পরিবারে নিজের মূল্যায়ন
⚠ দূর্বল হৃদয়ের মানুষ বা শারিরীক ও মানসিকভাবে অসূস্থ্য মানুষ দয়া করে এই এক্সপেরিমেন্টটি করবেন না!
পরিবারে নিজের মূল্যায়নঃ সাইকোলজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট! | Photo by: ezgif.com |
পরিবারে নিজের মূল্যায়ন ও অবস্থান খুব সহজে মানুষ বুঝতে পারেনা। আমরা অনেক সময়ই কাছের বা পরিচিত মানুষের কাছে নিজের মূল্যায়ন বা অবস্থান খুঁজতে চেষ্টা করি কিন্তু সঠিক কোন সমাধান খুঁজে পাইনা। আমাকে লোকে, পরিবারের সদস্যরা, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন, আত্মীয়স্বজনরা কতটা ভালোবাসে বা আদৌ ভালোবাসে কিনা সেটার পরিমান উপলব্ধি করতে পারিনা। অনেক সময় নিজেকে অন্যের সাথে কম্পেয়ার করে থাকি, এক্ষেত্রে নিজেকেই বেস্ট হিসেবে ভেবে থাকি কিন্তু সত্যিকারের অবস্থান বুঝতে পারিনা। আমাদের মানসিক মূল্যায়ন, পরিবারে ভূমিকা, সম্পর্কের মূল্যায়ন, স্ব-মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলি সঠিকভাবে অনুভব করতে পারিনা।
আজ একটা এক্সপেরিমেন্টের কথা বলবো যা আপনাকে ফিল করাবে অন্যের কাছে আপনার পারিবারিক মূল্যায়ন কতটুকু? আপনার মানসিকতা ও পরিবার এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্কটার দৃঢ়তা কতটুকু এবং পরিবার ও সমাজের অন্যান্য মানুষগুলি আপনাকে কতটুকু ভালোবাসে বা ঘৃণা করে, এই এক্সপেরিমেন্ট আপনাকে উক্ত জটিল বিষয়গুলি জানতে সাহায্য করবে। এই এক্সপেরিমেন্ট করতে আপনি হয়তো আবেগে কাঁদতে পারেন, অনেক কষ্টও পাবেন আবাার অনেক সুখীও হতে পারেন। এক্সপেরিমেন্টগুলি করার পর আপনি হিউম্যান বিহেভিয়ার সম্পর্কে বড় ধারনা পাবেন। আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন কে আপন, কে পর, কে একটু বেশি আপন, কে আপনার শত্রু? যার সাথে নিজেকে হরহামেশাই কম্পেয়ার করেন তারও মূলায়ন কতটুকু বুঝতে পারবেন। মনোবিজ্ঞানীদের পরামর্শ মোতাবেক এক্সপেরিমেন্ট চলাকালীন সময়ে আবেগে কাঁদবেন না, শেষ হয়ে গেলে পরে কাঁদবেন বা হাসবেন। এই সাইকোলজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট করলে আপনার জীবনে নতুন এক অভীজ্ঞতা লাভ হবে। হয়তো আপনার জীবনে পরিবর্তন আসবে, নতুন করে অনেককেই চিনতে পারবেন, অনেক ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। পরবর্তিতে পরিস্থিতির বিচারে অনেক ডিসিশন খুব সহজেই নিতে পারবেন। আপনি ডিসিশনহীনতায় ভুগলে এই এক্সিপেরিমেন্ট অনেক সাহায্য করবে, আপনার মনোবল বাড়াবে। এই সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা আপনার মনকে সঠিক পথের হদিশ দিবে। পরিবারে সম্পর্ক ও সম্পর্কের সমস্যা সমাধান সহ অন্যান্য বিষয়ে এই এক্সপেরিমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই এই সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা করে পরিবারে নিজের মূল্যায়ন যাচাই করুন, নিজের পরিবার বুঝুন ও পরিবারে সমস্যা চিহ্নিত করুন।
পরিবারে নিজের মূল্যায়ন জানার উপায়
সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা – ১
এই এক্সপেরিমেন্টটি পরিবারে ও সমাজে নিজের মূল্যায়ন জানার জন্য।
নিঃসঙ্গ কোন এক সময়ে আপনার চিন্তাশক্তিকে বাঁধা প্রদান করতে পারে এমন কিছু থেকে দূরে থেকে ঘরকে অন্ধকার করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ুন। এবার গভীর ভাবে ভাবুন আপনি মৃত! আপনার মৃতদেহের চারপাশে প্রিয়জনেরা আহাজারি করছে। আপনার পরিবারের সদস্যবৃন্দ, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রেমিক, প্রতিবেশী, শত্রুর মনে আপনার মনকে নিয়ে যান। আপনার মৃতদেহটাকে তাদের দৃষ্টিতে দেখুন ও তাদের মনোভাব উপলব্ধি করুন। তাদেরকে ভিজুয়ালাইজেশন করুন, প্রত্যেকের আহাজারি অবজারবেশন করুন, তারা কি করছে দেখুন, তাদের মনের ভিতর ঢুকে যান। আপনার প্রতি তাদের কষ্টের বহিঃপ্রকাশ কেমন, গভীরতা কেমন, আপনাকে কতটুকু মিস করছে ফিল করার চেষ্টা করুন। এভাবে এক এক করে ফিল করতেই থাকুন। অবজারবেশন শেষ হয়ে গেলে থামুন।
পুনরায় একই ভাবে আপনি নিজেকে মৃত্যুর একমাস পরের অবস্থানে নিয়ে যান। এবার মৃত আপনাকে নিয়ে পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ অন্যান্যদের অবজারবেশন করুন, তাদের মনোভাব বা ফিলিংস ফিল করার চেষ্টা করুন।
পুনরায় আপনি নিজেকে মৃত্যুর এক বছর পরের অবস্থানে নিয়ে যান। পূর্বের মতো পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ অন্যান্যদের এক এক করে অবজারবেশন করুন এবং তাদের মনোভাব বা ফিলিংস ফিল করার চেষ্টা করুন। এবার তিন ধাপের সমস্ত তথ্য মনের মধ্যে রেকর্ড করুন। আপনার এক্সপেরিমেন্ট শেষ হয়েছে। এখন কান্নাকাটি করতে ইচ্ছা করলে কিছুক্ষণ কাঁদুন। এবার রেস্ট নিয়ে রেজাল্ট ক্যালকুলেশন করুন।
রেজাল্ট নিয়ে আর কিছু বলার নেই কারন আপনি ইতিমধ্যে ফিল করেছেন আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসার পরিমান, আপনার প্রতি তাদের মূল্যায়ন কতটুকু। আপনি ফিল করতে পেরেছেন আপনাকে কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, কে ঘৃণা করে, আপনার অভাব কাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে? এবার রেজাল্ট মোতাবেক জীবনের পরবর্তি ডিসিশন নিন। আপনার ডিসিশন যাইহোক না কেন ডিসিশনটা আপনার পরবর্তি জীবনে মানসিক কষ্টের কারন হবেনা। এখানে উল্লেখ্য আপনি ইচ্ছে করলে নির্দিষ্ট কারো কাছে আপনার মূল্যায়ন কি জানতে শুধু তাকে নিয়েও এই অবজারবেশন করতে পারেন।
সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা – ২
এই এক্সপেরিমেন্টটি নির্দিষ্ট কারো সাথে নিজের মূল্যায়ন কম্পেয়ার করার জন্য।
খুব আপন বা কাছের কারো সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করতে যার সাথে কম্পেয়ার করতে চান তাকে মৃত কল্পনা করে পূর্বের এক্সপেরিমেন্টের মতো অবজারবেশন করুন। আপনার পূর্বের এক্সপেরিমেন্টের রেজাল্টের সাথে নতুন যার সাথে কম্পেয়ার করেছেন তার রেজাল্টের কম্পেয়ার করুন, দেখুন সবার কাছে কার মূল্যায়ন কতটা। এতে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন কার মূল্যায়ন বেশি, আপনার নাকি তার? উল্লেখ্য, কারো সাথে নিজের মূল্যায়ন কম্পেয়ার করার জন্য সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা ১ এবং ২ এই দুটো পরীক্ষাই করতে হবে।
সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা – ৩
এই এক্সপেরিমেন্টটি আপনার কাছে নির্দিষ্ট কারো মূল্যায়ন কতটুকু তা জানার জন্য।
আপনি নিজে কাউকে কতটুকু ফিল করেন বা কতটুকু মূল্যায়ন করেন, কাকে বেশি ভালোবাসেন, আপনার জীবনে কারো প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব কতটুকু সেটা জানতে তাকে মৃত ভেবে অনুরূপ কল্পনা করুন এবং সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা – ১ এর নিয়ম অনুযায়ী তিন ধাপে অবজারবেশন করুন। যদিও আপন কাউকে মৃত কল্পনা করা অনেক কষ্টের তবুও একবার করতে পারলে ঐ মানুষটার প্রতি আপনার ভালোবাসা বেড়ে যেতে পারে বা ঐ মানুষটার মূল্যায়ন বা প্রয়োজন বা গুরুত্ব আপনার জীবনে ঠিক কতটুকু সেটা বুঝতে পারবেন। আবার এমনও হতে পারে ঐ মানুষটার প্রতি তীব্র ঘৃণাবোধের জন্ম নিতে পারে এবং সে আপনার জীবন থেকে ছিটকেও যেতে পারে। যাইহোক, এই এক্সপেরিমেন্টটি আপনাকে সঠিক মানুষ চিনতে বা বাছাই করতে সাহায্য করবে।
সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা – ৪
এই এক্সপেরিমেন্টটি আপনার ও আপনার জীবনসঙ্গীর ভালোবাসার গভীরতা ফিল করাবে।
সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা – ১ অনুযায়ী নিজেকে মৃত ভেবে এক্সপেরিমেন্ট করার পর, সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা – ৩ মোতাবেক ভালোবাসার মানুষ বা জীবনসঙ্গীকে মৃত ভেবে এক্সিপেরিমেন্ট করুন। এতে আপনার জীবনে ভালোবাসার মানুষ বা জীবনসঙ্গীর গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আপনার প্রতি ভালোবাসার গভীরতা এবং তার প্রতিও আপনার ভালোবাসার গভীরতা ফিল করতে পারবেন। তবে এটা করলে একটা রিস্ক থেকে যায় সেটা হলো আপাতদৃষ্টিতে দেখা, ভালো ও গভীর প্রেমের সম্পর্ক বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিনষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে কারন এক্সিপেরিমেন্টে আপনি নতুন কিছু ফিল করবেন যা হয়তো একদমই আশ্চর্যজনক বা অবিশ্বাস্য কিছু এবং সেটাই আপনার মনের গভীরের সত্যিকার প্রতিবিম্ব। আপনার অবজারবেশন ইতিবাচক হলে আপনার ভালোবাসার মানুষ বা জীবনসঙ্গীর প্রতি আবেগ ভালোবাসা বেড়ে যেতে পারে, আর নেতিবাচক হলে ভালোবাস যেটুকু ছিলো সেটুকুও নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। তাই এই এক্সিপেরিমেন্ট নিজ দায়ীত্বে করবেন এবং শুধুমাত্র সেরকম সিচুয়েশন তৈরি হলেই করবেন, কোন মতেই জাস্ট কিউরিসিটির জন্য করতে নিরুৎসাহিত করছি।
⚠ সাবধানতা
উপরোক্ত ৪ (চার) ধরনের সাইকো্লজিক্যাল পরীক্ষাগুলোর মধ্যে থেকে যেটা আপনার প্রয়োজন শুধু সেটাই করার জন্য সমর্থন করছি। কোন স্পেসিফিক কারন ছাড়া বা অযথা এই এক্সিপেরিমেন্টগুলো করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছি। কারন এই এক্সপেরিমেন্টের পর আপনার আশেপাশের মানুষ সম্পর্কে চলমান ধারনাগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যাবে এটা ১০০% সিউর, সেক্ষেত্রে পরবর্তিতে সম্পর্কটা অত্যন্ত মধুর হয়ে যেতে পারে আবার আগের চেয়েও জটিলতা বাড়তে পারে এমনকি সম্পর্কের মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই অপ্রয়োজনে, অযথা এই এক্সপেরিমেন্টগুলি করবেননা। সেইসাথে যারা দূর্বল হৃদয়ের মানুষ বা শারিরীক ও মানসিকভাবে অসূস্থ্য তারা দয়া করে এই এক্সপেরিমেন্টটি করবেন না!
* অবশ্যই এক্সপেরিমেন্টগুলি নিজ দায়ীত্বে করবেন, এক্সপেরিমেন্টজনিত কারনে সৃষ্ট কোন দূর্ঘটনার দায় আমার নয়!
উপসংহার
উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে শুধুমাত্র আপনার চিন্তাশক্তি বা কল্পনাশক্তিকে ব্যবহার করে জীবনের অনেক জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন যা দিনরাত টেনশন করে, দিক্বিদিক ঘুরেও সমাধানের পথ খুঁজে পাবেন না। এই পদ্ধতিটা সরাসরি আপনার অবচেতন মনের ভিতরকার ফিলিংস আপনার সচেতন মনে প্রতিফলিত করবে তাই রেজাল্টের সত্যতা প্রশ্নাতীত। উপরোক্ত এক্সিপেরিমেন্টের রেজাল্ট বিবেচনা করে নিজের জীবন নতুন করে সাজান, এতে কেউ হয়তো আপনার জীবনে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে আবার কেউ হয়তো আপনার জীবন থেকে ছিটকে যাবে। তবে যাই ঘটুক না কেন দেখবেন ডিসিশন নেয়ার পর মনে তেমন কোন ইফেক্ট পড়বেনা, কারন এক্সপেরিমেন্টের পর আপনি একদম সঠিক ডিসিশনই নিবেন। এই এক্সপেরিমেন্টের আরো অনেক ব্যবহারিক প্রয়োগ আছে, পরবর্তি কোন পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করবো। পরিশেষে, সাইকোলজিক্যাল এক্সপেরিমেন্টটি আপনার লাইফস্টাইলকে পাল্টে দেবার ক্ষমতা রাখে।
Feriwala এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
0 Comments