হস্তক্ষেপ করে, দল এবং আপনার ঊর্ধ্বতনদের সামনে আপনার ভূমিকাকে হ্রাস করে। এই ক্রেডিট চোররা আপনার কমপ্লিট করা কাজের ক্ষেত্রেও নিজের স্বল্প অবদানটুকুও ঘটা করে প্রচার করে, যেন তার জন্যই কাজটি সফলভাবে কমপ্লিট হয়েছে। যদি অবদান জাহির করার সুযোগ না পায় তাহলে ঐ কাজের দূর্নাম করে এবং নেগেটিভ বিষয়কে হাইলাইট করার চেষ্টা করে।
বলির পাঁঠা
এখানে বলির পাঁঠা বলতে অন্যের উপর দোষ চাপানো বুঝানো হয়েছে। প্রায়শই পলিটিক্সকারী অন্যায়ভাবে, নিজের ভুল বা ব্যর্থতা থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য অন্যের উপর দোষ চাপান। যখন একটি প্রকল্প অগোছালো হয়ে যায়, তখন একজন সহকর্মী ক্রমাগত আপনার দিকে আঙুল তোলে, ব্যর্থতার জন্য তার নিজের গুরুত্বপূর্ণ অবদান বা দোষ উপেক্ষা করে আপনার ছোটখাটো ত্রুটিগুলি হাইলাইট করে। মূলতঃ যে সমস্ত কর্মচারী শান্ত স্বভাবের বা প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না, তারাই বারবার এই পলিটিক্সের শিকার হন।
চাটুকারিতা বা তোষামোদী বা তেলবাজি বা চামচামি
চাটুকারিতা, তোষামোদী, তেলবাজি, চামচামি ইত্যাদি হলো এক ধরণের সূক্ষ্ম ও অব্যর্থ অফিস পলিটিক্স টেকনিক। কিছু লোক অনুগ্রহ লাভ বা অন্যদের প্রভাবিত করার জন্য এই টেকনিকের অবলম্বন করে। তারা সহকর্মীদের প্রশংসা করে ও চাটুবাক্যে সিক্ত করে, কিন্তু এটি প্রায় ক্ষেত্রেই তেলবাজি এবং খারাপ ও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যেই এটা করে। সহকর্মীর মানসিক দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা এই কাজটি করে। একজন সহকর্মী ক্রমাগত অযথাই আপনার ব্যক্তিত্ব, কাজ এবং ক্ষমতার প্রশংসা করে। তারা শুধুমাত্র তখনই এটি করে যখন তাদের এজেন্ডার জন্য আপনার সমর্থনের প্রয়োজন হয়। আবার কিছু অযোগ্য লোক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে নিজেকে সবচেয়ে বিশ্বাসী, সবচেয়ে বিচক্ষণ হিসাবে প্রমাণ করার আপ্রান চেষ্টা করে এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সবকাজে অনিচ্ছা থাকলেও সমর্থন দেয়া এবং প্রশংসা করার মতো তেলবাজিতে লিপ্ত থাকে সবসময়। এই চাটুকারী বা তোষামোদকারীদের তেলবাজিতে সিক্ত হয়ে খুশি মনে তাকে প্রশ্রয় দেয়া উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অফিস পলিটিক্সের শিকার। চাটুকারিতা, তোষামোদী বা তেলবাজির মনস্তাত্বিক একটা ইফেক্ট আছে যা আমাদের মনে একধরনের ভালোলাগা কাজ করে। কেউ অযথা প্রশংসা বা তোষামোদ বা তেলবাজি করলে অধিকাংশ মানুষ তার উপরে সন্তুষ্ট হয় এবং তাকে আপন লোক মনে করা হয়। কেউ বুঝতেও পারেনা এটা অতি সূক্ষ্ম অফিস পলিটিক্স। এতে তেলবাজের উদ্দেশ্য সফল হয়, সে তেলবাজি করেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাই তার সমস্ত এজেন্ডা বাস্তবায়িত হয়।
বিশ্বাস ক্ষুন্ন করা
এর মধ্যে এমন আচরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা দলের সদস্যদের মধ্যে থাকা বিশ্বাসকে দুর্বল করে, যেমন ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো, সহকর্মীদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করা বা দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। একজন সহকর্মী ক্রমাগত অন্যদের বলে যে আপনাকে বিশ্বাস করা যায় না, দলের মধ্যে আপনি সন্দেহজনক, আপনার এজেন্ডা কোন ভিত্তি নেই ইত্যাদি বলে আপনাকে ডিমোটিভেট করে।
সূক্ষ্ম ম্যানেজিং
এটি একজন সহকর্মী বা সুপারভাইজারকে অত্যধিকভাবে অন্যের কাজ নিয়ন্ত্রণ বা তত্ত্বাবধানে জড়িত করে, শুধুমাত্র তাদের অসম্মান বা অবমূল্যায়ন করার অভিপ্রায়ে। একজন সহকর্মীকে কল্পনা করুন যিনি ক্রমাগত আপনার ক্রিয়াকলাপের আপডেটের জন্য অনুরোধ করছেন, অযাচিত পরামর্শ দিচ্ছেন এবং আপনার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করছেন, সব সময় সূক্ষ্মভাবে বোঝাচ্ছে যে আপনি আপনার দায়িত্বগুলি পরিচালনা করতে পারবেন না, কাজটা অনেক কঠিন, কাজটা করা অসম্ভব। এটা যে শুধু আপনাকেই বলবে সেটা নয় বরং আপনার অন্যান্য সহকর্মী বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও গোপনে বলবে এবং বারবার বলবে এতে আপনার সক্ষমতার প্রতি সবার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হবে।
তথ্য মজুদ
তথ্যই শক্তি। তাই কিছু ব্যক্তি তাদের সহকর্মীদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকিয়ে অফিসের পলিটিক্সের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। আপনার সহকর্মী, যার কাছে প্রকল্প বা এজেন্ডার সমালোচনামূলক তথ্য অ্যাক্সেস রয়েছে, তিনি এটি দলের সাথে ভাগ করতে অস্বীকার করেন, তথ্য ও জ্ঞানের ফাঁকফোকর তৈরি করে যা আপনার অগ্রগতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা দেয়।
ধ্বংসকারী
একজন ধ্বংসকারী বা নাশকতাকারী এমন একজন ব্যক্তি যিনি কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতা বজায় রাখার উপায় হিসাবে নাশকতাকে আশ্রয় নেন। তারা তাদের নিজস্ব প্রকল্প বা এজেন্ডাকে আরও ভাল দেখাতে অন্যকারো প্রকল্প বা এজেন্ডাকে লাইনচ্যুত করার চেষ্টা করে। এর মধ্যে আপনার কাজে ব্যবহৃত লজিস্টিকস নষ্ট করা, ডিজিটাল তথ্য মুছে ফেলা, ডকুমেন্টস নষ্ট করে ফেলা বা চুরি করা ইত্যাদি অনেক বিষয়ই জড়িত।
গসিপার
অফিসের গসিপাররা এমন লোক যারা অন্যদের সম্পর্কে গোপনে নেতিবাচক কথা বলতে পছন্দ করে। যারা গসিপ করে তারা অবশ্য সবসময় ক্ষতি করার উদ্দ্যেশে গসিবে করেনা, গসিব করা কিছু লোকের স্বভাবজাত। তবে উদ্দেশ্য যাই হোকনা কেন অন্যের ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দিলে তার অনুভূতিতে আঘাত বা সুনামের ক্ষতি হতে পারে। যদি আপনার কাজের পরিবেশে অফিসে গসিপ হয়, তবে অন্যের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তাদের সাথে কথোপকথনে নিজেকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে আপনি যার সম্পর্কে আলোচনা করছেন সে যদি উপস্থিত না থাকে। সবচেয়ে বড় কথা, গসিপাররা অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে গসিপ করে আপনার মূল্যবান সময় এবং আপনার মনোযোগ নষ্ট করে।
অফিস পলিটিক্সের নেতিবাচক প্রভাব:
মনোবল এবং কাজের সন্তুষ্টি হ্রাস
কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীদের মনোবলের উপর পলিটিক্সের প্রভাব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যখন কর্মীরা পলিটিক্সের কারনে কাজের ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশ অনুভব করেন বা সরাসরি অফিস পলিটিক্সের শিকার হন, তখন তাদের মনোবল কমে যায় এবং কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৪২% কর্মচারী যারা প্রায়শই অফিস পলিটিক্সের শিকার হন তারা কাজ থেকে সক্রিয়ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন ও ডিমোটিভেট হন। তারা মানসিকভাবে ভিতরে ভিতরে কর্মক্ষেত্রের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন, আগের মতো আর আন্তরিকতা থাকেনা ও কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভালেবাসা ও দায়ীত্ববোধ ম্লান হয়ে যায়।
বর্ধিত চাপ এবং জ্বালা
অফিস পলিটিক্স কর্মক্ষেত্রে চাপের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। সাধারণত কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীদের যে চাপ থাকে অফিস পলিটিক্স সে চাপকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। আর এই বাড়তি চাপের ফলে একজন দক্ষ কর্মচারীও তার দায়ীত্বের শতভাগ সার্ভিস দিতে পারেনা। অতিরিক্ত চাপের কারনে অনেকেই বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।
দলীয় সংহতি ও সহযোগিতার অভাব
যখন অফিসের পলিটিক্স নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন এটি দলীয় সংহতি এবং সহযোগিতা হ্রাস করতে পারে। অফিস পলিটিক্সে জড়িত কর্মচারীদের মধ্যে একে অপরের প্রতি সহযোগিতা করার প্রবণতা কমে যায়, তাতে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
উচ্চ টার্নওভার হার
অফিস পলিটিক্সের উচ্চ স্তরগুলি প্রায়ই বর্ধিত টার্নওভার হারের সাথে যুক্ত থাকে। কর্মচারীরা তাদের চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়া, পলিটিক্সের কারনে সৃষ্ট আন্তঃব্যক্তিক দ্বন্দ্ব এবং পলিটিক্স-সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যাগুলি তাদের প্রস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে বিবেচিত। এক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৩৭% কর্মচারী অফিস পলিটিক্সের কারণে তাদের চাকরি ছেড়ে দেয়। কর্মচারী চাকরি ছেড়ে দিলে আবার নতুন নিয়োগ দিতে হয়, ট্রেনিং করাতে হয় তাতে ওভারহেড খরচ বৃদ্ধি পায়।
ব্যবসার কর্মক্ষমতা হ্রাস
অফিস পলিটিক্স সামগ্রিক ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অফিস পলিটিক্স নেতিবাচকভাবে কর্মীদের কর্মক্ষমতা এবং কাজের সন্তুষ্টিকে প্রভাবিত করে, যার ফলে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।
অফিস পলিটিক্স কীভাবে সামলাবেন?
কর্মচারীদের যা করণীয়
শান্ত থাকুন ও তথ্য সংগ্রহ করুন
অফিসের পলিটিক্সের মুখোমুখি হলে আপনার সংযম বজায় রাখুন। আপনি অসংযমী হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রমাণ এবং তথ্য সংগ্রহ করুন। তারিখ, সময় এবং জড়িত ব্যক্তি সহ অফিস পলিটিক্সের সমগ্র নথি সংগ্রহে রাখুন। অফিস পলিটিক্স সাধারণত খুব দীর্ঘস্থায়ী হয়না, একটার পর একটা এজেন্ডার সাথে সাথে পলিটিক্সেরও পরিবর্তন হয় তাই অপেক্ষা করুন আপনারও সুযোগ আসবে তখন পরিস্থিতি বিবেচনা সব তথ্য প্রমান ও ঘটনার বিবৃতি পেশ করুন।
আপনার কাজের রেকর্ড রাখুন
যদি আমরা দেখতে পাই যে কেউ আমাদের কাজের জন্য অনুপযুক্তভাবে ক্রেডিট নিচ্ছে, তাহলে আমাদের সরাসরি সেই ব্যক্তির চরিত্র অফিসে সবার সামনে প্রকাশ করা উচিত নয়। কারন তাতে তার সাথে বড় ধরনের ঝগড়া লেগে যেতে পারে তাতে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতিতে এই আচরণ অবশ্যই পেশাদারিত্বের পর্যায়ে পড়েনা, আর এমন আচরণ অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য। পরিবর্তে, সবচেয়ে পেশাদার জিনিসটি হল, আপনার কাজকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নথিভুক্ত করা। আপনার অগ্রগতি এবং কাজের ফলাফল সম্পর্কে আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সহকর্মীদের নিয়মিত সবসময় আপডেট করুন। এটি আপনাকে এমন যে কেউ থেকে রক্ষা করতে পারে যারা প্রতিষ্ঠানে আপনার অবদানকে চ্যালেঞ্জ করে বা আপনার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আর একটি কাজ করা যেতে পারে, যে ব্যক্তি আপনার কাজের ক্রেডিট নিচেছ তাকে সবসময় ভুল তথ্য বা আংশিক তথ্য প্রদান করুন। তাতে সে এই তথ্যগুলি জানিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে সাময়িকভাবে ক্রেডিট নিতে পারলেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন জানতে পারবে যে তাকে ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য দেয়া হয়েছে, তখন সেই ক্রেডিট চোরের উপর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অবিশ্বাস ও অনাস্থা তৈরি হবে। পরবর্তিতে ক্রেডিট চোর হয়তো আপনার ক্রেডিট চুরি করতে চাইবেনা।
একইভাবে প্রতিশোধ নেবেন না
যখন একজন সহকর্মী আমাদের খারাপ দেখানোর চেষ্টা করে, তখন আমরা সেই ব্যক্তির প্রতি শত্রুতা পোষণ করতে পারি এবং প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করার কথা ভাবতে পারি। এটি একটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, তবে আপনার মেজাজ এবং পেশাদারিত্ব হারানো এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে আপনি যা করতে পারেন তা হল ভবিষ্যতে ব্যক্তিটিকে এইভাবে কাজ করা থেকে বিরত রাখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। ব্যক্তিগতভাবে গোপনে তাদের মুখোমুখি হওয়ার কথা বিবেচনা করুন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করুন কেন তারা এমন করেছে এবং করছে? এতে আপনি হয়তো সেই ব্যক্তির সাথে শান্তি স্থাপন করতে পারবেন না তবে এমনও হতে পারে যে, আপনি একটি নতুন বন্ধু এবং মিত্রও পেয়ে যেতে পারেন অথবা পরবর্তিতে তার পলিটিক্স থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।
নিজের জন্য কথা বলুন
সাহসী হওয়া এবং কথা বলা আপনার জন্য কঠিন হতে পারে তবে কখন এবং কীভাবে নিজের জন্য দাঁড়াতে হবে তা জানা একটি দুর্দান্ত দক্ষতা। আপনি বা আপনার পরিচিত কারো সাথে অন্যায় আচরণ করা হলে কথা বলার মাধ্যমে আপনার শক্তি প্রদর্শন করবেন। আমাদের সমাজে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে যে- বোবার কোন শত্রু নাই, কিন্তু কর্পোরেট জগতে এই প্রবাদ একদমই মূল্যহীন। মনে রাখবেন কর্মক্ষেত্রে আপনি নীরব থাকলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনি অফিস পলিটিক্সের বড় শিকারে পরিণত হচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও হবেন। তাই নীরবতা পালন না করে অবশ্যই প্রতিবাদ করবেন, আপনার সরব প্রতিবাদ পলিটিক্সকারীরা আপনাকে বারবার আক্রমণ করার প্রবণতা কমিয়ে দিবে।
বিশ্বস্ত সহকর্মী তৈরি করুন
অফিসে নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে সহকর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব, মিত্রতা এবং কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলা একটি উপায়। নেতিবাচক পলিটিক্সে জড়িত কারো বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠী জোট গঠন করা সেই ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে এবং তাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই সহকর্মীদের সাথে পেশাগত সম্পর্ক গড়ে তুলুন যারা আপনার মূল্যবোধ এবং কাজের নীতি ভাগ করে নিবে। এই মিত্ররা অফিস পলিটিক্সের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় বড় ধরনের সাহায্য করতে পারে। গাইডেন্স এবং সহায়তার জন্য একজন বিশ্বস্ত সহকর্মী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার চারপাশের লোকেদের সাথে আপনার শক্তিশালী, ইতিবাচক সম্পর্ক থাকলে কর্পোরেট পলিটিক্সের সাথে মোকাবিলা করা অনেক সহজ। তারা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মূল্যবান উপদেশ এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করতে পারে। বিশ্বস্ততা এবং বন্ধুত্ব আপনাকে পলিটিক্স থেকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। অফিস পলিটিক্সের খেলায়, আপনি এমনি একটি সাপোর্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করুন যে নেটওয়ার্ক দুঃসময়ে আপনার এবং জড়িতদের পাশে থাকে।
পেশাদারীত্ব বজায় রাখুন
কর্মক্ষেত্রে আপনার সহকর্মীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কর্পোরেট দুনিয়ায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে তার সাথে সবকিছু ওভারশেয়ার করার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম সমস্যা আছে। কারন কর্পোরেট দুনিয়ায় আপনার সহকর্মীরা বন্ধু হলেও তারা আপনার কম্পিটিটর, অন্তত যতদিন একই প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত থাকবেন। তাই তাদের কাছে নিজের সম্পর্কে অত্যাধিক তথ্য বা অতিগোপন তথ্য প্রদান করলে তা ভবিষ্যতে আপনার বিরুদ্ধেই ব্যবহার হতে পারে। আপনার কাছে একটি শক্ত কারণ না থাকলে, কর্মক্ষেত্রে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ কিন্তু পেশাদার অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা করুন। আপনার সহকর্মীদের সাথে আচরনের একটা লিমিট নির্ধারণ করা পরিষ্কার কাজের কাঠামো তৈরি করে। এটি আপনার সহকর্মীদের আপনার কাছ থেকে অবাঞ্ছিত সুবিধা নেওয়া থেকেও বাধা দিবে।
উন্মুক্ত যোগাযোগে নিযুক্ত হন
আপনি যদি কারও উদ্দেশ্য বা কর্ম সম্পর্কে অনিশ্চিত হন, তবে স্পষ্টতা পেতে এবং যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি দূর করার জন্য একটি ব্যক্তিগত কথোপকথন বিবেচনা করতে পারেন। নিশ্চিতভাবে অফিস পলিটিক্সে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে খোলামেলা এবং সম্মানজনকভাবে কথা বলুন। আপনার উদ্বেগ শেয়ার করুন এবং এর কারন খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বা কর্মক্ষেত্রে চাপ বাড়লে বা চাপ অব্যাহত থাকলে, প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ বা উচ্চ ব্যবস্থাপনাকে জড়িত করুন। তারা মধ্যস্থতা প্রদান করতে পারে, সমস্যাটি তদন্ত করতে পারে এবং প্রয়োজনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে। মূল কথা হলো দ্বন্দ্ব সমাধান করার চেষ্টা করুন।
আপনার সুস্থতার দিকে মনোযোগ দিন
নিজের যত্ন, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে আপনি নিজেকে অগ্রাধিকার দিন। কাজের চাপ আপনার শারিরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে দেবেন না। মনে রাখবেন যে অফিসের পলিটিক্স প্রায়শই অস্থায়ী হয় এবং যারা ক্ষতিকারক আচরণে জড়িত তারা দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে পারে না। শরীর ও মন ঠিক রেখে আপনার পেশাদারীত্ব বজায় রাখুন এবং লক্ষ্যগুলিতে ফোকাস করুন এবং স্মার্টলি অফিস পলিটিক্স মোকাবিলা করুন।
নিয়োগকারীদের যা করণীয়
বৈচিত্র্য এবং অন্যান্য বিনোদনের অন্তর্ভুক্তি
কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা এবং বিনোদনের অন্তর্ভুক্তি কেবল নৈতিকভাবেই নয়, এটা অফিস পলিটিক্স হ্রাস করার জন্য একটি কার্যকর কৌশলও। একটি বৈচিত্র্যময় পরিবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা কর্মচারীদের তাদের আরো উদ্দ্যমে কাজ করতে মোটিভেট করে। তাছাড়া এতে কর্মচারীদের পেশাদারীত্বের বন্ডিংকে শক্তিশালী করে। কর্মচারীরা নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা করার, একে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করার এবং একে অপরের অবদানের প্রশংসা করার পরিবেশ তৈরি করে। যে সংস্থাগুলি বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয় তারা অফিস পলিটিক্সের প্রভাব থেকে অনেকাংশেই মুক্ত হতে পারে।
কর্মচারী টার্নওভার হ্রাস
টার্নওভার কমাতে একটি প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয়ভাবে অফিস পলিটিক্স মোকাবেলা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রশিক্ষণ প্রদান, একটি স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং কর্মীদের তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার এবং সমাধান খুঁজে বের করার সুযোগ তৈরি করা, এগুলো মূলতঃ নিয়োগকারীর দায়ীত্বের মধ্যে পড়ে। কর্মক্ষমতার উপর অফিস পলিটিক্সের প্রভাব কমাতে কর্মক্ষমতা ব্যবস্থাপনা সিস্টেম চালু করা, নিয়মিত কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া অবজারবেশন করা এবং নেতৃত্বের প্রশিক্ষণের মতো ব্যবস্থাগুলি নিয়োগকর্তারা বাস্তবায়ন করতে পারেন। নিয়োগকর্তাদের উচিৎ এমন একটি কাজের পরিবেশ তৈরি করা যেখানে কর্মীরা চাকরি ছেড়ে না দিয়ে অফিস পলিটিক্সের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে।
পলিটিক্সের কারনে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব সমাধান
কর্মক্ষেত্রের সমস্যাগুলি পরিচালনার জন্য কর্মচারীদের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের কার্যকর সমাধান অতিগুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদানকারী ম্যানেজমেন্ট এই দ্বন্দ্ব নিরসনের দায়ীত্ব নিতে পারে তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই নিরপেক্ষ ভূমিকা অবলম্বন করতে হবে। দুইপক্ষকে সমান অধিকার বিবেচনা করে তাদেরকে দ্বন্দ্বের কারনে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির বিষয় তুলে ধরলে তারা দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য একমত হবে। এখানে উল্লেখ্য সমঝোতাকারীকে অবশ্যই উভয়পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
কর্মচারীদেরকে মোটিভেশন করা
নিয়োগকর্তারা সামগ্রিক কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং অন্যান্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলিতে কর্মীদের জড়িত করার মাধ্যমে "কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ" এই বিশ্বাস ও আস্থা প্রদান করতে পারে। কর্মচারীদের সম্মান, ন্যায্যতা এবং ম্যানেজমেন্টের সাথে সহজ যোগাযোগের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া যে কোনও প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নতিই বয়ে আনে। কারন কর্মচারীরা এতে মোটিভেটেড হয়, তারা নিজেদের সম্মানিত মনে করে, তাদের মনে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয়। একটি সুন্দর অফিস সংস্কৃতি উপহার দিলে কর্মচারীরাও এর প্রতিদান দিবে তাদের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে।
সঠিক লোকেদের পুরস্কৃত করুন
কর্মক্ষেত্রে দক্ষ ও যোগ্যদের পুরস্কৃত করুন। অদক্ষ, অযোগ্য অথচ আপনার উপর পলিটিক্স প্রয়োগ করে প্রিয় বা ফেবারিটকে তিরস্কৃত করুন। কর্মক্ষেত্রে ফেভারিট খেলা একটি বিপজ্জনক খেলা। যখন কর্মচারীরা মনে করেন যে তাদের যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও তাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে, তখন তাদের মনে এক ধরনের হীনমন্যতা তৈরি হয়। অফিস পলিটিক্সের মাধ্যমে ফেবারিট হওয়া কর্মীকে পুরস্কৃত করা হলে যোগ্য যে কোনো কর্মীরা মনে করে তারা অবজ্ঞার শিকার এবং প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টের বিচার বিবেচনাবোধ নিয়ে কর্মীরা সন্দেহ পোষণ করে। একটি পুরষ্কার কর্মচারীদের কাজের সীকৃতি প্রদান করে, তাদের মোটিভেট করে, আরো ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করে। এটি একটি দুর্দান্ত কৌশল কিন্তু ভুল কাউকে প্রদান করলে পুরস্কার প্রাপ্ত কর্মী ছাড়া বাকী সমস্ত কর্মচারীদের মনে রিঅ্যাকশন হয়ে যার ফলে কাজে উৎসাহ কমে যায়। তাই যাদের পুরস্কৃত করার ক্ষমতা প্রদান করা হবে তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে ব্যক্তিগত এজেন্ডা বা আবেগ তাদের বিচারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। ন্যায্যতার বোধ বজায় রাখার সময়, তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সঠিক কর্মী বাছাই করা ও অন্যান্য কর্মীদের মধ্যে মৌখিক প্রশংসা যতটা সম্ভব সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া তাতে সবাই খুশি ও সন্তুষ্ট থাকবে।
আপনার প্রতিষ্ঠানের গঠন মূল্যায়ন
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অফিস পলিটিক্স সম্পর্কে সচেতন নয়। ম্যানেজমেন্ট যদি অফিস পলিটিক্স নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ম্যানেজমেন্টের দায়ীত্বপ্রাপ্তদের বদলী করাই কাম্য। নতুন ম্যানেজমেন্ট এলে পরিচালনার পদ্ধতির পরিবর্তন হতে বাধ্য। প্রয়োজনে ম্যানেজমেন্টের সদস্যের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
অফিস পলিটিক্স চিনতে পারা
অফিস পলিটিক্স কিভাবে চিনতে হয় এবং পরিচালনা করতে হয় এটা শেখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও দক্ষ ম্যানেজিং প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলবে। সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, অফিস নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবে, গোপনে বা প্রকাশ্যে কর্মচারীদের প্রতিনিয়ত অবজারবেশন করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই সিলেক্ট করতে হবে কে বা কারা পলিটিক্সের মূল হোতা, কারা অন্যের কাজের ক্রেডিট চুরি করে নিজের বলে জাহির করে, কারা নিজের অদক্ষতাকে ঢেকে রেখে শুধুমাত্র তোষামোদি, চাটুবাক্য, তেলবাজি আর চামচামি দিয়ে ম্যানেজমেন্টের প্রিয় বনে যায়। আর অবশ্যই বুঝতে হবে কারা সবচেয়ে বিশ্বাসী, পরিশ্রমী, দক্ষ অথচ অফিস পলিটিক্সের কারনে প্রচারের আলো থেকে বারবার বঞ্চিত হয়েছে এবং হচ্ছে। এদেরকে যোগ্য সম্মান, সুযোগ সুবিধা দিন আর তোষামোদকারীকে, তেলবাজদের বিতাড়িত করুন অথবা পানিশমেন্ট দিন। অফিস পলিটিক্সকারীরা কখনোই প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারেনা। এই অফিস পলিটিক্স এমনভাবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে, যেকেউ সহজে বুঝতেও পারেনা। তাই গুরুত্বের সাথে পলিটিক্স হ্যান্ডেল করা জরুরী।
আইনি প্রভাব
অফিস পলিটিক্স যখন চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন এটা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তাই অফিস পলিটিক্সের আইনি দিক এবং প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কখন, কোথায় এবং কীভাবে আইনি পরামর্শ ব্যবস্থা নিতে হবে তা প্রতিষ্ঠানের কোড অব কনডাক্ট এবং ঐ দেশের লেবার কোড সমন্বয় করে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
উপসংহার
অফিস পলিটিক্সের ধ্বংসাত্মক দিকগুলি সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত যাতে তাদের নেতিবাচক প্রভাবগুলি হ্রাস করা যায়। অফিস পলিটিক্সে নেভিগেট করা পেশাগত জীবনের একটি চ্যালেঞ্জ এবং এটা সেলস বা প্রোডাকশনের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। এর বিভিন্ন রূপগুলিকে চেনা, জানা এবং এর পিছনের উদ্দেশ্যগুলি বোঝা আবশ্যিক। এর নেতিবাচক প্রভাবগুলিকে মোকাবেলা করা এবং একটি স্বাস্থ্যকর ও আরও উৎপাদনশীল কাজের পরিবেশ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে অফিস পলিটিক্সের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সহকর্মী সম্পর্কে জানা, যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করা, কম্পিটিটরের সাথে ট্রিকসগুলো ভালভাবে পরিচালনা করা, আপনার কাজকে প্রাসঙ্গিক করা, আপনার কাজের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করা এবং প্রকল্পগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জড়িত। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা যেন আমাদের অফিসের পলিটিক্স বুঝতে পারি এবং যেখানেই কাজ করি না কেন অফিস পলিটিক্সকে সফলভাবে নেভিগেট করার কৌশল তৈরি করি। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টও যেন অফিস পলিটিক্সের ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝতে পারে। অফিসে কৌশল প্রয়োগ ও উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কর্মচারীদেরকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে। এই লেখাতে বর্ণিত কৌশলগুলি অনুসরণ করার মাধ্যমে কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তা উভয়েই অফিস পলিটিক্সের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি কমাতে এবং স্বচ্ছতা, সহযোগিতা ও সাফল্যের কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করতে পারলেই এই লেখার স্বার্থকতা।
Feriwala এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
0 Comments