প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গীর প্রতি অধিকার
কাউকে খুব ভালোবাসলেই তার প্রতি অধিকার জন্মে? অধিকার জন্মালেও সেটা ঠিক কতটুকু? কাউকে ভালোবাসলেই অধিকার খাটানো যায় না, যদি না সেও ভালোবাসে। আপনি সঙ্গীর প্রতি কতটা অধিকার দেখাবেন সেটা ডিপেন্ড করে সঙ্গীর মনোভাবের উপর। সে আপনাকে কতটুকু অধিকার খাটাতে দেয় এটাই মূল বিষয়। আপনার প্রতি সঙ্গীর ভালোবাসা যতো গভীর, তার প্রতি অধিকার ততো বেশি। এক্ষেত্রে আপনি কতটুকু ভালোবাসেন এটা বিবেচ্য নয় সঙ্গী আপনাকে কতটুকু ভালোবাসে সেটার উপর অধিকার ডিপেন্ড করে। তাই কাউকে প্রচন্ড ভালোবাসলেই তার প্রতি অধিকার সৃষ্টি হয়না। প্রেমের সম্পর্কে অযাচিত অধিকার খাটানো এক ভয়ংকর রোগ। যার কারনে একটা প্রেমের মৃত্যুও ঘটতে পারে। বিষয়টি সহজভাবে উপস্থাপন করা যাকঃ
প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গীর প্রতি অধিকার | Image by NoName_13 from Pixabay |
সম্পর্ক শুরুর আগেই দুজনে একেঅপরের সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। এমন কিছু বিষয়ের সাথে কম্প্রোমাইজ করে সম্পর্কে জড়াবেন না যেগুলো পরবর্তীতে সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরাতে পারে। যেমন- আপনি নারী স্বাধীনতা সাপোর্ট করেননা, আপনার ভবিষ্যৎ সঙ্গী স্বাবলম্বী হবে বা নিজের পরিচয়ে পরিচিত হবে সেটা আপনি পছন্দ করেননা তাহলে কেন আপনি একজন কেরিয়ার সচেতন নারীর সাথে সম্পর্কে জড়াবেন? আপনি সাধারনত খুবই সহজ সরল ঝামেলামুক্ত জীবনযাপন করেন তাহলে কেন আপনি দর্জ্জাল টাইপের নারীর সাথে সম্পর্কে জড়াবেন? আপনি আধুনিকতায় বিশ্বাসী, স্ট্রেটকাট মাইন্ডেড তাহলে কেন আপনি কনজারভেটিভ মাইন্ডেড একজনের সাথে সম্পর্কে জড়াবেন? আপনি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন তাহলে কেন সংস্কৃতিমনা বা স্যোসাল মিডিয়া অ্যাকটিভ বা ডেস্পারেট টাইপের কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবেন? আরো অনেক উদাহরণ দেয়া যায় তাতে লেখা খুব বেশি হয়ে যাবে। আপনার রিলেশনের শুরুটাই যদি অসঙ্গতিপূর্ণ হয় এবং যদি দুজনের স্টাইলের অনেক কিছু ভবিষ্যতে বদলাতে না পারেন তাহলে ঐ রিলেশন টিকবেনা। তাই নিজের কিছু বৈশিষ্ট্যের পিন পয়েন্ট করুন যে কোনদিনই বদলাতে পারবেননা এবং সেই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কারো সাথে ম্যাচিং হলে তার সাথে সম্পর্কে জড়ান। এটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান।
সুস্থ সম্পর্কের জন্য সঙ্গীর প্রতি অধিকারগুলি
প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গীর প্রতি অধিকার বলতে একজনের অন্যের উপর কী ধরনের আশা বা দাবি থাকতে পারে, সেই বিষয়টি বোঝায়। সঙ্গীর প্রতি অধিকার একটি সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সঙ্গীর প্রতি সম্মান, বিশ্বাস, এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া নিশ্চিত করে। এই অধিকারগুলি সম্পর্কের সুস্থতা এবং দীর্ঘস্থায়ীত্বে জন্য অপরিহার্য। তবে এই সম্পর্কের অধিকার বিষয়টি একদম সরল নয়। কারণ প্রেম একটি জটিল এবং ব্যক্তিগত অনুভূতি, যেখানে সবার মতামত ভিন্ন হতে পারে। সঙ্গীর প্রতি প্রেমের সম্পর্কের সীমানা ও অধিকার একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে। তবে সাধারনত দৃষ্টিতে প্রেমের সম্পর্কে অধিকার নিম্নরূপ হতে পারে।
একটি প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গীর অধিকার সম্পর্কে নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ
সম্মানের অধিকার
প্রতিটি সঙ্গীর অধিকার রয়েছে একে অপরের প্রতি সম্মান পাওয়ার। এটি মতামত, ব্যক্তিগত সীমা, এবং স্বতন্ত্রতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণকে নির্দেশ করে। প্রত্যেক ব্যক্তিই সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে তাই একজন সঙ্গী হিসেবে উভয়েই একঅপরকে উপযুক্ত সম্মান করতে হবে। প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গীর প্রতি সম্মান ও অধিকার সঠিক ও উপযুক্তভাবে প্রদর্শন করলে সেই প্রেমে তিক্ততা সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা কমে যাবে।
বিশ্বাসের অধিকার
একটি সুস্থ প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গীদের মধ্যে একেঅপরের প্রতি বিশ্বাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকেরই অধিকার রয়েছে সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস এবং সেই বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য পাওয়ার। যে সম্পর্কে বিশ্বাস নেই সেই সম্পর্কের মধ্যে কোন গভীরতা নেই, সেটা একটা অসূস্খ সম্পর্ক।
সমান অংশীদারিত্বের অধিকার
সম্পর্কের যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমান ভূমিকা পালন করার অধিকার উভয় সঙ্গীরই আছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় মতামত এবং অনুভূতিকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা উচিত।
সমান দায়িত্বের অধিকার
সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয় সঙ্গীর সমান দায়িত্ব পালন করার অধিকার এবং কর্তব্য আছে। একতরফা দায়িত্বপালন সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার
প্রতিটি সঙ্গীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং নিজস্ব সত্তা বজায় রাখার অধিকার রয়েছে। সম্পর্কের মধ্যে থেকেও তারা তাদের নিজস্ব সময় এবং স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারে। আপনার সঙ্গীকে তার নিজের জীবন কিভাবে কাঁটাবে সে স্বাধীনতা দিন। কোনমতেই প্রেমের নামে অন্যের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া ঠিক নয়। প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের স্বাধীনতা থাকা উচিত। সম্পর্কের মধ্যে সঙ্গীর গোপনীয়তা ও স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা করা দায়ীত্বের মধ্যে পড়ে।
সহানুভূতি ও সমর্থনের অধিকার
প্রতিটি সঙ্গীর অধিকার আছে অপর পক্ষের কাছ থেকে সহানুভূতি, সহায়তা, এবং মানসিক সমর্থন পাওয়ার, বিশেষ করে কঠিন সময়ে।
স্বার্থের অধিকার
প্রেমের নামে নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া ঠিক নয়। একটি সম্পর্কে দুজনেরই স্বার্থ সমান গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কে স্বার্থের ব্যালেন্স ঠিক না থাকলে একেঅপরের প্রতি ভালোবাসা শোষনে রুপ নেয় এবং সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি করে।
যোগাযোগের অধিকার
উভয় পক্ষেরই অধিকার রয়েছে খোলামেলা এবং সুস্থ যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের অনুভূতি, চিন্তা, এবং উদ্বেগ প্রকাশ করার। সম্পর্কের মধ্যে পরিষ্কার এবং সৎ যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সঙ্গীর সাথে খোলামেলা যোগাযোগ রাখা আপনার দায়িত্ব।
সীমার অধিকার
প্রতিটি সঙ্গীরই তাদের নিজস্ব সীমা নির্ধারণ এবং সেই সীমা বজায় রাখার অধিকার রয়েছে। এটি শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক দিক থেকে সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। প্রেমের নামে সম্পর্কের সীমানা লঙ্ঘন করা ঠিক নয়। প্রতিটা প্রেমের সম্পর্কের সীমানা থাকে এবং প্রত্যেক ব্যক্তিরও নিজস্ব সীমা থাকে। সেই সীমা মান্য করা জরুরি।
প্রেমের সম্পর্কে এই অধিকারগুলি রক্ষা করা হলে সম্পর্কটি সুখী, সুস্থ, এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সুস্থ সম্পর্ক তৈরিতে সঙ্গীর প্রতি সমান অধিকার বজায় রাখলে সম্পর্কের ভিত শক্ত হয় এবং উভয় পক্ষই একে অপরের পাশে থেকে জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জের সাথে লড়ার সক্ষমতা লাভ করে।
প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গীর প্রতি কোন কোন অধিকার নেই?
প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গীর প্রতি কোন কোন অধিকার নেই, এই প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়শই আমরা ভুল ধারণা পোষণ করি যে, প্রেমের নামে আমরা অন্যের উপর যে কোনো ধরনের দাবি করতে পারি। কিন্তু প্রেম মানে কখনোই কারো উপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া নয়। প্রেমের সম্পর্কে কিছু অধিকার সঙ্গীর প্রতি থাকা উচিত নয়, কারণ সেগুলি সম্পর্কের স্বাধীনতা, সম্মান, এবং ব্যক্তিগত সীমার প্রতি হানিকর হতে পারে। এখানে কিছু এমন অধিকার উল্লেখ করা হলো, যা সঙ্গীর প্রতি থাকা উচিত নয়, আসুন সেগুলো একবার দেখে নেইঃ
সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার
সঙ্গীর জীবন, সিদ্ধান্ত, এবং আচরণের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করার কোনো অধিকার নেই। সম্পর্কের মধ্যে কোন একপক্ষের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্ককে দমনমূলক এবং অস্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে। একটি প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গীর নিয়ন্ত্রণ না করার অধিকার সম্পর্কটিকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রেম একটি সুন্দর অনুভূতি, যেখানে দুজন মানুষ পরস্পরকে সম্মান করে এবং স্বাধীনভাবে নিজেদের জীবন বাঁচে। তাই প্রেমের নামে কারো উপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া বা তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা কখনোই সঠিক নয়।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অধিকার
সঙ্গীর ব্যক্তিগত জীবন, ফোন, মেসেজ, ইমেল বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের উপর নজরদারি বা প্রবেশ করার অধিকার নেই। প্রত্যেকেরই নিজস্ব গোপনীয়তা বজায় রাখার অধিকার রয়েছে।
স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অধিকার
প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের স্বাধীনতা থাকা উচিত। প্রেমের নামে কারো স্বপ্ন, লক্ষ্য বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সম্পর্কে সঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধা ও স্বাধীনতার অধিকার না থাকলে সম্পর্ক কখনোই গভীর হবেনা তাই প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গীর ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষা করুন।
সঙ্গীকে বদলানোর অধিকার
সঙ্গীকে তার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব, আচরণ, বা জীবনধারা পরিবর্তন করতে বাধ্য করার অধিকার নেই। আমরা কাউকে নিজের মতো করে বানাতে পারি না। প্রত্যেক ব্যক্তিই অনন্য এবং তাদের নিজস্ব গুণাবগুণ রয়েছে। দোষ-গুণ জেনে বা বিচার বিশ্লেষণ করেই একেঅপরের প্রেমে পড়ে। তাই প্রেম সংগঠিত হওয়ার পরে সঙ্গীকে বদলাতে বাধ্য করার কোনমতেই উচিত নয়।
সঙ্গীর সামাজিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের অধিকার
সঙ্গীর বন্ধু, পরিবার, বা সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ বা সীমিত করার অধিকার নেই। প্রতিটি মানুষই তার নিজের সামাজিক এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখার স্বাধীনতা রাখে।
সঙ্গীর উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার
কোন বিষয়ে সঙ্গীর মতামতকে উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার নেই। উভয়ের মতামত এবং ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। প্রেম মানে দুজনের মধ্যে সমঝোতা করা। কারো উপর নিজের ইচ্ছা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া প্রেম নয়।
সঙ্গীকে দোষারোপ করার অধিকার
সম্পর্কের সমস্যা বা কোন নেতিবাচক ঘটনার জন্য সবসময় সঙ্গীকে দোষারোপ করার অধিকার নেই। সম্পর্কের যে কোনো সমস্যায় উভয়েরই কিছু দায়িত্ব থাকে, এবং তা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।
সঙ্গীকে বঞ্চিত করার অধিকার
সঙ্গীকে ভালোবাসা, যত্ন, বা মানসিক সমর্থন থেকে বঞ্চিত করার অধিকার নেই। প্রেমের সম্পর্কে এসব আবেগীয় সহায়তা অপরিহার্য।
অতিরিক্ত ঈর্ষা ও সন্দেহের অধিকার
সঙ্গীর প্রতিটি পদক্ষেপের উপর সন্দেহ করা এবং অতিরিক্ত ঈর্ষান্বিত হওয়ার কোনো অধিকার নেই। এটি সম্পর্কের বিশ্বাস এবং নিরাপত্তা নষ্ট করে।
সঙ্গীকে নিজের সম্পত্তি মনে করার অধিকার
প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বাধীন। কাউকে নিজের মালিকানা মনে করা ভুল। ভালোবাসি বলে সঙ্গীকে নিজের সম্পত্তি মনে করে তার সাথে যা ইচ্ছা তাই করা বা আচরণ করার কোন অধিকার নেই।
সঙ্গীকে অপমান বা নির্যাতন করার অধিকার
প্রেম মানে একেঅপরকে সম্মান করা। সঙ্গীর সাথে খারাপ ব্যবহার করা বা তাকে শারিরীক বা মানসিকভাবে নির্যাতন করা প্রেমের বিপরীত। এটি একটি অপরাধ এবং কোনভাবেই কাম্য নয়।
প্রেমের বিনিময়ে প্রতিদান দাবির অধিকার
প্রেমের নামে সঙ্গীর কাছ থেকে প্রতিদান বা ব্যক্তিগত সুবিধা দাবি করার অধিকার নেই। সত্যিকারের প্রেম বিনিময়মূলক নয়, এটি নিঃস্বার্থ এবং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। বিনিময় বা প্রতিদানের আশায় যে প্রেমের সম্পর্ক সেটা কোনমতেই আদর্শ প্রেমের সম্পর্ক নয়।
এই অধিকারগুলি না থাকার মাধ্যমে সম্পর্কটি সুস্থ, সম্মানজনক, এবং স্বাধীন থাকে। এটি উভয় সঙ্গীর জন্য একটি স্বতন্ত্র ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে তারা নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রেখে একে অপরকে ভালোবাসতে এবং সহায়তা করতে পারে।
একনজরে সঙ্গীর প্রতি অধিকারসমূহ
- যে কোন মূহুর্তে তার খোঁজ খবর নেয়ার অধিকার।
- সঙ্গী কোথায় যাচ্ছে, কখন কি করছে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় তার খোঁজ নেয়ার অধিকার।
- সে ঠিক মত খেয়েছে কিনা, কি খেয়েছে? না খেলে কেন খায়নি বা কেন খাবেনা? এইগুলো জানার অধিকার।
- অসুস্থ্য হলে ঠিক মতো ওষুধ খেয়েছে কিনা সেটা তদারকি করার অধিকার। ওষুধ না খেলে ভালোবাসা মিশিয়ে একটু ধমকের সুরে বকাঝকা করার অধিকার।
- একসাথে হাটতে হাটার অধিকার।
- মনের সব কথা নিঃদ্বিধায় বলার অধিকার।
- ভালোবাসার মানুষকে এক পলক দেখতে চাওয়ার অধিকার।
একনজরে সঙ্গীর প্রতি যে অধিকার নেই
- সঙ্গী অপছন্দের কোন কাজ করলে তার প্রতি রাগ দেখানো বা ধমকের সুরে কথা বলে পছন্দের কাজে বাধ্য করানোর অধিকার নেই।
- সঙ্গী কি পোশাক পড়বে, কার সাথে মিশবে, কার সাথে কথা বলবে, কোথায় যাবে, কেন যাবে, কার সাথে যাবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে চাপ প্রয়োগের অধিকার নেই।
- সঙ্গীর স্বাধীনচেতা মনোভাবে নিজের প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে পরাধীন বানানোর অধিকার নেই।
- সঙ্গী স্যোসাল মিডিয়া কমুউনিকেশনে সিক্রেট বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।
- সঙ্গীকে ভালোবাসি তাই তার নিজের বলে কিছু থাকতেই পারেনা তাই তার সমস্ত কিছুর ব্যাপারেই প্রভাব খাটানোর অধিকার নেই।
- প্রচন্ড জ্বর হলে তার মাথায় হাত রাখা বা তার কপাল স্পর্শ করে জ্বর দেখার অধিকার নেই।
- যেকোন উসিলায় অনুমোদিত সময়ে কল করা এবং অনুমতি ব্যতিরেকে সঙ্গীর বাড়ী চলে যাওয়ার অধিকার নেই।
- অনলাইনে কেন ছিলোনা বা সারাদিন কেন অনলাইনে, আমার চেয়ে গুরত্বপূর্ণ কেউ থাকতে পারেনা টাইপের কথা বলে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে কৈফিয়ত চাওয়ার অধিকার নেই।
- সঙ্গীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে স্পর্শ করার অধিকার নেই।
- সঙ্গীকে তার পরিবারের কেউ বকাবকি করেছে তাই সঙ্গীর পরিবারের সদস্যদের প্রতি ঘৃণাবাক্য, মেন্টাল সাপোর্টের নামে সঙ্গীর মনে বিষ ঢেলে পরিবারের সদস্যদের প্রতি বিতৃষ্ণ করার অধিকার নেই।
সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা এবং অধিকার কীভাবে বজায় রাখবেন?
সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা এবং অধিকার বজায় রাখা একটি সফল এবং সুস্থ সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী এবং আনন্দময় করে তোলে। সম্পর্কের পরামর্শ বা কিছু উপায় দেওয়া হলো, যা সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা এবং অধিকার বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারেঃ
সুস্থ যোগাযোগ বজায় রাখা
খোলামেলা এবং সৎভাবে একে অপরের সাথে কথা বলুন। আপনার অনুভূতি, চিন্তা, এবং উদ্বেগ সঙ্গীর সাথে ভাগ করুন। সমস্যা থাকলে তা গোপন না রেখে আলোচনা করুন।
সম্মান এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন
সঙ্গীর মতামত, সিদ্ধান্ত, এবং অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। তাকে ছোট করা বা অবহেলা করা থেকে বিরত থাকুন। সম্মানজনক আচরণ সম্পর্কের ভিত্তিকে শক্তিশালী করে। সম্পর্কের শ্রদ্ধাবোধ সমুন্নত রাখা অত্যন্ত জরুরী। পারস্পারিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ সম্পর্ককে আরও দৃঢ়, সুস্থ, এবং দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে। এটি সঙ্গীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, ভালোবাসা, এবং বোঝাপড়া বাড়ায়। যখন উভয় পক্ষই একে অপরকে সম্মান করে এবং শ্রদ্ধা করে, তখন সম্পর্কটি খোলামেলা, নির্ভরযোগ্য, এবং আনন্দময় হয়ে ওঠে।
সঙ্গীকে সময় দিন
সম্পর্কের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিন। ব্যস্ততার মাঝেও সঙ্গীর সাথে মানসম্পন্ন সময় কাটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একে অপরের প্রতি ভালোবাসা এবং যত্ন প্রদর্শনের একটি মাধ্যম।
ভালোবাসা প্রকাশ করুন
ভালোবাসা প্রকাশের জন্য ছোট ছোট ইঙ্গিত, যেমন ভালো কথা বলা, আদর করা, এবং সঙ্গীর প্রয়োজনের প্রতি যত্নশীল হওয়া খুবই জরুরি। ছোট ছোট ভালোবাসার প্রদর্শন সম্পর্ককে প্রাণবন্ত রাখে।
সীমার মধ্যে থাকুন
সঙ্গীর ব্যক্তিগত সীমানা এবং গোপনীয়তা বজায় রাখুন। সম্পর্কের মধ্যে উভয়েরই কিছু নিজস্ব সময় এবং স্থান প্রয়োজন। সঙ্গীর সীমাকে সম্মান করে চলা সম্পর্কের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
একসঙ্গে কাজ করুন
সঙ্গীর সাথে একত্রে কিছু পরিকল্পনা করুন বা লক্ষ্য স্থির করুন। একসঙ্গে কাজ করা, যেমন একটি প্রকল্প বা ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, সম্পর্কের মধ্যে দলীয় ভাবনা এবং সমন্বয় বাড়ায়।
আস্থা এবং বিশ্বাস বজায় রাখুন
সঙ্গীর প্রতি আস্থা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কের ভিত মজবুত রাখতে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস বজায় রাখা প্রয়োজন। সন্দেহ বা অবিশ্বাস সম্পর্ককে দুর্বল করে দিতে পারে।
ক্ষমা এবং সহনশীলতা
সম্পর্কের মধ্যে ভুল-ত্রুটি হওয়া স্বাভাবিক। সঙ্গীর ভুল মেনে নিয়ে তাকে ক্ষমা করার মানসিকতা রাখা উচিত। সহনশীলতা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
নিজের যত্ন নিন
নিজেকে ভালোবাসা এবং নিজের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। আপনি যদি নিজেকে ভালোবাসেন, তবে সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসাও বেশি পূর্ণাঙ্গ হবে।
আনন্দ ভাগাভাগি করুন
একসঙ্গে আনন্দের মুহূর্ত কাটান। ভ্রমণ, সিনেমা দেখা, বা একটি নতুন কিছু চেষ্টা করার মাধ্যমে সম্পর্কের মধ্যে মজার এবং সুখের মুহূর্ত তৈরি করুন।
স্যাকরিফাইজ করুন
সম্পর্কের উন্নয়নে দুজনেই কিছু ছাড় দিন। দুজনেরই দুজনের প্রতি কিছু অপছন্দের বিষয় আছে সেগুলো ত্যাগ করুন অথবা সহজভাবে মেনে নিন। এই বিষয়টা অবশ্যই দুজনের আলোচনা সাপেক্ষে হতে হবে, কারন একতরফাভাবে মেনে নিলে প্রমান হবে সঙ্গীর প্রতি দূর্বলতা আপনার বেশি। আর প্রেমের সম্পর্কে যার দূর্বলতা বেশি তার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায়ীত্বও বেশি এমনকি ঝামেলাও বেশি।
সঙ্গীর মন বুঝার চেষ্টা করুন
প্রেমে সাধারন কিছু অধিকার যা প্রেমকে আরো রসময় করে। এই অধিকারগুলো সঙ্গী মুখে কখনো বলবেনা তবে আপনার বুঝে নিতে হবে। সঙ্গীও মনেমনে চায় তার প্রতি এই অধিকারগুলো প্রয়োগ করুন। আপনি সঙ্গীর অপ্রকাশিত অধিকারগুলো প্রয়োগ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সঙ্গীর মন ভালোভাবে বুঝতে হবে নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে।
ট্রিকস্ অ্যাপ্লাই করুন
দুজনের প্রতি দুজনের ভালোবাসা সাধারনত সমান হয়না, যে বেশি ভালোবাসে তার প্রতি অধিকার বেশি খাটানো যায় তাই চেষ্টা, ট্রিকস অ্যাপ্লাই করুন যাতে সঙ্গী আপনার তুলনায় বেশি ভালোবাসে, তাহলে অধিকারও বেশি দেখাতে পারবেন।
সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা এবং অধিকার বজায় রাখা একটি দায়িত্ব, যা সম্মান, আস্থা, এবং বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই উপায়গুলো অনুসরণ করলে সম্পর্ককে সুস্থ, সুখী, এবং দীর্ঘস্থায়ী রাখা সম্ভব।
উপসংহার
জীবনটা সিনেমা নয়! সিনেমাতে দেখা যায় বাবা তার মেয়েকে আটকে রাখে আর প্রেমিক ছাড়িয়ে আনতে যায়। প্রেমিকাকে মুক্ত করে দেয়। এখানে বাবার অধিকার আছে মেয়েকে শাসন কিন্তু প্রেমিক বেচারা কোন খেতের মুলা, সে কোন অধিকারে প্রেমিকাকে মুক্ত করতে যায়? আসলে সঙ্গী যতটুকু অ্যালাও করে ঠিক ততটুকুই অধিকার। প্রেমের গভীরতা বেশি হলে সিনেমার মতো করেও অধিকার দেখানো যায়। সেক্ষেত্রে সঙ্গী নিজেই আপনাকে সমস্তকিছুর অধিকার দিবে। তাই প্রেমের গভীরতা বাড়ালে সব অধিকার অটোমেটিক পাওয়া যাবে। প্রেমের গভীরতা বাড়াতে কাউন্সেলিং, নতুন নতুন ট্রিকস ইত্যাদি করা জরুরী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো আপনার চিন্তাধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাউকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিন, তাহলে অধীকার নিয়ে সমস্যা কম হবে। আমার মতে একটি আদর্শ ও সুস্থ প্রেমের সম্পর্ক এমন হওয়া উচিৎ যেখানে দুজন দুজনের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে সাহায্য করবে, পছন্দকে মূল্যায়ন করবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করবে। এটাই হলো একটি সম্পর্কের গোপন কথা। প্রেমের সম্পর্কে সঙ্গীর প্রতি অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকলে সেই প্রেমে বিচ্ছেদে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা কম।
** লেখাটি প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে, কেউ ভুল করে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না। দাম্পত্য জীবন নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে ধর্মীয় নীতিমালা বা অনুশাসন আছে। অজ্ঞানতাবশতঃ আমার লেখার সাথে ধর্মীয় নীতিমালা সাংঘর্শিক হতে পারে তাই এই লেখাটিকে শতভাগ প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লিখিত হিসেবেই বিবেচনা করবেন।
Feriwala এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
0 Comments