Feriwala - Inspiring Heart and Lives

Header Ads Widget

প্রেমের ব্যর্থতাঃ হতাশার মধ্যেও আশা খুঁজে বের করুন

প্রেমের ব্যর্থতা

আমরা হাজারো প্রেমের কাহিনী জানি যে প্রেমে বিচ্ছেদ নামক এক কষ্টের তীব্রতার মাধ্যমে জীবন নিঃশেষ হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্যোসাল মিডিয়াতে প্রেমের স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় অধিকাংশ প্রেমের সম্পর্ক বিচ্ছেদে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। ভালোবাসা বা  প্রেমের সম্পর্কগুলো খুব কমই পরিণতি পায়। আজকের আলোচনায় প্রেমের সম্পর্কের সমস্যাগুলি ও সম্পর্ক কেন ব্যর্থতায় রূপ নেয় সেই গোপন তত্ত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।

হতাশার মধ্যেও আশা
হতাশার মধ্যেও আশা। Photo by manu mangalassery, pexels.com



প্রেমের সম্পর্ক কেন ব্যর্থতায় রূপ নেয়?

কেউ হারিয়ে গেলে তাকে ফিরে পাওয়া সহজ। কিন্তু কেউ বদলে গেলে তাকে ফিরে পাওয়া অসম্ভব না হলেও অনেক কঠিন। তাই বদলে যাওয়ার আগেই কেন বদলে যাচ্ছে সেটার কারন অনুসন্ধান করুন। কেউ বদলে গেলে এর ব্যর্থতার দায় কিন্তু আপনারই। হয় আপনি তাকে বুঝতে পারেননি বা বুঝতে পারলেও সঠিকভাবে মোটিভেশন করেননি, তাকে গুরুত্ব দেননি, সম্মান দেননি, সময় দেননি, উপেক্ষা করেছেন, অবহেলা করেছেন, অপমান করেছেন, প্রতারণা করেছেন, বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন, তার বেসিক চাহিদা পুরণ করেননি। সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনি হয়তো তাকে ভালোবাসেননি অথবা ভালোবাসা বুঝাতেই পারেননি। আপনার ব্যর্থতার কারনেই আপনার সঙ্গীর মনের পরিবর্তন, আর এই পরিবর্তনের কারনেই সঙ্গীকে হারিয়ে ফেলা। সে বদলে গেছে, আপনাকে ছেড়ে বেটার অপশন বেছে নিয়েছে, কি দোষ ছিলো আমার টাইপের কথাগুলো হলো খুবই অবান্তর কথা। এই কথাগুলো বলে নিজের ব্যর্থতার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে একটু স্বান্তনা পাবার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। সঙ্গীর মন যদি আপনি বুঝতেই পারতেন, তাকে বা তার মনের নিয়ন্ত্রণ থাকতো আপনারই হাতে, তাহলে সে কখনোই আপনাকে ছেড়ে যাবার চিন্তা করতোনা, এমনকি পৃথিবীর কোন কিছুর বিনিময়েই নয়। ভালোবাসার শক্তি কতটা সেটা বুঝার জন্য যে লেভেলে যেতে হয় আপনি সেই লেভেলে পৌছাতেই পারেননি। এই কারনেই সঙ্গীকে হারিয়ে ফেলেছেন এবং তার উপর সমস্ত দায় চাপিয়ে, নিজে কষ্টের সাগরে হাবুডুবু খেয়ে জীবনের অনেক ক্ষতিও করেছেন। আপনি হয়তো হাজারো প্রেমের কবিতা লিখেছেন, সারাক্ষণ সঙ্গীর ভাবনায় দিন কাটান, আবেগে প্রেমের গান সুরে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন, এতোকিছুর পরেও আমি বলবো আপনি প্রেমের অর্থই শিখেননি। প্রেম শুধু নিজে আবেগে ভেসে যাওয়া নয়, নিজে সুখ পাওয়া নয়। সঙ্গীকেও আবেগে ভাসাতে হবে, সঙ্গীর সুখের চিন্তাও করতে হবে দুজন দুজনের দায়ীত্ব নিলে তবেই সেটা আদর্শ প্রেম। প্রেম মানে প্রেমিক/প্রেমিকা হারানো নয়, আত্মবিশ্বাস হারানো নয়, একাকিত্ব আর মন খারাপ নয়। প্রেম মানে নতুন শুরু, সামনের দিকে তাকানো, দুজনের জীবন সামনে এগিয়ে নেওয়া, প্রেম মানে নতুন জীবন দর্শন, আশা ও অনুপ্রেরণা


প্রেমের সম্পর্কে ব্যর্থতায় দায় কার?

ভালোবাসা হারানোর সমস্ত দায় আপনারই, আপনি নিজেই ভালোবাসা কি এটা বুঝেননি। প্রতিটা প্রেমিকের তার সঙ্গীর প্রতি কিছু চাহিদা থাকে। সাধারন কথাবার্তা, প্রশংসামূলক বাক্য, সাপোর্ট করা, মোটিভেট করা, মজার মজার কথা বলে আনন্দ দেওয়া, তার যেকোন কথা বা কাজে সমর্থন করা, তাকে স্বপ্ন দেখানো ও তার স্বপ্নপূরনে সাহায্য ও সাহস যোগানো। এছাড়াও মন খারাপ হলে মেন্টাল সাপোর্ট, ভালো শ্রোতা হওয়া, তার কাজে সাহায্য করা, মতের মিল না হলে তর্ক না করে তাকে বুঝিয়ে আপনার মতানুযায়ী বাধ্য করা, ভুল করলে তাকে পার্সোনালি দোষারোপ না করে যৌথভাবে নিজেদের দোষারোপ করা। তারমানে সঙ্গীর কর্তৃক করা ভুলগুলোকে তোমার ভুল না বলে আমাদের ভুল বলাটা অনেক কার্যকর। সঙ্গীকে তার পছন্দের উপহার প্রদান, তার চাহিদামত সময় দেওয়া, তার চাহিদামত শারীরিক স্পর্শ ইত্যাদি এগুলোই হলো বেসিক চাহিদা। এরমধ্যে সঙ্গীর কোন কোন বিষয়ে চাহিদা সেটা বুঝে নিয়ে সেটা পূরন করলে সঙ্গী আপনার একান্তই বাধ্য হয়ে থাকবে আজীবন। আপনার ভালোবাসার উদ্দেশ্য হতে হবে শুধুমাত্র সঙ্গীর মন বুঝে তার চাহিদা পুরন করা। সঙ্গীর চাহিদা বুঝে, মন বুঝে পুরন করতে পারলে আপনার সঙ্গী আপনাকে ছেড়ে কোনদিনই যাবেনা। আর আপনার সঙ্গী যদি আপনার মন বুঝে আপনার চাহিদা পুরন না করে তাহলে সঙ্গী নয় আপনি নিজেই একসময় তাকে ছেড়ে যাবেন। 


একটি সম্পর্কের মূল বিপত্তি এখানেই- আপনি সঙ্গীর মন বুঝে তার সব চাহিদা পুরন করলেন কিন্তু সঙ্গী আপনার চাহিদা পুরন করলোনা সেক্ষেত্রে আপনি একসময় বিরক্ত হয়ে যাবেন বিনিময় প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষায়। যার ফলে আপনি একসময় সঙ্গীকে ত্যাগ করতে চাইবেন, একই কারনে আপনার সঙ্গীও আপনাকে ত্যাগ করতে পারে। তখন কমন ডায়লগ- এতো ভালোবাসলাম তবু সে চলে গেলো। এটা শুধু প্রেমের সম্পর্কেই ঘটেনা, বৈবাহিক সম্পর্কেও হরহামেশাই ঘটে তাই এতো ডিভোর্সের ঘটনা। আসলে কেউই সম্পর্ক খারাপ কেন হলো তার পিন পয়েন্ট করতে পারেনা তাই এমন ঘটনা ঘটে। একটি সুন্দর সম্পর্কের মাঝে বিচ্ছেদ ব্যক্তির মানসিক সুস্থতা ধংস করে। ভালোবাসার মানুষকে হারানো কতটা যন্ত্রণাময় এটা যারা হারিয়েছেন তারা জানেন। তাই মনের শক্তি বাড়িয়ে ভঙ্গুর বা ভগ্নপ্রায় সম্পর্কের উন্নতি করার চেষ্টা করুন।      



প্রেমের সম্পর্কে ব্যর্থতা থেকে মুক্তির উপায়?

উপরোক্ত আলোচনায় আশা করি বুঝতে পেরেছেন শুধু রোমান্টিক প্রেমের কথা বা প্রেমের চিঠি বা প্রেমিকের জন্য কান্নাকাটি করে ব্যর্থতা ঠেকানো যায়না। প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে কিছু টেকনিক প্রয়োগ করতে হয়। দুজনে দুজনার চাহিদাগুলো প্রকাশ করুন এবং একেঅপরের চাহিদা পুরনে সচেষ্ট হোন। প্রতিটা মানুষই সতন্ত্র, তার চিন্তা-ভাবনা, পছন্দও আলাদা। তাই আপনি তাকে ভালোবাসেন বলেই আপনার মতো করে তাকে পরিবর্তন করবেন অথচ আপনি নিজে তার মতো করে পরিবর্তিত হবেন না এটা তো হতে পারেনা। এমন আচরণ করলে নিজেদের মধ্যে শুধু দূরত্ব বাড়বেই। দুজন দুজনকে খুশি করার, সুখি করার দায়ীত্ব নিন সবকিছুই সমাধান হয়ে যাবে। একেঅপরে মন বুঝে তার মনের চাহিদাগুলো পুরন করুন তাহলে সম্পর্কের মাঝে কোন ঝামেলার সৃষ্টি হবেনা। তবে এটাও সত্যি যে সঙ্গীর মন বুঝা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। মানুষ তার মনের অনেক কিছুই প্রকাশ করেনা, গোপন রাখে। মানুষ চায় সঙ্গী তার মনের চাওয়া নিজে থেকে বুঝে নিক। মানুষের মন বুঝতে সবাই পারেনা, এই সক্ষমতাকে একরকমের সুপার পাওয়ার বলা যায়। অন্যের মন বুঝতে চাইলে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করতে হয়, অনেক অভীজ্ঞতা অর্জন করতে হয় এবং অবশ্যই অনেক চেষ্টা করতে হয়। আপনি যেকোন উপায়ে সঙ্গীর চাওয়া বা ইচ্ছাগুলো জেনে নিয়ে সেগুলো পূরণ করতে চেষ্টা করুন, সেও একইভাবে আপনার চাওয়া বা ইচ্ছাগুলোকে পূরণ করবে। আর যেগুলো পূরণ করা সম্ভব নয় সেগুলো দুজনে আলোচনার মাধ্যমে কম্প্রোমাইজ করুন। মনে রাখবেন আলোচ্য তত্ত্ব শুধু একজন প্রয়োগ করলে সমাধান হবেনা, দুজন দুজনের উপরে প্রয়োগ করতে হবে। শুধু আপনি তার চাওয়া পূরণ করবে সে করবেনা বা শুধু সে করবে কিন্তু আপনি করবেন না, তেমন হলে এই টেকনিক প্রয়োগ করে কোন লাভ হবেনা। এই টেকনিক দুজনেরই একেঅপরের উপর প্রয়োগ করতে হবে। এই টেকনিক প্রয়োগ করে ভগ্নপ্রায় সম্পর্ক রিপেয়ার করতে পারেন এবং সেটা আজীবনের জন্য চিরস্থায়ীভাবে। প্রেমে হতাশা থাকবেই, হতাশা ও আশা নিয়েই তো প্রেম, তাইবলে আশা ছাড়া যাবেনা। প্রেমের যন্ত্রণা ও হতাশাকে পায়ে ঠেলে সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করুন, আবার শুরু করুন। সম্পর্কে নিজেকে খুঁজে পাওয়া ও নিজেকে ধরে রাখাই হলো ভালোবাসার শিক্ষা।

শেষ কথা

কাউকে ভালোবাসলে তার কাছ থেকে বিনিময়ের আশা না করে ভালোবাসুন, তার চাহিদা পুরন করুন। এতে হতাশার মাঝেও আশা খুঁজে পাবেন। ভালোবাসার এই নিয়ম একেঅপরের প্রতি প্রয়োগ করলে তখনই ভালোবাসার শক্তি ফিল করতে পারবেন। প্রেমের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবেন। ভুল বোঝাবুঝি, না পাওয়া, ভালোবাসার ঘাটতির কারনে বিচ্ছেদ নামক কষ্টের পরিস্থিতি আপনাদের সম্পর্কের মধ্যে কখনো আসবেনা। প্রেমের গোপন তত্ত্ব সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে আর ব্যর্থ হবেনা কোন প্রেম। তারপরেও প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটলে সেটা হবে মিউচুয়ালি অথবা গুরুতর কোন কারনে যেটা আপনাদের কারনে সৃষ্ট নয়। বিচ্ছেদকে সহজভাবে মেনে নিন, স্ব-উন্নয়ন করুন। কোন মতেই বিচ্ছেদের কারনে নিজের জীবন নষ্ট করবেন না। নিজেকে ভালোবাসা হলো আপনার স্বাধীনতা।


উপসংহার

আরো ভালোভাবে সহজভাবে গুছিয়ে লিখতে পারতাম, ইচ্ছা করেই করলাম না। প্রেমের গোপন তত্ত্বের মুল থিম সবাই যাতে সহজে বুঝতে না পারে সেকারনেই এভাবে লেখা। মনে রাখবেন ভালোবাসতে গেলেও জ্ঞানী হতে হয়। এই লেখাটা জ্ঞানীদের জন্যই লেখা। তাছাড়া এই তত্ত্ব জ্ঞানী প্রেমিক জুটির একজন ফলো করলে কার্যকর হবেনা, দুজনেরই ফলো করতে হবে। তাই বললাম সবাই এই লেখার মর্ম বুঝতে পারবেনা, সবাই বুঝে গেলে তো বিচ্ছেদ নামক শব্দটির ব্যবহার কমে যাবে। আর বিচ্ছেদ না থাকলে প্রেম তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলবে, মূল্যায়ন থাকবেনা। আমি চাই একটা সমতা বজায় থাকুক, প্রেম বেঁচে থাক সেইসাথে বিচ্ছেদও। আর প্রেম ও বিচ্ছেদ দুটোই সমভাবে প্রয়োজনীয়। অন্ধকার না থাকলে আলোর মূল্য কি? দুঃখ না থাকলে সুখের ফিলিংস বুঝবো? তেমনি বিচ্ছেদ না থাকলে প্রেমের কোন মূল্যায়ন নেই। 


Feriwala এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Post a Comment

0 Comments