Feriwala - Inspiring Heart and Lives

Header Ads Widget

শেয়ার মার্কেট: বিনিয়োগ শুরু করার জন্য সেরা গাইড (প্রথম পর্ব)

 ভূমিকা

শেয়ার মার্কেট হলো এমন একটি বাজার যেখানে কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনা-বেচা করা হয়। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা কোম্পানির শেয়ারের মাধ্যমে অংশীদারিত্ব অর্জন করতে পারেন এবং মুনাফা লাভের সুযোগ পান। শেয়ার মার্কেট দেশের অর্থনীতিতে পুঁজি সরবরাহ করে, ব্যবসার সম্প্রসারণে সহায়তা করে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সঞ্চয়ের বিকল্প সৃষ্টি করে। তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে, কারণ শেয়ারের মূল্য বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।

শেয়ার মার্কেট

শেয়ার মার্কেট । Image by Gerd Altmann from Pixabay 



অনেকেই না জেনে বা না বুঝে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেন যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জ্ঞানের অভাব থেকে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া সাধারণ ঘটনা, যা অনেক সময় বড় আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়। শেয়ারের মূল্য বাজারের বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে ওঠানামা করে, যেমন কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা, বাজারের চাহিদা, এবং গ্লোবাল ট্রেন্ড। এসব বিষয় না বুঝে বিনিয়োগ করলে হঠাৎ মূল্য হ্রাসের ফলে বড় ধরনের লোকসানের শিকার হওয়া সম্ভব। অনেকে গুজব বা অন্যের পরামর্শে দ্রুত লাভের আশা করে শেয়ার কেনেন, কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সঠিক বিশ্লেষণ এবং গবেষণা ছাড়া শুধুমাত্র বাজারের চাপে বা অনুমানের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা কখনই নিরাপদ নয়। বিনিয়োগকারী বিশেষ করে নতুনদের জন্য শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের পরামর্শ থাকবে শেয়ারের বাজারের প্রকৃতি, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আর্থিক স্থিতি, এবং বাজারের গতিশীলতা সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নেওয়া।


অতএব, না জেনে বা না বুঝে শেয়ারে বিনিয়োগ না করে, সঠিক জ্ঞান অর্জন করে, পেশাদারদের পরামর্শ নিয়ে এবং বাজারের গতিবিধি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করা উচিত। এই নিবন্ধের মাধ্যমে আপনি শেয়ার ও শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে তথ্যবহুল আলোচনা পাবেন, শেয়ার মার্কেটে কীভাবে বিনিয়োগ শুরু করবেন, সে গাইডলাইনও থাকবে। চেষ্টা করেছি শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে জানতে যা যা প্রয়োজন তার ম্যাক্সিমাম টপিক নিয়ে আলোচনা করতে। এটি শেয়ার মার্কেট গাইড হিসেবে কাজ করবে। এই নিবন্ধ সিরিজটি চার পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে শেয়ার, শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বে থাকবে শেয়ার বিনিয়োগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার মার্কেট বিশ্লেষণ (ফান্ডামেন্টাল ও টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস) এবং চতুর্থ পর্বে শেয়ার বিনিয়োগের টিপস ও ট্রিকস। নতুন বিনিয়োগকারীরা আশাকরি এই নিবন্ধ থেকে উপকৃত হবেন।


১. শেয়ার কি?

শেয়ার হলো একটি কোম্পানির মালিকানার ক্ষুদ্রতম অংশ যা কোম্পানি তার মূলধন সংগ্রহের জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে। যখন আপনি একটি কোম্পানির শেয়ার কিনেন, তখন আপনি সেই কোম্পানির একজন অংশীদার বা শেয়ারহোল্ডার হয়ে যান এবং কোম্পানির লাভ-ক্ষতির একটি অংশে আপনার অধিকার থাকে। শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির পরিচালনায় সরাসরি জড়িত না থাকলেও তাদের ভোটাধিকার থাকে যা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। শেয়ারের মালিকানা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, যেমন ডিভিডেন্ড প্রাপ্তি, যা কোম্পানির লাভের একটি অংশ। শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে ক্যাপিটাল গেইনও উপভোগ করতে পারেন। শেয়ারের দাম কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, পরিচালন দক্ষতা, বাজারের চাহিদা-সরবরাহ, এবং অর্থনৈতিক প্রবণতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। তবে, শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিরও সম্ভাবনা থাকে, কারণ শেয়ারের মূল্য কখনো বাড়তে পারে, আবার কমতেও পারে।


১.১ বিভিন্ন ধরণের শেয়ার

শেয়ার মার্কেটে বিভিন্ন ধরণের শেয়ার রয়েছে, প্রতিটি ধরনের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা এবং ঝুঁকি বহন করে। এখানে মূলধারার বিভিন্ন শেয়ারের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলোঃ শেয়ার সাধারণত দুই প্রকারের হয়। ১. ইকুইটি শেয়ার এবং ২. প্রেফারেন্স শেয়ার। ইকুইটি শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির সাধারণ মালিক এবং তারা ভোটাধিকারসহ ডিভিডেন্ডের জন্য অধিকারী। অন্যদিকে, প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডাররা নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়, কিন্তু সাধারণত তাদের ভোটাধিকার থাকে না। শেয়ার কেনা-বেচা সাধারণত শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে করা হয় যেখানে বিভিন্ন বিনিয়োগকারী একে অপরের সাথে শেয়ার লেনদেন করতে পারে। এর ফলে কোম্পানিগুলোর পুঁজির প্রবাহ সহজ হয় এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য আয়ের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়। শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য এবং বাজারের অবস্থা মনিটর করে তাদের বিনিয়োগের মূল্যায়ন করেন এবং সঠিক সময়ে শেয়ার ক্রয় বা বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন। সুতরাং, শেয়ার হলো বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ যা তাদের আর্থিক সমৃদ্ধি ও কোম্পানির সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দেয়। শেয়ার মূলত দুটি প্রধান প্রকারে বিভক্ত: ইকুইটি শেয়ার এবং প্রেফারেন্স শেয়ার। তবে, এই প্রধান দুটি শ্রেণির অধীনে আরও কিছু উপপ্রকার রয়েছে। নিচে তাদের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলোঃ


১.১.১ ইকুইটি শেয়ার (Equity Shares)

ইকুইটি শেয়ার (Equity Shares) বা সাধারণ শেয়ার  কমন শেয়ার (Common Shares) হলো একটি কোম্পানির মালিকানার প্রাথমিক এবং প্রধান অংশ, যা শেয়ারহোল্ডারদের কোম্পানির সম্পদ ও দায়ের ওপর মালিকানা প্রদান করে। ইকুইটি শেয়ারহোল্ডাররা প্রকৃতপক্ষে কোম্পানির মালিক এবং তারা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার রাখে, যা তাদের কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। ইকুইটি শেয়ারের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির লাভের অংশ দাবি করতে পারে, যা সাধারণত ডিভিডেন্ড আকারে প্রদান করা হয়। তবে, এই ডিভিডেন্ডের হার নির্দিষ্ট নয় এবং কোম্পানির আয় বা লাভের ওপর নির্ভরশীল, অর্থাৎ কোম্পানি লাভ করলে ডিভিডেন্ড দিতে পারে এবং লোকসান হলে ডিভিডেন্ড দিতে নাও পারে।


ইকুইটি শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর মুল্যের ওঠানামা। শেয়ারের দাম কোম্পানির আর্থিক পারফরম্যান্স, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন, বাজারের চাহিদা এবং বিনিয়োগকারীদের আবেগের ওপর নির্ভর করে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। এর ফলে ইকুইটি শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য উচ্চ মুনাফার সম্ভাবনা প্রদান করে, তবে একই সঙ্গে উচ্চ ঝুঁকিও বহন করে। শেয়ারের মূল্য বাড়লে বিনিয়োগকারীরা ক্যাপিটাল গেইন উপভোগ করতে পারেন, যা তাদের বিনিয়োগের মূল্য বৃদ্ধি ঘটায়। আবার, শেয়ারের মূল্য কমলে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ইকুইটি শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির অবসানে সম্পদ ফেরতের অধিকার পায়, তবে এই অধিকার ঋণদাতা এবং প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের পর আসে। তাই, কোম্পানির অবসানের সময় ইকুইটি শেয়ারহোল্ডাররা শেষ পর্যায়ে সম্পদ ফেরত পায়, যা ইকুইটি শেয়ারের ঝুঁকির দিককে আরও বাড়িয়ে তোলে। ইকুইটি শেয়ারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে সহজেই তাদের বিনিয়োগ নগদীকরণ করতে পারে, কারণ ইকুইটি শেয়ার সাধারণত স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনযোগ্য হয়। শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির পারফরম্যান্সের ওপর গভীর নজর রাখে এবং বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ইকুইটি শেয়ার একটি আকর্ষণীয় বিকল্প, কারণ এটি বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কোম্পানির সফলতায় সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। ইকুইটি শেয়ারের মালিকানা বিনিয়োগকারীদের আর্থিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথ তৈরি করতে পারে, তবে একই সঙ্গে এটি বাজারের অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকির সাথেও সরাসরি যুক্ত থাকে, যা বিনিয়োগকারীদের তাদের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অনুযায়ী সঠিক শেয়ার মার্কেট কৌশল গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।


১.১.২ প্রেফারেন্স শেয়ার (Preference Shares)

প্রেফারেন্স শেয়ার হলো কোম্পানির একটি বিশেষ প্রকারের শেয়ার যা শেয়ারহোল্ডারদের নির্দিষ্ট কিছু সুবিধা প্রদান করে, যেমন ডিভিডেন্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার এবং কোম্পানির অবসানের সময় মূলধন ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার। এই শেয়ারগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট একটি ডিভিডেন্ড হার অনুসারে লাভ প্রদান করে, যা ইকুইটি শেয়ারহোল্ডারদের আগে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, কোম্পানি লাভ করুক বা না করুক, প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডাররা নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড পাওয়ার অধিকার রাখে। এই কারণে প্রেফারেন্স শেয়ারকে তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয়, কারণ এতে নিয়মিত আয়ের একটি নিশ্চয়তা থাকে। তবে, প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণত কোম্পানির পরিচালনা বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণের জন্য ভোটাধিকার থাকে না, যা ইকুইটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য একটি মূল পার্থক্য।


প্রেফারেন্স শেয়ারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর অগ্রাধিকার দাবি। কোম্পানি যদি কোনো সময় অবসানের সম্মুখীন হয়, তাহলে প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের দাবি ইকুইটি শেয়ারহোল্ডারদের আগেই মেটানো হয়। এটি তাদের মূলধন ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি নিরাপত্তা প্রদান করে। যেহেতু প্রেফারেন্স শেয়ারের ডিভিডেন্ড সাধারণত ইকুইটি শেয়ারের চেয়ে কম হয়, তাই এটি মূলধন সংরক্ষণ এবং নিয়মিত আয়ের জন্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়। তবে, প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের ভোটাধিকার না থাকার কারণে তারা কোম্পানির পরিচালনায় সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে না। এছাড়া, বাজারে শেয়ারের মূল্য ওঠানামার সঙ্গে প্রেফারেন্স শেয়ারের মূল্য ততটা পরিবর্তিত হয় না, যা ইকুইটি শেয়ারের তুলনায় কম লাভের সম্ভাবনা তৈরি করে। প্রেফারেন্স শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস হতে পারে, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা ঝুঁকি নিতে চান না এবং নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা খোঁজেন। এই কারণে প্রেফারেন্স শেয়ার দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য একটি উপযোগী বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির মাত্রা হ্রাস করে এবং তাদের আর্থিক লক্ষ্য পূরণের সুযোগ প্রদান করে। এভাবে, প্রেফারেন্স শেয়ার বাজারের অন্য শেয়ারগুলোর তুলনায় একটি নির্দিষ্ট বিনিয়োগ কৌশল এবং নিরাপত্তার স্তর প্রদান করে যা বিনিয়োগকারীদের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।


প্রেফারেন্স শেয়ারের প্রকারভেদ

প্রেফারেন্স শেয়ারগুলো তাদের বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকারে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি প্রকারের প্রেফারেন্স শেয়ারের নিজস্ব সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী শেয়ার নির্বাচন করতে সহায়তা করে। নিচে প্রেফারেন্স শেয়ারের প্রধান প্রকারগুলো এবং তাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:


[লভ্যাংশের ভিত্তিতে]

১.১.২.১ কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ার (Cumulative Preference Shares)

কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ার এমন একটি প্রেফারেন্স শেয়ার যার ক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড প্রদানে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং যদি কোনো বছরে ডিভিডেন্ড প্রদান না করা হয় বা আংশিক প্রদান করা হয়, তবে সেই অনাদায়ী বা অসম্পূর্ণ ডিভিডেন্ড ভবিষ্যতে জমা হয় এবং পরবর্তীকালে প্রদান করা হয়। এই প্রকার শেয়ারহোল্ডাররা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের চেয়ে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে ডিভিডেন্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে, এমনকি যদি সেই বছরের আয় অপর্যাপ্ত হয় বা ক্ষতি হয়। তাদের জমাকৃত ডিভিডেন্ড পরবর্তী লাভজনক বছরে প্রদান করা হয়, যা কিউমুলেটিভ প্রক্রিয়া নামে পরিচিত। কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ মাধ্যম হতে পারে, বিশেষত তাদের জন্য যারা নিয়মিত ডিভিডেন্ড আয়ের নিশ্চয়তা চান এবং কম ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক। এটি কোম্পানির অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে এবং কোম্পানি মুনাফা করলে শেয়ারহোল্ডাররা তাদের জমাকৃত ডিভিডেন্ড সহ সম্পূর্ণ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।


কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • ডিভিডেন্ড জমা: কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারের মূল বৈশিষ্ট্য হলো অনাদায়ী ডিভিডেন্ড জমা হয়। যদি কোনো বছরে ডিভিডেন্ড প্রদান করা সম্ভব না হয়, তাহলে সেই ডিভিডেন্ড জমা হয় এবং পরবর্তী বছরের ডিভিডেন্ডের সাথে প্রদান করা হয়।
  • অগ্রাধিকার: এই শেয়ারহোল্ডাররা ইকুইটি শেয়ারহোল্ডারদের চেয়ে ডিভিডেন্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়। অর্থাৎ, তাদের জমাকৃত ডিভিডেন্ড এবং চলতি বছরের ডিভিডেন্ড প্রদান না করে ইকুইটি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দেওয়া হয় না।
  • ভোটাধিকার: কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণত কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডে ভোটাধিকার থাকে না। তবে, যদি তাদের ডিভিডেন্ড দুই বা ততোধিক বছর ধরে বকেয়া থাকে, তাহলে তারা কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে ভোটাধিকার পেতে পারেন।
  • ক্যাপিটাল ফেরত পাওয়া: কোম্পানির অবসান হলে কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডাররা তাদের মূলধন ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে ইকুইটি শেয়ারহোল্ডারদের চেয়ে অগ্রাধিকার পায়।
  • ঝুঁকি: কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ার কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ ডিভিডেন্ড প্রদানে অগ্রাধিকার এবং জমাকৃত ডিভিডেন্ড পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে।


উদাহরণ: ধরা যাক, কোনো কোম্পানি ৮% কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করেছে। যদি কোনো বছরে কোম্পানি ডিভিডেন্ড প্রদান করতে না পারে, তাহলে সেই ডিভিডেন্ড জমা হবে এবং পরবর্তী বছরের ডিভিডেন্ডের সাথে প্রদান করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম বছরে ডিভিডেন্ড প্রদানে ব্যর্থ হলে এবং পরের বছরে কোম্পানি লাভজনক হলে, শেয়ারহোল্ডাররা প্রথম বছরের ৮% এবং দ্বিতীয় বছরের ৮% সহ মোট ১৬% ডিভিডেন্ড পাবে।


কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারের সুবিধা

  • নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড: শেয়ারহোল্ডাররা একটি স্থিতিশীল এবং পূর্বানুমানযোগ্য ডিভিডেন্ড পায়।
  • ঝুঁকি হ্রাস: অমীমাংসিত ডিভিডেন্ড জমা থাকায় বিনিয়োগের ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আয়ের একটি স্থিতিশীল উৎস হয়।
  • অগ্রাধিকার: শেয়ারহোল্ডাররা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের তুলনায় ডিভিডেন্ড প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়।


কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • ভোটাধিকার: সাধারণভাবে, কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারধারীরা ভোটাধিকার পায় না, যা কোম্পানির পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ কমিয়ে দেয়।
  • অতিরিক্ত লভ্যাংশের অভাব: এই শেয়ারগুলি সাধারণত অতিরিক্ত মুনাফা থেকে কোনো অংশ গ্রহণ করে না, এবং শুধুমাত্র ইমার্জিং মার্কেট ডিভিডেন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।


১.১.২.২ নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ার (Non-Cumulative Preference Shares)

নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ার হলো এমন একটি প্রেফারেন্স শেয়ার যা নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড প্রদান করে, কিন্তু যদি কোনো বছরে ডিভিডেন্ড প্রদান করা না হয়, তাহলে সেই অনাদায়ী ডিভিডেন্ড পরবর্তী বছরে বা ভবিষ্যতে কখনোই প্রদান করা হয় না। এর অর্থ হলো, যদি কোম্পানি কোন নির্দিষ্ট বছরে লাভ না করে এবং ডিভিডেন্ড না দিতে পারে, তাহলে সেই বছরটির ডিভিডেন্ড হারিয়ে যাবে এবং শেয়ারহোল্ডাররা পরবর্তী বছরে সেই ডিভিডেন্ডের জন্য কোনো দাবি করতে পারবে না। নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণভাবে স্থিতিশীল আয়ের জন্য একটি বিকল্প হতে পারে, বিশেষত তাদের জন্য যারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিভিডেন্ড পেতে চান। তবে, এই প্রকার শেয়ারের সাথে ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত থাকে যে, কোনো বছরের ডিভিডেন্ড প্রদান না হলে তা পরবর্তীতে পেতে হবে না। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিনিয়োগ মাধ্যম হতে পারে যারা নিয়মিত আয়ের প্রত্যাশা করেন এবং ঝুঁকির মাত্রা কিছুটা সহ্য করতে ইচ্ছুক।


নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • ডিভিডেন্ডের অসংহতিসাধন: এই প্রকার শেয়ারের জন্য, ডিভিডেন্ড প্রদান একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ এবং যদি কোনো বছরে ডিভিডেন্ড প্রদান না করা হয়, তাহলে সেই ডিভিডেন্ড পরবর্তীতে জমা করা হয় না। এটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য একটি ঝুঁকির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • অগ্রাধিকার: নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির লাভে ডিভিডেন্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে ইকুইটি শেয়ারহোল্ডারদের আগে অগ্রাধিকার পায়। তবে, একবার যদি কোনো বছরের ডিভিডেন্ড প্রদানে ব্যর্থ হয়, তা পরে পাওয়া যাবে না।
  • ভোটাধিকার: নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণত কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডে ভোটাধিকার থাকে না, তবে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে তারা ভোটাধিকার পেতে পারে।
  • ক্যাপিটাল ফেরত পাওয়া: কোম্পানির অবসান হলে, নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডাররা মূলধন ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে অগ্রাধিকার পায়, কিন্তু ইকুইটি শেয়ারহোল্ডারদের আগে নয়।
  • ঝুঁকি ও পুরস্কার: নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ার কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয় তুলনামূলকভাবে কারণ এতে নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ডের নিশ্চয়তা থাকে, কিন্তু জমাকৃত ডিভিডেন্ড পাওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি কোম্পানি ৮% নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করেছে। যদি কোনো বছরে কোম্পানি লাভজনক না হয় এবং ৮% ডিভিডেন্ড প্রদান করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই বছরের ৮% ডিভিডেন্ড হারিয়ে যাবে এবং পরবর্তী বছরে সেই অস্থায়ী ডিভিডেন্ডের জন্য কোনো দাবি করা যাবে না।


নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারের সুবিধা

  • নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড: শেয়ারহোল্ডাররা একটি পূর্বানুমানযোগ্য ডিভিডেন্ড পায়।
  • প্রাধিকার: সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের তুলনায় ডিভিডেন্ড প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়।


নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • ডিভিডেন্ডের অনুপস্থিতি: কোনো বছরের জন্য ডিভিডেন্ড প্রদান না করা হলে, সেই অমীমাংসিত ডিভিডেন্ড পরবর্তীতে দাবি করা যায় না।
  • ভোটাধিকার: সাধারণভাবে, নন-কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ারধারীরা ভোটাধিকার পায় না।


[মূলধন ফেরতের ভিত্তিতে]

১.১.২.৩ রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার (Redeemable Preference Shares)

রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার এমন একটি প্রেফারেন্স শেয়ার যা কোম্পানির নির্দিষ্ট সময় পর অথবা কোম্পানির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফেরত নেওয়া যেতে পারে। এটি মূলত কোম্পানির জন্য একটি নমনীয় আর্থিক সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা নির্দিষ্ট সময়ের পরে শেয়ারহোল্ডারদের মূলধন ফেরত দিতে সক্ষম হয়। রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার একটি ভাল বিকল্প হতে পারে বিনিয়োগকারীদের জন্য যারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থিতিশীল আয় চান এবং ভবিষ্যতে তাদের বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা খোঁজেন। এটি কোম্পানির জন্যও উপকারী, কারণ এটি তাদের মূলধন ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।


রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • ফেরত নেওয়ার অধিকার: রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার নির্দিষ্ট সময় পর অথবা কোম্পানির ইচ্ছায় নির্দিষ্ট মূল্যে ফেরত নেওয়া যেতে পারে। এই সময়সীমা সাধারণত শেয়ার ইস্যুর সময় ইমার্জিং মার্কেট হয় এবং এটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য একটি নিশ্চিত সময়ের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করে।
  • ডিভিডেন্ড: রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণত নির্দিষ্ট একটি ডিভিডেন্ড হার প্রদান করে। এই ডিভিডেন্ড সাধারণত নির্দিষ্ট এবং ইমার্জিং মার্কেট হয়, এবং শেয়ারহোল্ডাররা নিয়মিত আয় পাওয়ার নিশ্চয়তা পান।
  • মেয়াদ: রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের মেয়াদ কোম্পানির বেছে নেওয়া সময়ের ওপর নির্ভর করে। কোম্পানি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শেয়ারগুলো ফেরত নিতে পারে, তবে এই সময়সীমার আগে শেয়ারহোল্ডাররা তাদের শেয়ার ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে।
  • ক্যাপিটাল ফেরত পাওয়া: কোম্পানির অবসানে রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডাররা সাধারণত তাদের মূলধন ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়, তবে তাদের ক্যাপিটাল ফেরত দেওয়ার সময় তাদের পরবর্তী শ্রেণীর শেয়ারহোল্ডারদের আগে আসে।
  • ঝুঁকি: রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফেরত নেওয়া যায় এবং নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড প্রদান করা হয়। তবে, শেয়ার ফেরত নেওয়া হলে বিনিয়োগকারীদের মুনাফার সুযোগ সীমিত হতে পারে।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি কোম্পানি ৭% রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করেছে যার মেয়াদ ১০ বছর। কোম্পানি ১০ বছর পর এই শেয়ারগুলো ফেরত নিতে পারে এবং শেয়ারহোল্ডারদের তাদের মূলধন ফেরত দেবে। যদি কোম্পানির আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে এবং কোম্পানি শেয়ারগুলো মেয়াদ শেষে ফেরত নিতে চায়, তাহলে শেয়ারহোল্ডাররা তাদের বিনিয়োগ মূলধন ফেরত পাবেন।


রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের সুবিধা

  • ফেরত নেওয়ার ক্ষমতা: কোম্পানি আর্থিক পরিস্থিতি বা কৌশলগত কারণে শেয়ারগুলি ফেরত নিতে পারে, যা কোম্পানির মূলধন ব্যবস্থাপনার জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।
  • নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড: শেয়ারহোল্ডাররা একটি নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড পায়, যা একটি পূর্বানুমানযোগ্য আয়ের উৎস প্রদান করে।


রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • ফেরত নেওয়ার ঝুঁকি: শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারগুলি নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত নেওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে।
  • ভোটাধিকার: সাধারণভাবে, রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারধারীরা ভোটাধিকার পায় না, যা কোম্পানির পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ কমিয়ে দেয়।


১.১.২.৪ নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার (Non-Redeemable Preference Shares)

নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার হলো এমন একটি প্রেফারেন্স শেয়ার যা নির্দিষ্ট সময়ের পর অথবা কোম্পানির ইচ্ছায় ফেরত নেওয়া যায় না। এই শেয়ারগুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং কোম্পানি এগুলোর ফেরত দেওয়ার কোনো অধিকার রাখে না। নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণভাবে স্থিতিশীল আয়ের জন্য একটি ভাল বিকল্প হতে পারে, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করে এবং তাদের মূলধন ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তিত নন। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ আয়ের উৎস হতে পারে, তবে এটি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফেরত দেওয়া না যাওয়ার কারণে একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি হিসাবে বিবেচিত হয়।


নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • ফেরত নেওয়ার অভাব: নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণত কোম্পানির পক্ষ থেকে ফেরত নেওয়া যায় না। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট সময় পর এই শেয়ারগুলো ফেরত দেওয়া হয় না এবং শেয়ারহোল্ডারদের মেয়াদ শেষে ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
  • ডিভিডেন্ড: এই প্রকার শেয়ারগুলির জন্য নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড প্রদান করা হয় যা সাধারণত নির্দিষ্ট এবং পূর্বানুমানযোগ্য। শেয়ারহোল্ডাররা নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা পান, তবে যদি কোনো বছরে কোম্পানি লাভ না করে বা ডিভিডেন্ড প্রদান না করতে পারে, তবে এর জন্য কোনো জমা বা পেছানো ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে না।
  • মেয়াদ: নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের জন্য নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ না থাকলে এটি কোম্পানির অস্তিত্বকাল পর্যন্ত কার্যকর থাকে। এটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • ক্যাপিটাল ফেরত পাওয়া: কোম্পানির অবসানে, নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডাররা তাদের মূলধন ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য ঋণদাতা এবং প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের পর আসে। অর্থাৎ, অবসানের সময় তাদের ফেরত পাওয়া সম্ভব হলেও এটি পরে আসতে পারে।
  • ঝুঁকি: নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ হয় কারণ এটি স্থিতিশীল ডিভিডেন্ড প্রদান করে, তবে এর সাথে ঝুঁকি থাকে যে শেয়ার ফেরত নেওয়া হবে না এবং এতে বিনিয়োগকারীর জন্য মুনাফার সুযোগ সীমিত হতে পারে।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি কোম্পানি ৮% নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করেছে। এই শেয়ারগুলো কোম্পানির মেয়াদ শেষে ফেরত নেওয়া যাবে না, তবে শেয়ারহোল্ডাররা নির্দিষ্ট ৮% ডিভিডেন্ড পাবেন যতদিন কোম্পানি লাভজনক থাকে এবং ডিভিডেন্ড প্রদান করতে সক্ষম হয়।


নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের সুবিধা

  • নির্দিষ্ট আয়: শেয়ারহোল্ডাররা একটি স্থিতিশীল এবং পূর্বানুমানযোগ্য ডিভিডেন্ড পায় যা তাদের আয়ের একটি স্থিতিশীল উৎস প্রদান করে।
  • দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ: শেয়ারগুলির পুনঃরায় ক্রয়ের কোনো ঝুঁকি না থাকায় এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়।


নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • ফেরত নেওয়ার অযোগ্যতা: শেয়ারহোল্ডাররা তাদের বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার জন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো পুনঃরায় ক্রয় বা ফেরত পাওয়ার সুযোগ পায় না।
  • ভোটাধিকার: সাধারণভাবে, নন-রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারধারীরা ভোটাধিকার পায় না, যা কোম্পানির পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ কমিয়ে দেয়।


[পরিবর্তনযোগ্যতার ভিত্তিতে]

১.১.২.৫ কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার (Convertible Preference Shares)

কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার হলো এমন একটি প্রেফারেন্স শেয়ার যা নির্দিষ্ট সময় পরে অথবা নির্দিষ্ট শর্তে ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরিত হতে পারে। এই প্রকার শেয়ারগুলি বিনিয়োগকারীদের ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরিত হয়ে মূলধন বৃদ্ধির সুযোগ প্রদান করে, এবং এতে তাদের দীর্ঘমেয়াদী লাভের সম্ভাবনা থাকে। কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার একটি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে যারা একটি নির্দিষ্ট আয়ের নিশ্চয়তা চান এবং একই সাথে ভবিষ্যতের মুনাফার সুযোগ খোঁজেন। এটি একটি উন্নত বিনিয়োগ কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয় যেটি স্টেবল ইনকাম এবং সম্ভাব্য মূল্য বৃদ্ধির সমন্বয় করে।


কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • রূপান্তরের সুবিধা: কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার নির্দিষ্ট সময় পর অথবা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণের পর ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরিত হতে পারে। এই রূপান্তরের সুযোগ বিনিয়োগকারীদের ইকুইটি শেয়ারের লাভের সুবিধা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করে।
  • ডিভিডেন্ড: কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড হার প্রদান করে, যা শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এই ডিভিডেন্ড শেয়ার রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রদান করা হয়।
  • রূপান্তরের শর্ত: কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের রূপান্তর শর্ত এবং সময় সাধারণত শেয়ার ইস্যুর সময় ইমার্জিং মার্কেট হয়। উদাহরণস্বরূপ, শেয়ারগুলো ৫ বছরের পর অথবা একটি নির্দিষ্ট মূল্য পৌঁছালে ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরিত হতে পারে।
  • ভোটাধিকার: কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারধারীদের সাধারণত ভোটাধিকার থাকে না, তবে তারা ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরের পর কোম্পানির পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে পারেন।
  • ঝুঁকি ও পুরস্কার: কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ভালো বিনিয়োগ মাধ্যম হতে পারে যারা মুনাফার পাশাপাশি স্থিতিশীল ডিভিডেন্ডও চান। এটি বিনিয়োগকারীদের উভয় প্রকারের সুবিধা প্রদান করে—ডিভিডেন্ড আয় এবং শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি থেকে লাভ।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি কোম্পানি ৭% কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করেছে। এই শেয়ারগুলো ৫ বছর পর বা নির্দিষ্ট শেয়ার মূল্য পৌঁছালে ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরিত হতে পারে। যদি কোম্পানির শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং শেয়ারহোল্ডাররা মুনাফার সুযোগ খুঁজছেন, তারা তাদের কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তর করতে পারেন এবং কোম্পানির মূল্য বৃদ্ধির সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।


কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের সুবিধা

  • দুইটি সুবিধা: শেয়ারহোল্ডাররা প্রেফারেন্স শেয়ারের স্থিতিশীল ডিভিডেন্ড এবং ভবিষ্যতে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরিত করার সুবিধা লাভ করে।
  • বৃদ্ধির সম্ভাবনা: সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরিত হলে, শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির ভবিষ্যৎ বৃদ্ধি এবং লাভ থেকে উপকৃত হতে পারে।


কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • ভোটাধিকার: কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারগুলি সাধারণত ভোটাধিকার প্রদান করে না, যদিও রূপান্তরিত হলে সাধারণ শেয়ারদের ভোটাধিকার পাওয়া যায়।
  • মুল্য এবং ঝুঁকি: সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরের পর মুল্য পরিবর্তন হতে পারে এবং শেয়ারহোল্ডাররা অতিরিক্ত ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।


১.১.২.৬ নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার (Non-Convertible Preference Shares)

নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার হলো এমন একটি প্রেফারেন্স শেয়ার যা ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরিত হতে পারে না। এই প্রকার শেয়ারের ক্ষেত্রে, শেয়ারহোল্ডারদের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড প্রদান করা হয় এবং এটি কখনোই ইকুইটি শেয়ারে পরিবর্তিত হয় না। নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার একটি স্থিতিশীল আয় প্রদান করে এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের একটি বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে এটি একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে যে শেয়ারহোল্ডাররা ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধির সুবিধা বা রূপান্তরের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে।


নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • রূপান্তরের অভাব: নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরিত হতে পারে না। অর্থাৎ, শেয়ারহোল্ডারদের এই শেয়ারগুলির জন্য কোনো রূপান্তর সুবিধা থাকে না, এবং শেয়ারগুলো কেবলমাত্র প্রেফারেন্স শেয়ারের সুবিধা প্রদান করে।
  • ডিভিডেন্ড: এই প্রকার শেয়ারগুলির জন্য সাধারণত একটি নির্দিষ্ট এবং স্থিতিশীল ডিভিডেন্ড হার প্রদান করা হয়। শেয়ারহোল্ডাররা নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিভিডেন্ড পাবেন যতক্ষণ কোম্পানি লাভজনক থাকে এবং ডিভিডেন্ড প্রদান করতে সক্ষম হয়।
  • ভোটাধিকার: নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারধারীরা সাধারণত কোম্পানির ভোটাধিকার পায় না। তাদের ভোটাধিকার পাওয়ার সুযোগ নেই, এমনকি যদি কোম্পানি তাদের মুনাফার ভাগ বৃদ্ধি করে।
  • মেয়াদ ও ক্যাপিটাল ফেরত: সাধারণত, নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ না থাকে। কোম্পানির অবসানে, এই শেয়ারহোল্ডাররা অন্যান্য ঋণদাতা এবং প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের পরে মূলধন ফেরত পাওয়ার জন্য অগ্রাধিকার পায়।
  • ঝুঁকি ও পুরস্কার: নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারগুলো সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ এগুলিতে একটি নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড হার থাকে, তবে এতে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন মুনাফার বৃদ্ধি বা রূপান্তরের সুযোগ নেই।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি কোম্পানি ৯% নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করেছে। এই শেয়ারগুলো কখনোই ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরিত হবে না। তবে, শেয়ারহোল্ডাররা একটি নির্দিষ্ট ৯% ডিভিডেন্ড পাবেন যতদিন কোম্পানি লাভজনক থাকে এবং ডিভিডেন্ড প্রদান করতে সক্ষম হয়।


নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের সুবিধা

  • নির্দিষ্ট আয়: একটি নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড হার প্রদান করে, যা বিনিয়োগকারীদের একটি স্থিতিশীল আয়ের নিশ্চয়তা দেয়।
  • কম ঝুঁকি: সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এতে নিয়মিত ডিভিডেন্ডের নিশ্চয়তা থাকে।


নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • রূপান্তরের সুযোগ: শেয়ারগুলোর কোনো রূপান্তর সুবিধা নেই, তাই শেয়ারহোল্ডাররা ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধি বা অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ হারায়।
  • ভোটাধিকার: শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে, যা তাদের কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় না।


[সম্পত্তি বণ্টনের ভিত্তিতে]

১.১.২.৭ পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার (Participating Preference Shares)

পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার হলো একটি বিশেষ ধরনের প্রেফারেন্স শেয়ার যা সাধারণত দুটি প্রধান সুবিধা প্রদান করে: প্রথমত, একটি নির্দিষ্ট এবং পূর্বানুমানযোগ্য ডিভিডেন্ড, এবং দ্বিতীয়ত, কোম্পানির মুনাফার অতিরিক্ত ভাগ নেওয়ার সুযোগ। এই প্রকার শেয়ার সাধারণত বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ প্রদান করে যা তাদের আয়ের সুবিধা বৃদ্ধি করে। পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ বিকল্প হতে পারে, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা একটি স্থিতিশীল আয়ের সাথে অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ খোঁজেন। এটি একটি মুনাফা এবং আয়ের সুষম সমন্বয় প্রদান করে যা বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।


পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • ডিভিডেন্ডের নিশ্চয়তা: পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড হার প্রদান করে, যা সাধারণত কোম্পানির লাভের উপর নির্ভর করে। এই ডিভিডেন্ড হোল্ডাররা তাদের বিনিয়োগের জন্য একটি স্থিতিশীল আয়ের নিশ্চয়তা পায়।
  • অতিরিক্ত মুনাফার অংশগ্রহণ: পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ারধারীরা কোম্পানির লাভের ওপর অতিরিক্ত অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড প্রদান করার পর যদি কোম্পানি অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করে, তাহলে পার্টিসিপেটিং শেয়ারহোল্ডাররা সেই অতিরিক্ত মুনাফার অংশ হিসেবে আরো ডিভিডেন্ড পেতে পারেন।
  • ভোটাধিকার: সাধারণভাবে, পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ারধারীরা ভোটাধিকার পায় না, তবে তাদের লাভের ভাগ এবং আয়ের অংশগ্রহণের সুবিধা থাকে।
  • মেয়াদ ও ক্যাপিটাল ফেরত: পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদে ফেরত নেওয়া হয় না, এবং অবসানে মূলধন ফেরত পাওয়ার জন্য অন্যান্য ঋণদাতা ও প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের পরে আসে।
  • ঝুঁকি ও পুরস্কার: পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি মুনাফার সুযোগ প্রদান করে যা তাদের আয়ের বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তবে, এটি কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে যেমন, মুনাফার পরিমাণ নির্ভর করে কোম্পানির পারফরম্যান্সের ওপর।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি কোম্পানি ৭% পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করেছে। প্রথমত, এই শেয়ারগুলো ৭% ডিভিডেন্ড প্রদান করবে। এরপর, যদি কোম্পানি অতিরিক্ত লাভ করে, তবে পার্টিসিপেটিং শেয়ারহোল্ডাররা সেই অতিরিক্ত লাভের অংশ হিসেবে আরো ডিভিডেন্ড পেতে পারে।


পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ারের সুবিধা

  • নির্দিষ্ট আয়: একটি স্থিতিশীল ডিভিডেন্ড প্রদান করে যা বিনিয়োগকারীদের একটি নির্দিষ্ট আয়ের নিশ্চয়তা দেয়।
  • অতিরিক্ত মুনাফার অংশগ্রহণ: কোম্পানির অতিরিক্ত লাভ থেকে আরো ডিভিডেন্ড লাভের সুযোগ প্রদান করে।


পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • ভোটাধিকার: সাধারণত ভোটাধিকার না পাওয়া, যা কোম্পানির পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করে না।
  • মুনাফার পরিমাণের নির্ভরতা: অতিরিক্ত মুনাফার অংশগ্রহণ কোম্পানির লাভের ওপর নির্ভরশীল, যা কিছুটা অপ্রত্যাশিত হতে পারে।


১.১.২.৮ নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার (Non-Participating Preference Shares)

নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার হলো একটি প্রেফারেন্স শেয়ার যা নির্দিষ্ট একটি ডিভিডেন্ড প্রদান করে এবং এর পাশাপাশি কোম্পানির অতিরিক্ত মুনাফার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখে না। অর্থাৎ, এই প্রকার শেয়ারের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির অতিরিক্ত লাভ থেকে কোনো অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড পায় না। নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার একটি নিরাপদ বিনিয়োগ বিকল্প হতে পারে, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা একটি নির্দিষ্ট আয়ের নিশ্চয়তা চান এবং অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক নন। এটি একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।


নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড: নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট এবং পূর্বানুমানযোগ্য ডিভিডেন্ড হার প্রদান করে। এই ডিভিডেন্ড হোল্ডারদের বিনিয়োগের জন্য একটি স্থিতিশীল আয়ের নিশ্চয়তা দেয়, কিন্তু এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে।
  • অতিরিক্ত মুনাফার অংশগ্রহণের অভাব: নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ারধারীরা কোম্পানির অতিরিক্ত লাভের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখে না। অতিরিক্ত লাভের ক্ষেত্রে, শেয়ারহোল্ডাররা কোন অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড পাবে না এবং শুধু তাদের নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ডের সুবিধা পাবে।
  • ভোটাধিকার: সাধারণভাবে, নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ারধারীরা কোম্পানির ভোটাধিকার পায় না। তাদের ভোটাধিকার পাওয়ার সুযোগ নেই এবং কোম্পানির পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে না।
  • মেয়াদ ও ক্যাপিটাল ফেরত: নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদে ফেরত নেওয়া হয় না এবং অবসানের সময় অন্যান্য ঋণদাতা ও প্রেফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের পরে মূলধন ফেরত পাওয়ার জন্য অগ্রাধিকার পায়।
  • ঝুঁকি ও পুরস্কার: নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড প্রদান করে। তবে, শেয়ারহোল্ডাররা অতিরিক্ত লাভ থেকে কোনো অংশ গ্রহণের সুযোগ পায় না।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি কোম্পানি ৮% নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করেছে। এই শেয়ারগুলোর জন্য, শেয়ারহোল্ডাররা ৮% ডিভিডেন্ড পাবেন। যদি কোম্পানি অতিরিক্ত লাভ অর্জন করে, তবে তারা সেই অতিরিক্ত লাভের কোনো অংশ গ্রহণ করবে না; তাদের লাভ শুধু নির্দিষ্ট ৮% ডিভিডেন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।


নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ারের সুবিধা

  • নির্দিষ্ট আয়: একটি স্থিতিশীল ডিভিডেন্ড প্রদান করে যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট আয়ের নিশ্চয়তা প্রদান করে।
  • কম ঝুঁকি: সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এতে নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ডের নিশ্চয়তা থাকে।


নন-পার্টিসিপেটিং প্রেফারেন্স শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • অতিরিক্ত মুনাফার অভাব: কোম্পানির অতিরিক্ত লাভ থেকে কোনো অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড বা অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
  • ভোটাধিকার: শেয়ারহোল্ডাররা ভোটাধিকার পায় না, যা কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো ভূমিকা রাখতে দেয় না।


১.১.৩ ডিভিডেন্ট শেয়ার (Dividend Shares) 

ডিভিডেন্ট শেয়ার বা লভ্যাংশ শেয়ার এমন এক প্রকারের শেয়ার যা মূলত কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদান করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের শেয়ারগুলি সাধারণত বিনিয়োগকারীদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ লভ্যাংশ দেয় যা কোম্পানির লাভের একটি অংশ।


ডিভিডেন্ট শেয়ারের বৈশিষ্ট্য

  • লভ্যাংশ প্রদান: ডিভিডেন্ট শেয়ার সাধারণভাবে কোম্পানির লাভের একটি নির্দিষ্ট অংশ প্রদান করে। এই লভ্যাংশ নগদ টাকা, নতুন শেয়ার, অথবা অন্য কোনও ধরনের হতে পারে।
  • লভ্যাংশের পরিমাণ: সাধারণত প্রতি শেয়ারের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় এবং এটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
  • লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা: কিছু কোম্পানি নিয়মিতভাবে লভ্যাংশ প্রদান করে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্থিতিশীল আয় সরবরাহ করে। অন্যান্য কোম্পানি লাভের পরিমাণ ও বাজারের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে লভ্যাংশ প্রদান করে।
  • মূল্য পরিবর্তন: কোম্পানির লভ্যাংশের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার প্রদান করা হলে, শেয়ারের বাজার মূল্য পরিবর্তিত হতে পারে। লভ্যাংশ প্রদান করা হলে সাধারণত শেয়ারের মূল্য সাময়িকভাবে কমে যায়, কারণ কোম্পানির লাভের অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণ করা হয়।


উদাহরণ: ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (BATBC) হলো একটি বাংলাদেশী কোম্পানি যা ডিভিডেন্ট শেয়ারের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। BATBC বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ প্রদানকারী একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। এটি প্রতি বছর নিয়মিতভাবে উচ্চ হারে লভ্যাংশ প্রদান করে থাকে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থিতিশীল আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। কোম্পানিটি তাদের মুনাফার একটি বড় অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করে, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়। BATBC এর এই লভ্যাংশ প্রদানকারী ঐতিহ্য কোম্পানির স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক শক্তির প্রতিফলন করে।


ডিভিডেন্ট শেয়ারের সুবিধা

  • নিয়মিত আয়: ডিভিডেন্ট শেয়ার মূলত নিয়মিত আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। কোম্পানি যে লাভ অর্জন করে, তার একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎস হতে পারে, বিশেষত অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য যারা নিয়মিত আয় চান।
  • অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: লভ্যাংশ প্রদান করে এমন কোম্পানিগুলি সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল এবং তাদের আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী থাকে। নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান কোম্পানির মুনাফার একটি প্রতিফলন এবং এটি বাজারের অস্থিরতার সময় বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করে।
  • বাজারের অস্থিরতার বিরুদ্ধে সুরক্ষা: বাজারের ওঠানামার সময়ে, ডিভিডেন্ট শেয়ারগুলি কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। যদিও শেয়ারের মূল্য কমতে পারে, তবুও লভ্যাংশ আয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য আয় হতে পারে, যা বাজারের পতনের প্রভাব কিছুটা কমাতে সাহায্য করে।
  • আকর্ষণীয় রিটার্ন: যদি কোম্পানির শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং লভ্যাংশ প্রদান অব্যাহত থাকে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশের পাশাপাশি শেয়ার মূল্যের বৃদ্ধির সুবিধাও পেতে পারেন। এটি একটি সম্পূর্ণ রিটার্ন প্রদান করে যা লভ্যাংশ এবং মূল্যের বৃদ্ধির সংমিশ্রণ হতে পারে।
  • অর্থনৈতিক সংবেদনশীলতার সূচক: কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদান তার আর্থিক স্বাস্থ্য ও স্থিতিশীলতা নির্দেশ করতে পারে। একটি কোম্পানি যদি নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে, তাহলে এটি কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক অবস্থার একটি ভাল সংকেত হতে পারে এবং বিনিয়োগকারীরা এ থেকে প্রণোদনা পেতে পারেন।
  • কর সুবিধা: কিছু দেশে লভ্যাংশের উপরে কর সুবিধা থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু অঞ্চলে লভ্যাংশ আয় নির্দিষ্ট পরিমাণে কর মুক্ত বা কম করের আওতায় আসতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আয় বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • বিনিয়োগের বিভিন্নতা: ডিভিডেন্ট শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগ পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করতে সাহায্য করে। এটি অন্যান্য প্রকারের শেয়ার বা সিকিউরিটিজের সাথে সংযুক্ত করে পোর্টফোলিওর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।


ডিভিডেন্ট শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • লভ্যাংশের অনিশ্চয়তা: লভ্যাংশ প্রদান সম্পূর্ণভাবে কোম্পানির লাভের ওপর নির্ভরশীল, এবং যদি কোম্পানি কোনো বছর লাভ করতে না পারে বা কম লাভ করে, তাহলে লভ্যাংশ প্রদানে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। এমনকি যে কোম্পানিগুলি আগে নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করত, তারাও অর্থনৈতিক মন্দা বা অন্য কোনো সংকটের কারণে লভ্যাংশ কমাতে বা বন্ধ করতে পারে।
  • লভ্যাংশের পরিবর্তনশীলতা: ডিভিডেন্ট শেয়ারের আয়ের নির্ভরতা লভ্যাংশের ওপর, যা পরিবর্তনশীল হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে উচ্চ লভ্যাংশ দেওয়া হলেও ভবিষ্যতে এটি কমে যেতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
  • মূল্যবৃদ্ধি সীমিত হওয়া: লভ্যাংশ প্রদানে মনোযোগী কোম্পানিগুলি তাদের মুনাফার একটি বড় অংশ লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে, যা পুনঃবিনিয়োগের জন্য কম পরিমাণে রাখা হয়। এর ফলে কোম্পানির বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমে যায় এবং শেয়ার মূল্যের বৃদ্ধিও সীমিত হতে পারে।
  • কর সংক্রান্ত অসুবিধা: কিছু দেশে লভ্যাংশ আয় উচ্চ করের আওতাভুক্ত হতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের নীট আয়ে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে, কর কাঠামোর ওপর নির্ভর করে লভ্যাংশ আয় থেকে করের পরিমাণ অন্যান্য আয় স্রোতের তুলনায় বেশি হতে পারে।
  • নগদ প্রবাহের উপর নির্ভরতা: লভ্যাংশ প্রদান নগদ প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল, যা কোম্পানির অস্থায়ী নগদ প্রবাহের সমস্যার ক্ষেত্রে প্রভাবিত হতে পারে। নগদ সংকটের সময় কোম্পানি লভ্যাংশ কমাতে বা বন্ধ করতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের আয়ের উৎসকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
  • বাজার ঝুঁকি: ডিভিডেন্ট শেয়ারের মূল্য বাজারের সাথে সম্পর্কিত এবং বাজারের ওঠানামার সময় এর মূল্যও পরিবর্তিত হতে পারে। ফলে, বাজার পতনের সময় ডিভিডেন্ট শেয়ারের মূল্যও হ্রাস পেতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত মুনাফার অভাব: লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানিগুলি সাধারণত মুনাফার একটি নির্দিষ্ট অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করে। ফলে, কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য উচ্চ-ফলনশীল বিনিয়োগে অর্থ পুনঃবিনিয়োগের সুযোগ কম থাকে।
  • মুদ্রাস্ফীতি ঝুঁকি: ডিভিডেন্ট শেয়ারের আয় মুদ্রাস্ফীতির সাথে সাথে মূল্য কমে যেতে পারে। যদি লভ্যাংশ বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির হারকে অতিক্রম করতে না পারে, তাহলে বিনিয়োগকারীর প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।


১.১.৪ বন্ড (Bonds)

বন্ড হলো একটি ঋণ সিকিউরিটি যা সরকার, কর্পোরেশন, বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দ্বারা ইস্যু করা হয়। এটি একটি ধরনের ঋণ চুক্তি, যেখানে বন্ডধারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট সময় পরে মূলধন ফেরত পেতে এবং একটি নির্দিষ্ট সুদ প্রাপ্তি নিশ্চিত করে। বন্ডের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে এবং এগুলি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। বন্ড একটি স্থির আয় তৈরির সম্ভাবনা প্রদান করে এবং এটি বিনিয়োগের একটি নিরাপদ পদ্ধতি হতে পারে, তবে এর ঝুঁকি এবং উপকারিতা বুঝে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।


বন্ডের বৈশিষ্ট্য

  • মূলধন ফেরত: বন্ডের নির্ধারিত মেয়াদ শেষে বন্ডধারীকে তার মূলধন ফেরত দেওয়া হয়।
  • সুদ: বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঋণগ্রহীতাকে নির্দিষ্ট সময়ে সুদ প্রদান করে। এই সুদ সাধারণত নির্দিষ্ট এবং পূর্বনির্ধারিত হয়।
  • মেয়াদ: বন্ডের একটি নির্ধারিত মেয়াদ থাকে, যা সাধারণত কয়েক বছর থেকে দশকের মধ্যে হতে পারে।
  • ক্রেডিট রেটিং: বন্ডের ক্রেডিট রেটিং বিভিন্ন সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত হয়, যা বন্ডের ঝুঁকি এবং সুদের হার নির্ধারণে সাহায্য করে।


বন্ডের প্রকারভেদ

  • গভর্নমেন্ট বন্ড (Government Bonds): কেন্দ্রীয় সরকার বা স্থানীয় সরকার দ্বারা ইস্যু করা হয়। যেমন: Teasury বন্ড, ইউএস টেজারি বন্ড।
  • কর্পোরেট বন্ড (Corporate Bonds): কর্পোরেশন দ্বারা ইস্যু করা হয়। এই বন্ডগুলি সাধারণত বেশি সুদ প্রদান করে, তবে ঝুঁকিও বেশি হতে পারে। যেমন: সাধারণ কর্পোরেট বন্ড, মিউচুয়াল বন্ড।
  • মিউনিসিপ্যাল বন্ড (Municipal Bonds): স্থানীয় সরকার কর্তৃক ইস্যু করা হয় এবং প্রাথমিকভাবে স্থানীয় প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলির সুদ সাধারণত আয়কর মুক্ত। যেমন: স্কুল বন্ড, রাস্তা উন্নয়ন বন্ড।
  • কনভার্টিবল বন্ড (Convertible Bonds): নির্দিষ্ট শর্তে বন্ডধারীকে শেয়ারবাজারে শেয়ার বা ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরিত করার সুযোগ দেয়। যেমন: কনভার্টিবল কর্পোরেট বন্ড।
  • জিরো কুপন বন্ড (Zero-Coupon Bonds): এই বন্ডগুলি থেকে কোন সুদ পাওয়া যায় না, এবং এই বন্ড সাধারণত মূলধনের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি হয়। বন্ডের মেয়াদ শেষ হলে পূর্ণ মূলধন পরিশোধ করা হয়। যেমন: সরকারী জিরো কুপন বন্ড।


উদাহরণ: এবি ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড হলো একটি বাংলাদেশী শেয়ার মার্কেট লিস্টেড বন্ডের উদাহরণ। এই বন্ডটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এবং ব্যাংকের মূলধন শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে ইস্যু করা হয়। পারপেচুয়াল বন্ডগুলি নির্দিষ্ট সুদের হারে মুনাফা প্রদান করে এবং এর মেয়াদ অনন্তকাল হতে পারে, অর্থাৎ, নির্দিষ্ট মেয়াদের শেষে এটি পুনঃনবায়ন করা যেতে পারে। এই বন্ডটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে, এবং শেয়ার বাজারে লিস্টেড থাকায় সহজে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়।


বন্ডের সুবিধা

  • নির্দিষ্ট আয়: সুদ প্রদান নিশ্চিত করে, যা স্থির আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • ঝুঁকি কম: সাধারণত বন্ডের ঝুঁকি শেয়ার বাজারের তুলনায় কম।
  • প্রধান অগ্রাধিকার: কোম্পানির দেউলিয়া হলে বন্ডধারীরা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের আগে ক্ষতিপূরণ পান।


বন্ডের সীমাবদ্ধতা

  • ক্রেডিট ঝুঁকি: ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে বন্ডধারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • সুদের হার ঝুঁকি: বাজারে সুদের হার পরিবর্তনের কারণে বন্ডের মূল্য পরিবর্তিত হতে পারে।
  • মেয়াদ পরিসীমা: দীর্ঘমেয়াদী বন্ডের মূল্য সুদের হার পরিবর্তনের প্রভাবে বেশি পরিবর্তিত হতে পারে।


১.১.৫ সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার (Subordinated Shares) 

সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার হলো এমন ধরনের শেয়ার বা বিনিয়োগ যা কোম্পানি লিকুইডেট বা নিষ্পত্তি হলে অন্যান্য ঋণদাতাদের বা শেয়ারহোল্ডারদের তুলনায় পরিশোধের ক্ষেত্রে পরে দাবিদার হয়। অর্থাৎ, অন্যান্য ঋণ ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তি দিয়ে সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পরিশোধ করা হয়। এই শেয়ারগুলোর ঝুঁকি ও সুবিধার ভারসাম্য বিনিয়োগকারীদের কৌশল ও ঝুঁকি সহনশীলতার ওপর নির্ভর করে, এবং এগুলো বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।


সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারের বৈশিষ্ট্য 

  • লভ্যাংশ ও পরিশোধ: সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানি লিকুইডেট হলে শুধুমাত্র তখনই তাদের প্রাপ্তি দাবি করতে পারেন যখন অন্যান্য ঋণগ্রহীতাদের এবং প্রিফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পরিশোধিত হয়ে যায়।
  • ঝুঁকি: উচ্চ ঝুঁকি; কারণ কোম্পানি যদি আর্থিক সংকটে পড়ে বা লিকুইডেট হয়, তখন সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • লাভের অংশীদারিত্ব: এই শেয়ারগুলো সাধারণত শেয়ারহোল্ডারদের লাভের অংশীদারিত্ব প্রদান করে, কিন্তু লভ্যাংশ প্রদান করার ক্ষেত্রে প্রিফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের পর।
  • ভোটাধিকার: কিছু সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার সাধারণভাবে ভোটাধিকার থাকতে পারে, তবে এটি কোম্পানির নীতির ওপর নির্ভর করে।


উদাহরণ: সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার সাধারণত উন্নত এবং উচ্চ ঝুঁকির বিনিয়োগ কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মাধ্যমে কোম্পানি নতুন শেয়ার ইস্যু করে তার মূলধন বৃদ্ধি করতে পারে, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা উচ্চ ঝুঁকি ও কম পরিশোধের নিশ্চয়তা নিয়ে বিনিয়োগ করে।


সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারের সুবিধা

  • উচ্চ লভ্যাংশের সম্ভাবনা: সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার সাধারণত উচ্চ লভ্যাংশ প্রদান করে, বিশেষ করে যদি কোম্পানি ভাল পারফর্ম করে এবং লাভ বৃদ্ধি পায়। কারণ এই শেয়ারগুলো অন্যান্য ঋণগ্রহীতাদের পরে লভ্যাংশ প্রদান করে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি উন্নত লাভের সুযোগ সরবরাহ করতে পারে।
  • বৃদ্ধি পৃষ্ঠি বিনিয়োগের সুযোগ: কোম্পানি সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার ইস্যু করে মূলধন বৃদ্ধি করতে পারে, যা কোম্পানির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানি ভবিষ্যতে ভাল পারফর্ম করলে, বিনিয়োগকারীরা এই বৃদ্ধির লাভ উপভোগ করতে পারেন।
  • কোম্পানির মূলধন কাঠামোতে অংশগ্রহণ: সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার মালিকরা কোম্পানির মূলধন কাঠামোর অংশ হিসেবে কাজ করে, যা তাদের কোম্পানির প্রবৃদ্ধি এবং সফলতার সাথে সম্পর্কিত রাখে।
  • বিশেষ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তাবিত: সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার সাধারণত কোম্পানি বিশেষ পরিস্থিতির জন্য যেমন রিফাইন্যান্সিং বা স্ট্রাকচারাল পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই শেয়ারগুলো বিক্রি করে কোম্পানি তার আর্থিক অবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারে।
  • ভোটাধিকার (কিছু ক্ষেত্রে): কিছু সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার ভোটাধিকার প্রদান করে, যা কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে যদি বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির পরিচালনার ওপর প্রভাব রাখতে চান।
  • সিকিউরিটির এক্সপোজার: সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার সাধারণত অন্যান্য প্রকারের শেয়ারের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত হতে পারে, যেহেতু এটি কোম্পানির মূলধনের অংশ হিসেবে কাজ করে এবং দীর্ঘমেয়াদী লাভের সম্ভাবনা সরবরাহ করে।


সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • উচ্চ ঝুঁকি: সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার উচ্চ ঝুঁকির সাথে যুক্ত, কারণ কোম্পানি যদি লিকুইডেট হয়, তখন অন্যান্য ঋণগ্রহীতাদের পরশুধু সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পরিশোধ করা হয়। এর মানে হলো, যদি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খারাপ হয় বা সম্পত্তি কম থাকে, তাহলে সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারহোল্ডাররা তাদের বিনিয়োগ হারানোর ঝুঁকি বহন করতে পারে।
  • কম পরিশোধের অগ্রাধিকার: কোম্পানি লিকুইডেট হলে, সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারহোল্ডারদের পরিশোধের অগ্রাধিকার থাকে না। অর্থাৎ, কোম্পানির ঋণগ্রহীতাদের এবং প্রিফারেন্স শেয়ারহোল্ডারদের পর তাদের দাবি পরিশোধ করা হয়, যা অনেক সময় পূর্ণাঙ্গ পরিশোধ নিশ্চিত করে না।
  • অস্থিতিশীল লভ্যাংশ: সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারগুলোর লভ্যাংশ স্থিতিশীল নাও হতে পারে এবং কোম্পানির লাভের ওপর নির্ভর করে। যদি কোম্পানি লাভজনক না হয়, তবে লভ্যাংশ প্রদান করা হতে পারে না বা এটি কম হতে পারে।
  • সীমিত ভোটাধিকার: অনেক সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার ভোটাধিকার প্রদান করে না, যা শেয়ারহোল্ডারদের কোম্পানির পরিচালনা ও নীতির উপর প্রভাব রাখার সুযোগ কমিয়ে দেয়।
  • বাজারের অস্থিরতা: সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ার বাজারের অস্থিরতার ওপর প্রভাবিত হতে পারে, যার ফলে তাদের মূল্য দ্রুত ওঠানামা করতে পারে। এই অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  • অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব: কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বা বাজারের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কারণে সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারগুলোর মান প্রভাবিত হতে পারে। অর্থনৈতিক মন্দা বা শিল্পের অবনতি শেয়ারগুলোর মূল্য কমাতে পারে।
  • সীমিত বাজার প্রবৃদ্ধি: সাবঅর্ডিনেটেড শেয়ারগুলি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য প্রযোজ্য হয়, এবং প্রাথমিকভাবে দ্রুত বাজার প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হয় না।


১.১.৬ পসিবল শেয়ার (Putable Shares)

পসিবল শেয়ার হলো একটি বিশেষ ধরনের শেয়ার যা বিনিয়োগকারীদের নির্দিষ্ট শর্তে নির্দিষ্ট মূল্য বা সময়ের মধ্যে শেয়ারটি ফেরত দেওয়ার (put) অধিকার প্রদান করে। সাধারণভাবে, পসিবল শেয়ারগুলো বিনিয়োগকারীদের একটি বিকল্প প্রদান করে, যার মাধ্যমে তারা নির্দিষ্ট সময় পরে শেয়ারটি কোম্পানির কাছে ফেরত দিতে পারে।


পসিবল শেয়ারের বৈশিষ্ট্য

  • পুনঃক্রয়ের অধিকার: পসিবল শেয়ার বিনিয়োগকারীদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে শেয়ারটি কোম্পানির কাছে ফেরত দেওয়ার অধিকার প্রদান করে। এটি সাধারণত শেয়ারের মূল্য হ্রাসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • নির্ধারিত মূল্য: পসিবল শেয়ারের পুনঃক্রয়ের মূল্য সাধারণত নির্ধারিত থাকে, যা শেয়ারহোল্ডারদের নির্দিষ্ট মূল্যে শেয়ার ফেরত দেওয়ার সুযোগ দেয়। এটি সাধারণত পসিবল শেয়ারের বাজার মূল্য কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দেয়।
  • ঝুঁকি কমানোর সুযোগ: শেয়ার বাজারে যদি দামের পতন ঘটে, পসিবল শেয়ারহোল্ডাররা তাদের শেয়ার নির্ধারিত মূল্যে ফেরত দিয়ে ঝুঁকি কমাতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রদান করে।
  • লভ্যাংশ: পসিবল শেয়ারগুলো সাধারণভাবে লভ্যাংশ প্রদান করতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের লাভের অংশীদারিত্ব প্রদান করে।
  • কম ঝুঁকি: পসিবল শেয়ার সাধারণভাবে কম ঝুঁকি প্রদান করে, কারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার ফেরত দেওয়ার অধিকার ব্যবহার করে ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে পারে।


উদাহরণ: বাংলাদেশে পসিবল শেয়ারের প্রকৃত উদাহরণ খুবই কম, কারণ এই ধরনের শেয়ার আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি প্রচলিত। বাংলাদেশি বাজারে শেয়ারহোল্ডারদের ঝুঁকি কমানোর জন্য কোম্পানিগুলি বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাবনা করতে পারে, কিন্তু তা সবসময় পসিবল শেয়ারের সরাসরি বৈশিষ্ট্য বহন করে না। তবে কিছু ব্যাংক, যেমন- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড বিভিন্ন প্রকারের শেয়ার ইস্যু করে থাকে এবং কখনো কখনো বিশেষ শর্তে শেয়ার ফেরত নেওয়ার সুযোগ প্রদান করে। যদিও সঠিক পসিবল শেয়ার হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ না হলেও, বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট শর্তে শেয়ার ফেরত দেওয়ার সুযোগ পেতে পারেন।


পসিবল শেয়ারের সুবিধা

  • ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ: পসিবল শেয়ার বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়, কারণ তারা ক্ষতির ক্ষেত্রে শেয়ার ফেরত দিতে পারে।
  • নির্ধারিত মূল্য সুবিধা: নির্ধারিত মূল্যে শেয়ার ফেরত দেওয়ার সুযোগ বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
  • লভ্যাংশের সুবিধা: লভ্যাংশের সুবিধা প্রদান করে, যা বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত আয় সরবরাহ করে।


পসিবল শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • কম মুনাফার সম্ভাবনা: পসিবল শেয়ারগুলোর বাজার মূল্য বৃদ্ধি হলে, বিনিয়োগকারীরা নির্ধারিত মূল্যে ফেরত দেওয়ার সুযোগ হারাতে পারে, যা তাদের লাভের সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।
  • কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ: পসিবল শেয়ারগুলি কোম্পানির মূলধন কাঠামোকে প্রভাবিত করতে পারে এবং কোম্পানির আর্থিক পরিকল্পনার ওপর নির্ভরশীল হতে পারে।



১.১.৭ বোনাস শেয়ার (Bonus Shares)

বোনাস শেয়ার হলো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের জন্য একটি বিশেষ ধরনের শেয়ার, যা সাধারণত অতিরিক্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়। এটি মূলত কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা বাড়ানোর একটি উপায় এবং এটি কোনো মূলমূল্য প্রাপ্তি ছাড়াই প্রদান করা হয়। বোনাস শেয়ার একটি সাধারণ কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোম্পানির মূলধনের পুনঃবিন্যাসের একটি উপায় হিসেবে কাজ করে। এটি শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ায় এবং কোম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্যকে সাময়িকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।


বোনাস শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • বিনামূল্যে বিতরণ: বোনাস শেয়ার শেয়ারহোল্ডারদের কোনো অতিরিক্ত মূলধন বিনিয়োগ ছাড়াই প্রদান করা হয়। এটি মূলত কোম্পানির রিজার্ভ বা লাভ থেকে বিতরণ করা হয়, যা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • শেয়ারহোল্ডারদের সংখ্যা বাড়ানো: বোনাস শেয়ার সাধারণত শেয়ারহোল্ডারদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রদান করা হয়, যা কোম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • কোম্পানির মূলধনের পুনঃবিন্যাস: বোনাস শেয়ার প্রদান কোম্পানির মূলধনের পুনঃবিন্যাস হিসেবে কাজ করে। কোম্পানি সাধারণত তার রিজার্ভ বা আয় থেকে বোনাস শেয়ার ইস্যু করে, যা মূলধনের বৃদ্ধি ছাড়াই শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা বাড়ায়।
  • শেয়ারের বাজার মূল্য: বোনাস শেয়ার বিতরণের পরে কোম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্য সাধারণত হ্রাস পায়। কারণ নতুন শেয়ার ইস্যু করার ফলে শেয়ারের পরিমাণ বাড়ে, যার ফলে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য কমে যায়।
  • অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড নয়: বোনাস শেয়ারগুলি অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড হিসেবে বিবেচিত হয় না। এটি মূলত মালিকানা বৃদ্ধির একটি উপায়, কিন্তু এটি কোনো অতিরিক্ত নগদ আয় বা ডিভিডেন্ড প্রদান করে না।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি কোম্পানি ১:১ রেশিওতে বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। এর অর্থ, প্রতি একটি বর্তমান শেয়ারের জন্য শেয়ারহোল্ডাররা একটি অতিরিক্ত শেয়ার পাবেন। যদি একজন শেয়ারহোল্ডারের কাছে ১০০টি শেয়ার থাকে, তাহলে তিনি ১০০টি বোনাস শেয়ার পাবেন এবং মোট ২০০টি শেয়ার হয়ে যাবে।


বোনাস শেয়ারের সুবিধা

  • মালিকানা বৃদ্ধি: শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা বৃদ্ধি পায়, যা কোম্পানির মূলধনের বৃদ্ধি ছাড়াই হয়।
  • বাজার মূল্য প্রভাবিত: নতুন শেয়ার ইস্যু করার ফলে বাজার মূল্য হ্রাস পেতে পারে, যা কিছু বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে।


বোনাস শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • মার্কেট ভ্যালু হ্রাস: নতুন শেয়ার বিতরণের ফলে শেয়ারের বাজার মূল্য সাধারণত কমে যায়, যা শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগের মূল্য হ্রাস করতে পারে।
  • কোনো অতিরিক্ত নগদ সুবিধা নেই: বোনাস শেয়ার কোনো অতিরিক্ত নগদ ডিভিডেন্ড প্রদান করে না, এটি কেবল মালিকানা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়।


১.১.৮ রাইট শেয়ার (Rights Shares)

রাইট শেয়ার হলো একটি বিশেষ ধরনের শেয়ার যা কোম্পানি তার বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের প্রথমত প্রস্তাব করে। সাধারণত এটি নতুন মূলধন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ইস্যু করা হয়। রাইট শেয়ার হোল্ডারদেরকে তাদের বর্তমান শেয়ারহোল্ডিং অনুপাতে অতিরিক্ত শেয়ার কেনার অধিকার প্রদান করে, যা সাধারণত কম মূল্যে অথবা ডিসকাউন্টে প্রদান করা হয়। রাইট শেয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক কৌশল যা কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয় এবং বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের জন্য একটি সুবিধাজনক বিনিয়োগ সুযোগ প্রদান করে। এটি শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা বাড়ায় এবং কোম্পানির আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।


রাইট শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • প্রথম অধিকার: রাইট শেয়ার ইস্যু করার সময়, বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের প্রথমত শেয়ার কেনার অধিকার প্রদান করা হয়। এটি তাদের মালিকানা বাড়ানোর সুযোগ দেয় এবং নতুন শেয়ার ইস্যু করার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।
  • ডিসকাউন্ট মূল্যে: রাইট শেয়ার সাধারণত বাজারমূল্যের তুলনায় কম মূল্যে প্রদান করা হয়। এটি বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের জন্য একটি সুবিধাজনক সুযোগ, কারণ তারা কম দামে অতিরিক্ত শেয়ার কিনতে পারে।
  • নতুন মূলধন সংগ্রহ: কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যু করে নতুন মূলধন সংগ্রহ করে। এই মূলধন কোম্পানির সম্প্রসারণ, প্রকল্প বিনিয়োগ, বা অন্যান্য আর্থিক চাহিদার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার: রাইট শেয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করলে শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা বাড়ে এবং তাদের সিংহভাগ শেয়ার সংরক্ষিত থাকে। যদি শেয়ারহোল্ডাররা রাইট শেয়ার কিনতে অস্বীকৃত হন, তাদের অধিকার অন্যদের দ্বারা কেনা যেতে পারে।
  • শেয়ারের বাজার মূল্য: রাইট শেয়ার ইস্যু করার পর কোম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্য কিছুটা হ্রাস পেতে পারে কারণ নতুন শেয়ার ইস্যু করা হয় এবং শেয়ারের সংখ্যা বাড়ে।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি কোম্পানি ১:২ রেশিওতে রাইট শেয়ার ঘোষণা করেছে। এর মানে, প্রতি দুইটি বিদ্যমান শেয়ারের জন্য শেয়ারহোল্ডাররা একটি অতিরিক্ত শেয়ার কিনতে পারে। যদি একজন শেয়ারহোল্ডারের কাছে ১০০টি শেয়ার থাকে, তিনি ৫০টি রাইট শেয়ার কিনতে পারবেন।


রাইট শেয়ারের সুবিধা

  • ডিসকাউন্ট মূল্যে কেনার সুযোগ: শেয়ারহোল্ডাররা সাধারণত কম মূল্যে নতুন শেয়ার কেনার সুযোগ পায়।
  • মালিকানা বৃদ্ধি: শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা বাড়ানো যায়, যা তাদের কোম্পানির মালিকানায় অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করে।
  • নতুন মূলধন সংগ্রহ: কোম্পানি নতুন মূলধন সংগ্রহ করতে পারে, যা তার সম্প্রসারণ বা অন্যান্য আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক হয়।


রাইট শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • বাজার মূল্য হ্রাস: নতুন শেয়ার ইস্যু করার ফলে শেয়ারের বাজার মূল্য কিছুটা কমে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত বিনিয়োগের প্রয়োজন: শেয়ারহোল্ডারদের অতিরিক্ত শেয়ার কেনার জন্য নতুন বিনিয়োগ করতে হতে পারে, যা কিছু বিনিয়োগকারীর জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।


১.১.৯ ট্রেজারি শেয়ার (Treasury Shares)

ট্রেজারি শেয়ার হলো একটি ধরনের শেয়ার যা একটি কোম্পানি কিনে রাখে নিজস্ব শেয়ারহোল্ডারদের থেকে পুনঃরায় কিনে নেওয়ার মাধ্যমে। এই শেয়ারগুলি বাজারে পুনঃরায় বিক্রি না করা হয় এবং সাধারণত কোম্পানির নিজস্ব সত্ত্বার অধীনে থাকে। ট্রেজারি শেয়ারগুলি একটি কোম্পানির নিজেদের শেয়ারের একটি অংশ যা কোম্পানির মূলধনের হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হয় এবং এটি সাধারণত কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা হিসাবেও গণনা করা হয় না। ট্রেজারি শেয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল যা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি কোম্পানির মূলধন ব্যবস্থাপনার একটি অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


ট্রেজারি শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • শেয়ার পুনঃক্রয়: ট্রেজারি শেয়ার সাধারণত কোম্পানি বাজার থেকে তার নিজের শেয়ার কিনে রাখার মাধ্যমে সংগ্রহ করে। এই শেয়ারগুলি কোম্পানির নিজস্ব সত্ত্বার অধীনে থাকে এবং সাধারণত পুনঃরায় বাজারে বিক্রি করা হয় না।
  • মালিকানা বৃদ্ধি: কোম্পানি যদি অতিরিক্ত শেয়ার কিনে রাখে, তবে সেই শেয়ারগুলি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা হ্রাস করে। এটি বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারের মালিকানা বৃদ্ধি করে।
  • মালিকানা পরিমাণ: ট্রেজারি শেয়ারগুলির সংখ্যা কোম্পানির মোট শেয়ারের সংখ্যা থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাই এটি কোম্পানির মোট মূলধনের হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হয়।


ট্রেজারি শেয়ারের ব্যবহার

  • মূলধন ব্যবস্থাপনা: কোম্পানি শেয়ারগুলি কিনে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
  • অ্যাকুইজিশন ও পে পার্সনেল: ট্রেজারি শেয়ার কর্মীদের বোনাস, স্টক অপশন বা কোম্পানির অধিগ্রহণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ডিভিডেন্ড পুনর্বিন্যাস: ট্রেজারি শেয়ার কম শেয়ারহোল্ডারদের সংখ্যা রেখে কোম্পানির ডিভিডেন্ড পরিমাণ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
  • অ্যাকাউন্টিং: ট্রেজারি শেয়ারগুলি কোম্পানির ব্যালেন্স শিটে একটি পজিটিভ বা নেগেটিভ সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয় না এবং সাধারণত ‘ট্রেজারি স্টক’ হিসাবে প্রায়শই ব্যাখ্যা করা হয়।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি কোম্পানি ১০০,০০০ শেয়ার ইস্যু করেছে এবং ১০,০০০ শেয়ার ট্রেজারি শেয়ার হিসেবে কিনে রেখেছে। এই ১০,০০০ শেয়ার বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে না এবং কোম্পানির মোট শেয়ারের সংখ্যা হিসেবে গণনা করা হয় না।


ট্রেজারি শেয়ারের সুবিধা

  • মালিকানা বৃদ্ধি: বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারের মালিকানা বৃদ্ধি পায়, যা তাদের নিয়ন্ত্রণ ও লাভের অংশ বাড়ায়।
  • মূলধন নিয়ন্ত্রণ: কোম্পানি শেয়ারগুলির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করতে পারে।
  • অন্যান্য উদ্দেশ্য: স্টক অপশন, কর্মী বোনাস বা অধিগ্রহণের জন্য ট্রেজারি শেয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।


ট্রেজারি শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • মুদ্রা ব্যবহার: ট্রেজারি শেয়ার কিনতে কোম্পানিকে অর্থ ব্যয় করতে হয়, যা অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
  • মার্কেট ভ্যালু হ্রাস: শেয়ার পুনঃরায় কিনলে কোম্পানির বাজার মূল্য সাময়িকভাবে প্রভাবিত হতে পারে।


১.১.১০. সুপারভোটিং শেয়ার (Super Voting Shares)

সুপারভোটিং শেয়ার হলো একটি বিশেষ ধরনের শেয়ার যার মালিকদের বিশেষ ধরনের ভোটাধিকার থাকে যা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী। এই শেয়ারগুলি মালিকদের কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অধিক প্রভাব প্রদান করে, যেমন পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন বা বিশেষ সিদ্ধান্তগুলিতে। সুপারভোটিং শেয়ার একটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যখন প্রতিষ্ঠাতা বা ব্যবস্থাপনা একটি বড় প্রভাব চান কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলিতে। এটি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ক্ষমতার একটি অসামান্য বিভাজন তৈরি করে।


সুপারভোটিং শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • বহুগুণ ভোটাধিকার: সুপারভোটিং শেয়ার সাধারণভাবে অন্যান্য শেয়ারের তুলনায় অনেক বেশি ভোটাধিকার প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সুপারভোটিং শেয়ার একটি সাধারণ শেয়ারের তুলনায় ১০টি বা তার বেশি ভোট প্রদান করতে পারে।
  • নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব: এই ধরনের শেয়ার মালিকদের কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় প্রভাব প্রদান করে। এটি বিশেষ করে প্রতিষ্ঠাতা বা ব্যবস্থাপকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে যারা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চান।
  • শেয়ারের বৈশিষ্ট্য: সুপারভোটিং শেয়ার সাধারণত প্রতিষ্ঠাতা, এক্সিকিউটিভ বা বিশেষাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য ইস্যু করা হয় এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে পাওয়া যায় না।
  • কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ: সুপারভোটিং শেয়ারধারীরা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন, অধিগ্রহণ, মিশ্রণ, বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলিতে একটি বড় প্রভাব রাখতে সক্ষম।
  • বাজারে প্রভাব: সুপারভোটিং শেয়ার কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবের পার্থক্য তৈরি করে। এটি সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ভোটাধিকার কমিয়ে দেয় এবং প্রতিষ্ঠাতা বা অন্যান্য শক্তিশালী ব্যক্তিদের জন্য বেশি প্রভাব প্রদান করে।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি প্রযুক্তি কোম্পানি ১০টি ভোটাধিকার প্রদান করে এমন সুপারভোটিং শেয়ার ইস্যু করেছে, যখন সাধারণ শেয়ারগুলিতে ১টি ভোটাধিকার রয়েছে। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা যদি সুপারভোটিং শেয়ার মালিক হন, তবে তারা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে বা বড় সিদ্ধান্তগুলিতে বড় প্রভাব রাখতে পারবেন।


সুপারভোটিং শেয়ারের সুবিধা

  • নিয়ন্ত্রণ: প্রতিষ্ঠাতারা বা ব্যবস্থাপনার সদস্যরা কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম হন।
  • স্বাধীনতা: প্রতিষ্ঠাতারা বা বিশেষ ব্যক্তিরা কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং স্ট্র্যাটেজির ওপর অধিক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন।


সুপারভোটিং শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার: সুপারভোটিং শেয়ার সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ভোটাধিকার হ্রাস করে, যা তাদের কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ কমিয়ে দেয়।
  • বাজারের প্রতিক্রিয়া: বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ সুপারভোটিং শেয়ার সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে।


১.১.১১. নন-ভোটিং শেয়ার (Non-Voting Shares)

নন-ভোটিং শেয়ার হলো এমন একটি শেয়ার যার মালিকদের কোম্পানির পরিচালনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভোটাধিকার প্রদান করা হয় না। অর্থাৎ, এই ধরনের শেয়ারধারীরা কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যেমন পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন, মিশ্রণ, অধিগ্রহণ, বা বিশেষ সিদ্ধান্তগুলিতে কোনো ভোট দিতে পারে না। নন-ভোটিং শেয়ার কোম্পানির মালিকানা এবং লাভের অংশীদারিত্ব প্রদান করে, কিন্তু কোম্পানির পরিচালনায় কোনো প্রভাব রাখে না। এটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ও মালিকানা কাঠামো বজায় রাখার একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


নন-ভোটিং শেয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • ভোটাধিকারহীন: নন-ভোটিং শেয়ারের মালিকদের কোন ভোটাধিকার থাকে না। তারা কোম্পানির পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে না।
  • ডিভিডেন্ড এবং লাভ: সাধারণত, নন-ভোটিং শেয়ারগুলির জন্য ডিভিডেন্ড এবং লাভের অংশ অন্যান্য শেয়ারের মতোই প্রদান করা হয়। অর্থাৎ, তারা কোম্পানির মুনাফা এবং লভ্যাংশ পেতে পারে, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে পারে না।
  • প্রাথমিক এবং প্রাথমিক শেয়ার: নন-ভোটিং শেয়ার সাধারণত নতুন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের জন্য প্রাথমিকভাবে ইস্যু করা হয় অথবা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য হতে পারে। এটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
  • মূলধন সংগ্রহ: নন-ভোটিং শেয়ার কোম্পানির মূলধন সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে মূল নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিরা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেন।
  • শেয়ার বাজার মূল্য: নন-ভোটিং শেয়ারের বাজার মূল্য সাধারণত সাধারণ শেয়ারগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে, তবে ভোটাধিকারহীন হওয়ার কারণে কিছু বিনিয়োগকারী হয়তো এই শেয়ারগুলিতে কম আগ্রহী হতে পারে।


উদাহরণ: ধরা যাক, একটি কোম্পানি সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ভোটাধিকার প্রদান করে, কিন্তু কিছু বিশেষ শেয়ার ইস্যু করেছে যেগুলির জন্য ভোটাধিকার নেই। এই নন-ভোটিং শেয়ারধারীরা কোম্পানির লাভ এবং ডিভিডেন্ডের অংশ পাবে, কিন্তু কোম্পানির পরিচালনা বা বিশেষ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভোট দিতে পারবে না।


নন-ভোটিং শেয়ারের সুবিধা

  • ডিভিডেন্ড সুবিধা: শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির লাভ এবং ডিভিডেন্ড পেতে পারে।
  • মালিকানা: শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির মালিকানা অংশীদার হতে পারে, যদিও তারা পরিচালনার সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করতে পারে না।


নন-ভোটিং শেয়ারের সীমাবদ্ধতা

  • ভোটাধিকার অভাব: শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে পারে না, যা তাদের কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণের সুযোগ কমিয়ে দেয়।
  • বাজারের প্রতিক্রিয়া: কিছু বিনিয়োগকারী ভোটাধিকারহীন শেয়ারে কম আগ্রহী হতে পারে, যা শেয়ারের বাজার মূল্যকে প্রভাবিত করতে পারে।


২. শেয়ার মার্কেট

শেয়ার মার্কেট বা শেয়ার বাজার হলো একটি জটিল আর্থিক ব্যবস্থা যেখানে কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনা-বেচা করা হয়। এটি একটি প্ল্যাটফর্ম যা কোম্পানিগুলোর মূলধন সংগ্রহ এবং বিনিয়োগকারীদের আয়ের সুযোগ করে দেয়। কোম্পানিগুলো যখন তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ বা উন্নয়নের জন্য অর্থের প্রয়োজন অনুভব করে, তখন তারা শেয়ার ইস্যু করে এবং শেয়ার মার্কেটে তা বিক্রি করে। বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ারগুলো কিনে কোম্পানির একটি অংশের মালিকানা পায়, যা পরবর্তীতে লভ্যাংশ এবং শেয়ারের মূল্যের বৃদ্ধি থেকে মুনাফা আনার সুযোগ দেয়। শেয়ার মার্কেটের দাম ও মূল্যায়ন সাধারণত কোম্পানির আয়, অর্থনৈতিক প্রবণতা, বাজারের চাহিদা-সরবরাহ, এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, কারণ এখানে লাভের পাশাপাশি ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকে। এজন্য বিনিয়োগকারীদের বাজার বিশ্লেষণ, অর্থনৈতিক সূচক, এবং কোম্পানির পারফরম্যান্সের উপর গভীর নজর রাখতে হয়। শেয়ার মার্কেট দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, কারণ এটি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রতিফলিত করে। শক্তিশালী শেয়ার মার্কেট অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক হিসেবে কাজ করে, যা দেশের সামগ্রিক আর্থিক সুস্থতাকে প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশে শেয়ার মার্কেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC), যা শেয়ার মার্কেটের কার্যক্রমকে সুশৃঙ্খল এবং সুরক্ষিত রাখতে কাজ করে। এছাড়া, শেয়ার মার্কেট সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় প্ল্যাটফর্ম হলেও, এর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকির জন্য এটি বিশেষজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিতে বেশ গুরুত্ব পায়। সুতরাং, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করতে হলে জ্ঞান, গবেষণা, এবং সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


২.১ ইকুইটি মার্কেট (Equity Market)

ইকুইটি শব্দটি মূলত মালিকানার অংশ বোঝায়। ইকুইটি মার্কেটে কোম্পানির মালিকানার অংশ (শেয়ার) কেনা-বেচা করা হয়। এখানে শুধুমাত্র শেয়ার নয়, ইকুইটি সম্পর্কিত অন্যান্য ফিনান্সিয়াল প্রোডাক্ট যেমন প্রেফারেন্স শেয়ার, ডেরিভেটিভস, এবং প্রাইভেট ইকুইটি ইত্যাদি নিয়েও লেনদেন হতে পারে। ইকুইটি মার্কেট একটি বিস্তৃত ধারণা, যা বিভিন্ন ধরনের মালিকানাসংক্রান্ত সিকিউরিটিজ অন্তর্ভুক্ত করে। শেয়ার মার্কেট ইকুইটি মার্কেটের একটি নির্দিষ্ট অংশ হলেও, ইকুইটি মার্কেট শেয়ার ছাড়াও অন্যান্য ইকুইটি সম্পর্কিত প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে। শেয়ার মার্কেট ও ইকুইটি মার্কেট এর মূল পার্থক্য হলো- ইকুইটি মার্কেট হলো একটি বড় ধারণা, যেখানে শেয়ারের পাশাপাশি অন্যান্য ইকুইটি সম্পর্কিত সিকিউরিটিজও অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং শেয়ার মার্কেট ইকুইটি মার্কেটের একটি অংশ, যেখানে শুধুমাত্র শেয়ারের লেনদেন হয়।


২.২ শেয়ার মার্কেট কত প্রকার?

শেয়ার মার্কেট প্রধানত দুটি প্রধান প্রকারে বিভক্ত হয়: যথা- প্রাইমারি মার্কেট (Primary Market) ও সেকেন্ডারি মার্কেট (Secondary Market)


২.২.১ প্রাইমারি মার্কেট (Primary Market)

প্রাইমারি শেয়ার মার্কেট হলো সেই বাজার যেখানে নতুন শেয়ার ইস্যু করা হয় এবং এটি প্রথমবারের জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এই বাজারের মাধ্যমে কোম্পানিগুলি তাদের মূলধন সংগ্রহ করতে পারে এবং তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে পারে। প্রাইমারি শেয়ার মার্কেট কোম্পানির উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ এবং এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করে।


প্রাইমারি শেয়ার মার্কেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • নতুন শেয়ার ইস্যু: এই বাজারে কোম্পানিগুলি তাদের শেয়ার প্রথমবারের জন্য ইস্যু করে। এটি নতুন মূলধন সংগ্রহের একটি উপায়, যা কোম্পানির বিকাশ এবং সম্প্রসারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • প্রাথমিক পাবলিক অফারিং (IPO): প্রাইমারি শেয়ার মার্কেটের সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হলো IPO। IPO এর মাধ্যমে একটি কোম্পানি প্রথমবারের জন্য শেয়ার বাজারে শেয়ার ইস্যু করে এবং সাধারণ জনগণ, ইন্সটিটিউশনাল বিনিয়োগকারী, এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীরা শেয়ারগুলি ক্রয় করতে পারে।
  • প্রাইভেট প্লেসমেন্ট: এটি একটি বিকল্প পদ্ধতি যেখানে কোম্পানি শেয়ারগুলি সরাসরি কিছু নির্বাচিত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে। সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত নয়। এই পদ্ধতি সাধারণত বড় প্রতিষ্ঠান বা ধনাঢ্য ব্যক্তি দ্বারা ব্যবহৃত হয়।
  • মূলধন সংগ্রহ: প্রাইমারি শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে ইস্যুকৃত শেয়ারগুলি কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধি করে, যা ব্যবসায়িক প্রকল্প, গবেষণা ও উন্নয়ন, বা অন্য কোন ব্যয় পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • মূল্য নির্ধারণ: প্রাইমারি শেয়ার মার্কেটে শেয়ারের মূল্য সাধারণত কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, বাজারের চাহিদা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক উপাদানের ভিত্তিতে ইমার্জিং মার্কেট হয়। IPO এর সময়, মূল্য সাধারণত একটি প্রাথমিক ইমার্জিং মার্কেট পরিমাণে থাকে এবং পরে বাজারের চাহিদার উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে।
  • নিয়ন্ত্রণ এবং অনুমোদন: প্রাইমারি শেয়ার মার্কেটের লেনদেন সাধারণত নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এটি একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারা অনুমোদিত হতে হয়, যেমন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বা অন্যান্য দেশে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা।


প্রাইমারি শেয়ার মার্কেটের উদাহরণ

  • আইপিও (IPO): যদি একটি নতুন স্টার্টআপ কোম্পানি 'X' শেয়ার বাজারে প্রথমবারের জন্য শেয়ার ইস্যু করে এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রস্তাব করে, এটি একটি প্রাথমিক পাবলিক অফারিং (IPO) হিসেবে বিবেচিত হবে। বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ারগুলি ক্রয় করতে পারে এবং কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।
  • প্রাইভেট প্লেসমেন্ট: একটি কোম্পানি 'Y' কিছু বড় বিনিয়োগকারী বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার ইস্যু করে যা সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত নয়। এই প্রক্রিয়ায় কোম্পানিটি নির্দিষ্ট পরিমাণে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে।


প্রাইমারি শেয়ার মার্কেটের সুবিধা

  • মূলধন সংগ্রহ: কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করা হয়।
  • বাজারের উপস্থিতি: একটি আইপিও কোম্পানির বাজারে উপস্থিতি বৃদ্ধি করে এবং ব্র্যান্ড পরিচিতি উন্নত করতে সাহায্য করে।


প্রাইমারি শেয়ার মার্কেটের সীমাবদ্ধতা

  • নিয়ন্ত্রণ: প্রাইমারি শেয়ার মার্কেটের লেনদেন নিয়ন্ত্রিত হতে পারে এবং প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে।
  • রিস্ক: বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন শেয়ার কেনার সময় বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি থাকতে পারে, যেমন বাজারের অস্থিরতা।


২.২.২ সেকেন্ডারি মার্কেট (Secondary Market)

সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেট হলো সেই বাজার যেখানে ইতোমধ্যে ইস্যু করা শেয়ারগুলি পুনঃরায় ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। এটি একটি বাজার যেখানে শেয়ারহোল্ডাররা তাদের আগে কেনা শেয়ার অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে পারে এবং নতুন বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ারগুলি কিনতে পারে। সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেট কোম্পানির স্টকগুলির তরলতা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্রয়-বিক্রয়ের সুবিধা প্রদান করে। এটি বাজারের স্থিতিশীলতা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • পুনরায় লেনদেন: সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটে, শেয়ারগুলি প্রথমবার ইস্যুর পর পুনরায় লেনদেন হয়। কোম্পানির মূলধন এখানে সরাসরি প্রভাবিত হয় না; এটি শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • স্টক এক্সচেঞ্জ: সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটের প্রধান অংশ হলো স্টক এক্সচেঞ্জ। এখানে শেয়ারগুলি একটি নিয়মিত বাজারে লেনদেন হয়, যেমন নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE), নাসডাক, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ (LSE), এবং অন্যান্য।
  • ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) বাজার: এই বাজারে শেয়ারগুলি কোন কেন্দ্রীয় এক্সচেঞ্জ ছাড়াই ব্রোকার-ডিলারদের মাধ্যমে লেনদেন হয়। এটি এমন শেয়ারগুলির জন্য ব্যবহৃত হয় যা প্রধান এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয়।
  • মূল্য নির্ধারণ: সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটে শেয়ারের মূল্য বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে ইমার্জিং মার্কেট হয়। শেয়ারের দাম প্রতিদিনের লেনদেনের ফলস্বরূপ উঠানামা করতে পারে।
  • তরলতা: সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেট শেয়ারহোল্ডারদের জন্য তাদের শেয়ার দ্রুত বিক্রি করার সুবিধা প্রদান করে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উচ্চ তরলতা নিশ্চিত করে।
  • বিনিয়োগের সুযোগ: বিনিয়োগকারীরা সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটে শেয়ার কিনে বা বিক্রি করে তাদের বিনিয়োগের পোর্টফোলিও সামঞ্জস্য করতে পারে এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার সুযোগ পায়।


সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটের উদাহরণ

  • স্টক এক্সচেঞ্জ: একটি বিনিয়োগকারী যদি কোম্পানি 'A' এর শেয়ার কিনতে চায়, যা ইতোমধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত, তাহলে তারা সেই শেয়ারগুলি সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে কিনতে পারে।
  • OTC বাজার: একটি ছোট কোম্পানির শেয়ার, যা প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয়, তবে OTC বাজারে লেনদেন হতে পারে।


সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটের সুবিধা

  • তরলতা: বিনিয়োগকারীরা সহজে তাদের শেয়ারগুলি বিক্রি বা কিনতে পারে, যা বাজারের তরলতা বাড়ায়।
  • দর বৃদ্ধি: শেয়ারমূল্য বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে ওঠানামা করতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের লাভবান হওয়ার সুযোগ দেয়।


সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটের সীমাবদ্ধতা

  • মার্কেট রিস্ক: সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটে শেয়ারমূল্য অস্থির হতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
  • প্রভাব: স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক ঘটনা শেয়ারমূল্যে প্রভাব ফেলতে পারে।


২.৩ অন্যান্য শেয়ার মার্কেট

শেয়ার মার্কেট কে আরো কয়েকটিভাগে ভাগ করা যায়:


২.৩.১ বুল মার্কেট (Bull Market)

বুল মার্কেট হলো একটি শেয়ার মার্কেটের অবস্থা যেখানে শেয়ারমূল্য অবিরামভাবে বৃদ্ধি পায় এবং বিনিয়োগকারীরা সাধারণভাবে আশাবাদী থাকে। এই অবস্থায় বাজারের আস্থা ও প্রবৃদ্ধি সাধারণত বৃদ্ধি পায় এবং এটি প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদী ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার প্রতিনিধিত্ব করে। বুল মার্কেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার অবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে যা বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী লাভের সুযোগ প্রদান করে এবং অর্থনীতির সামগ্রিক স্বাস্থ্য নির্দেশ করে। তবে, এটি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।


বুল মার্কেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • মূল্য বৃদ্ধি: বুল মার্কেটে, শেয়ারগুলির দাম ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এটি বাজারের শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতীক এবং বিনিয়োগকারীদের মাঝে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।
  • বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস: বিনিয়োগকারীরা বুল মার্কেটে সাধারণত অধিক আত্মবিশ্বাসী থাকে। তারা মনে করে যে বাজারের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং তারা তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে আগ্রহী থাকে।
  • উচ্চ বাজারের পারফরম্যান্স: বুল মার্কেটে, স্টক ইনডেক্স যেমন ডাউ জোন্স, এসঅ্যান্ডপি ৫০০, এবং নাসডাক সাধারণত উচ্চ বৃদ্ধি দেখায়। কোম্পানির আয় এবং মুনাফা বৃদ্ধি পায়, যা শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত।
  • উন্নয়ন ও বৃদ্ধি: এই সময়ে কোম্পানিগুলি তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে, নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করে এবং নতুন সুযোগ সন্ধান করে। বাজারের বর্ধিত বিনিয়োগ এবং উন্নয়নের ফলে এটি আরও প্রবৃদ্ধিশীল হয়ে ওঠে।
  • বিনিয়োগের প্রবণতা: বুল মার্কেটের সময় বিনিয়োগকারীরা স্টক বাজারে বেশি বিনিয়োগ করে এবং স্বল্পমেয়াদী মুনাফার আশা করে। এটি একটি সক্রিয় লেনদেনের পরিবেশ তৈরি করে।
  • মৌলিক ও প্রযুক্তিগত সূচক: মৌলিক সূচক যেমন কোম্পানির মুনাফা, বিক্রয়, এবং অন্যান্য আর্থিক পরিমাপ বৃদ্ধি পায়, যা বাজারের জন্য ইতিবাচক সংকেত প্রদান করে। প্রযুক্তিগত সূচক যেমন শেয়ারমূল্যের চার্ট এবং টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসও বুল মার্কেটের লক্ষণ দেখাতে পারে।


বুল মার্কেটের উদাহরণ

  • অর্থনৈতিক উন্নয়ন: একটি দেশের অর্থনীতির দৃঢ় বৃদ্ধির সময়, যেমন প্রযুক্তি সেক্টরের বিস্তার বা শিল্পের উন্নয়ন, শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বুল মার্কেটের সূচনা হতে পারে।করোনা 
  • মহামারীর পরের বাজার: ২০২০ সালের করোনা মহামারীর পর যখন বাজার ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হতে শুরু করে এবং শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি পায়, তখন এটি একটি বুল মার্কেটের উদাহরণ হতে পারে।


বুল মার্কেটের সুবিধা

  • উচ্চ লাভের সম্ভাবনা: শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগকারীরা অধিক মুনাফা লাভ করতে পারে।
  • আর্থিক উন্নয়ন: কোম্পানিগুলি বৃদ্ধির সুযোগ পায় এবং নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারে।


বুল মার্কেটের সীমাবদ্ধতা

  • অস্থিরতা: বাজারের দ্রুত বৃদ্ধি কিছু সময়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে মূল্যপতনের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস: বিনিয়োগকারীরা অত্যধিক আত্মবিশ্বাসী হতে পারে, যা বাজারের অতিরিক্ত উত্তেজনা এবং ভুল সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে।


২.৩.২ বিয়ার মার্কেট (Bear Market)

বিয়ার মার্কেট হলো একটি শেয়ার মার্কেটের অবস্থা যেখানে শেয়ারমূল্য অবিরামভাবে হ্রাস পায় এবং বিনিয়োগকারীরা সাধারণভাবে হতাশ থাকে। এই অবস্থায় বাজারের আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং এটি সাধারণত একটি দীর্ঘমেয়াদী নিম্নমুখী প্রবণতার প্রতিনিধিত্ব করে। বিয়ার মার্কেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার অবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে যা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং মন্দার সময় বিনিয়োগকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এটি বাজারের শক্তি ও দুর্বলতা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বিনিয়োগের কৌশল পরিকল্পনায় সহায়ক হতে পারে।


বিয়ার মার্কেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • মূল্য পতন: বিয়ার মার্কেটে, শেয়ারগুলির দাম ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পায়। এটি অর্থনৈতিক মন্দা, বাজারের অস্থিরতা, বা অন্যান্য নেতিবাচক ঘটনা নির্দেশ করতে পারে।
  • বিনিয়োগকারীদের হতাশা: বিনিয়োগকারীরা বিয়ার মার্কেটে সাধারণত হতাশ এবং সংকটাপন্ন থাকে। তারা মনে করে যে বাজারের পতন অব্যাহত থাকবে এবং তারা তাদের বিনিয়োগ কমাতে বা বিক্রি করতে আগ্রহী থাকে।
  • নিম্ন বাজারের পারফরম্যান্স: বিয়ার মার্কেটে, স্টক ইনডেক্স যেমন ডাউ জোন্স, এসঅ্যান্ডপি ৫০০, এবং নাসডাক সাধারণত নিম্নমানের পারফরম্যান্স দেখায়। কোম্পানির আয় এবং মুনাফা হ্রাস পায়, যা শেয়ারমূল্য পতনের সাথে সম্পর্কিত।
  • অর্থনৈতিক সংকট: এই সময়ে অর্থনীতিতে সংকট, মন্দা, অথবা ব্যতিক্রমী আর্থিক অবস্থা দেখা যায়। এটি কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং বাজারের সামগ্রিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে।
  • বিনিয়োগের প্রবণতা: বিয়ার মার্কেটে বিনিয়োগকারীরা সাধারণত স্টক বাজারে কম বিনিয়োগ করে এবং নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে মনোনিবেশ করে, যেমন বন্ড বা স্বর্ণ।
  • মৌলিক ও প্রযুক্তিগত সূচক: মৌলিক সূচক যেমন কোম্পানির মুনাফা, বিক্রয়, এবং অন্যান্য আর্থিক পরিমাপ হ্রাস পায়, যা বাজারের জন্য নেতিবাচক সংকেত প্রদান করে। প্রযুক্তিগত সূচক যেমন শেয়ারমূল্যের চার্ট এবং টেকনিক্যাল অ্যানালিসিসও বিয়ার মার্কেটের লক্ষণ দেখাতে পারে।


বিয়ার মার্কেটের উদাহরণ

  • অর্থনৈতিক মন্দা: ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট, যা অর্থনৈতিক মন্দার কারণে একটি বিয়ার মার্কেট সৃষ্টি করেছিল।
  • মহামারীর প্রভাব: কোভিড-১৯ মহামারীর সময় প্রথম পর্যায়ে শেয়ারমূল্য ব্যাপকভাবে পতিত হয়েছিল, যা একটি বিয়ার মার্কেটের উদাহরণ হতে পারে।


বিয়ার মার্কেটের সুবিধা

  • ক্রয়ের সুযোগ: বাজারের পতন শেয়ারগুলির মূল্য কমিয়ে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য সস্তায় ভালো শেয়ার কেনার সুযোগ প্রদান করতে পারে।


বিয়ার মার্কেটের সীমাবদ্ধতা

  • লাভের ক্ষতি: শেয়ারমূল্য পতনের ফলে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
  • বাজারের অস্থিরতা: দীর্ঘকালীন বিয়ার মার্কেট অর্থনীতির জন্য অস্থিরতা এবং দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।


২.৩.৩ ডাম্পিং মার্কেট (Dumping Market)

ডাম্পিং মার্কেট হলো এমন একটি বাজার পরিস্থিতি যেখানে একটি নির্দিষ্ট পণ্যের বা শেয়ারের দাম অত্যন্ত কমে যায়। সাধারণত, এই অবস্থায় দাম হ্রাসের কারণে বিক্রেতারা তাদের পণ্য বা শেয়ার দ্রুত বিক্রি করার চেষ্টা করে। শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে, এটি সাধারণত একটি অনিয়ন্ত্রিত বা অস্বাভাবিক অবস্থার প্রতীক এবং সাধারণত একটি বাজারের অস্থিরতা বা সংকটের লক্ষণ হতে পারে। ডাম্পিং মার্কেট শেয়ার বাজারের একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে দাম দ্রুত কমে যায় এবং বাজারের অস্থিরতা দেখা দেয়। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি ও সুযোগ উভয়ই তৈরি করতে পারে এবং সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।


ডাম্পিং মার্কেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • দামের দ্রুত পতন: ডাম্পিং মার্কেটে, শেয়ারগুলির বা পণ্যের মূল্য দ্রুত হ্রাস পায়। এটি সাধারণত বাজারের অস্থিরতা, প্যানিক বিক্রি, বা বিক্রেতাদের উদ্বেগের কারণে ঘটে।
  • প্যানিক বিক্রি: বিনিয়োগকারীরা যখন দেখতে পায় যে বাজারে শেয়ারমূল্য দ্রুত কমে যাচ্ছে, তখন তারা তাদের শেয়ার দ্রুত বিক্রি করে দেয়, যা দাম আরও কমিয়ে দেয়। এটি একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
  • অস্থির বাজার: ডাম্পিং মার্কেট একটি অস্থির বাজারের চিত্র তুলে ধরে, যেখানে দাম হ্রাসের কারণে বাজারের স্থিতিশীলতা হারিয়ে যায়। এটি সাধারণভাবে অর্থনৈতিক বা বাজারের সংকটের ফলস্বরূপ ঘটে।
  • বাজারের প্রতিক্রিয়া: ডাম্পিং মার্কেটের সময়, বাজারের প্রতিক্রিয়া অস্থির হতে পারে এবং বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হতে পারে। এটি বাজারে অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে।
  • সাধারণত স্থানীয় প্রভাব: ডাম্পিং মার্কেটের প্রভাব সাধারণত স্থানীয় বা বিশেষ ক্ষেত্রের জন্য সীমাবদ্ধ থাকে এবং এটি পুরো বাজারে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে না।


ডাম্পিং মার্কেটের উদাহরণ

  • অর্থনৈতিক সংকট: যদি একটি দেশের অর্থনীতি দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে, এবং শেয়ারমূল্য দ্রুত কমে যায়, এটি একটি ডাম্পিং মার্কেটের উদাহরণ হতে পারে।
  • প্যানিক সেল: একটি বিশেষ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য হঠাৎ করে কমে যাওয়ার পরে, বিনিয়োগকারীরা প্যানিকের কারণে শেয়ার বিক্রি করে দেয়, যা দাম আরও হ্রাস করে।


ডাম্পিং মার্কেটের সুবিধা

  • ক্রয়ের সুযোগ: দাম কমে যাওয়ার কারণে, কিছু বিনিয়োগকারী কম দামে শেয়ার কেনার সুযোগ পেতে পারে।


ডাম্পিং মার্কেটের সীমাবদ্ধতা

  • অর্থনৈতিক ক্ষতি: দ্রুত দাম হ্রাসের ফলে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
  • বাজারের অস্থিরতা: এটি বাজারের স্থিতিশীলতা ও স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।


২.৩.৪ ইমার্জিং মার্কেট (Emerging Market)

ইমার্জিং মার্কেট হলো এমন একটি বাজার যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলির শেয়ারগুলি লেনদেন হয় এবং যেখানে অর্থনৈতিক ও বাজারের উন্নয়ন দ্রুত হচ্ছে। এই বাজারগুলি সাধারণত উন্নত অর্থনীতির তুলনায় তরুণ এবং অতীতের তুলনায় দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। ইমার্জিং মার্কেট শেয়ার বাজারগুলি আন্তর্জাতিক অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগের দরজা খুলে দেয়। তবে, সঠিক গবেষণা এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন করে বিনিয়োগ করা উচিত।


ইমার্জিং মার্কেটের বৈশিষ্ট্য

  • দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: এই বাজারগুলিতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে দ্রুত ঘটে, যা শেয়ার বাজারে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সাধারণত ব্যবসায়িক সুযোগ এবং কোম্পানির বৃদ্ধির সাথে যুক্ত থাকে।
  • মৌলিক অবকাঠামোর উন্নয়ন: ইমার্জিং মার্কেটগুলির অবকাঠামো উন্নয়নশীল স্তরে থাকে। স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংকিং সিস্টেম এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় থাকে।
  • বিনিয়োগের উচ্চ ঝুঁকি: এই বাজারগুলিতে বিনিয়োগের ঝুঁকি সাধারণত উচ্চ থাকে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা, এবং অন্যান্য অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।
  • নতুন বাজারের সুযোগ: ইমার্জিং মার্কেট শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন এবং উদীয়মান ব্যবসায়িক সুযোগ পাওয়া যায়। এই বাজারগুলি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ প্রদান করে।
  • বাজারের অস্থিরতা: ইমার্জিং মার্কেটগুলিতে বাজারের অস্থিরতা বেশি হতে পারে। শেয়ারমূল্য দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে এবং এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।


ইমার্জিং মার্কেটের উদাহরণ

  • চীন: চীনের শেয়ার বাজার, যেমন সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জ, দ্রুত উন্নয়নশীল এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার।
  • ভারত: ভারতের শেয়ার বাজার, যেমন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) এবং বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE), দ্রুত বর্ধনশীল এবং বিশ্ববাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
  • ব্রাজিল: ব্রাজিলের বাভ্যাল স্টক এক্সচেঞ্জ (B3) একটি প্রধান ইমার্জিং মার্কেট শেয়ার বাজার যা ক্রমাগত উন্নয়নশীল।


ইমার্জিং মার্কেটের সুবিধা

  • উচ্চ লাভের সম্ভাবনা: দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং উন্নত মানের শেয়ারগুলি উচ্চ লাভের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে।
  • বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগের সুযোগ: নতুন এবং উদীয়মান বিনিয়োগের সুযোগ পাওয়া যায় যা উন্নত বাজারে পাওয়া যায় না।


ইমার্জিং মার্কেটের সীমাবদ্ধতা

  • ঝুঁকি: এই বাজারগুলিতে ঝুঁকি বেশি হতে পারে, যেমন রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, এবং অপর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা।
  • নিয়ন্ত্রণ ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা: বাজারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো উন্নত দেশগুলির তুলনায় দুর্বল হতে পারে।



২.৩.৫ ওভার-দ্য- কাউন্টার মার্কেট (Over-the-Counter Market - OTC)

ওভার-দ্য- কাউন্টার মার্কেট বা বিনিয়োগকৃত বাজার হলো এমন একটি বাজার যেখানে শেয়ার, সিকিউরিটি বা অন্যান্য আর্থিক সম্পদগুলি স্টক এক্সচেঞ্জের বাইরে লেনদেন হয়, যেমন- স্টক, বন্ড, ডেরিভেটিভস, এবং অন্যান্য আর্থিক সম্পদ। এই বাজারটি সাধারণত বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে সরাসরি লেনদেনের মাধ্যমে কাজ করে, যা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো একীকৃত বা কেন্দ্রীয় লেনদেন প্ল্যাটফর্মের অভাব থাকে। OTC মার্কেট বিশেষ ধরনের বিনিয়োগের জন্য একটি বিকল্প বাজার প্রদান করে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটি লেনদেন করা যায়। তবে, এই বাজারে বিনিয়োগ করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং প্রয়োজনীয় গবেষণা করা উচিত।


বিনিয়োগকৃত বাজারের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • স্টক এক্সচেঞ্জের বাইরের লেনদেন: OTC মার্কেটের লেনদেন সাধারণত স্টক এক্সচেঞ্জের বাইরে ঘটে। এটি একটি বিকেন্দ্রীভূত বাজার যেখানে লেনদেন বিভিন্ন বিক্রেতা ও ক্রেতার মধ্যে সরাসরি সম্পন্ন হয়।
  • কম নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধান: OTC মার্কেটে সাধারণত স্টক এক্সচেঞ্জের তুলনায় কম নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধান থাকে। এটি বাজারের স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • বাজারের প্রবেশাধিকার: OTC মার্কেটে লেনদেন করার জন্য কোনো স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রয়োজন হয় না। এটি ছোট বা নতুন কোম্পানির জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে যারা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে পারে না।
  • দাম নির্ধারণ: OTC মার্কেটে দাম সাধারণত সরাসরি বিক্রেতা এবং ক্রেতার মধ্যে আলোচনা দ্বারা ইমার্জিং মার্কেট হয়। এটি বাজারের অস্থিরতা এবং দাম পরিবর্তনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
  • অবকাঠামো এবং প্ল্যাটফর্ম: OTC লেনদেন সাধারণত অনলাইন বা টেলিফোনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এতে লেনদেনের জন্য বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা ব্রোকারেজ পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।


OTC মার্কেটের উদাহরণ

  • বন্ডস: কিছু কর্পোরেট বন্ড ও সেকেন্ডারি মার্কেট বন্ড OTC মার্কেটে লেনদেন হয়। এখানে বিনিয়োগকারীরা প্রাতিষ্ঠানিক বিক্রেতাদের মাধ্যমে বন্ড কিনতে বা বিক্রি করতে পারেন।
  • পণ্যের বাজার (Commodities Market): কিছু পণ্য যেমন তেল এবং স্বর্ণ OTC মার্কেটে লেনদেন হয়, যেখানে বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে ট্রেডিং করা হয়। 
  • ফরেক্স মার্কেট: ফরেক্স (FX) মার্কেটও একটি OTC বাজার, যেখানে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার লেনদেন সরাসরি অংশগ্রহণকারী ব্যাংক এবং ব্রোকারদের মধ্যে হয়।


OTC মার্কেটের সুবিধা

  • এক্সচেঞ্জের বাইরের সুযোগ: OTC মার্কেট ছোট বা নতুন কোম্পানিগুলির জন্য এক্সচেঞ্জের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করে।
  • কম নিয়ন্ত্রক প্রয়োজন: এতে নিয়ন্ত্রক বাধা কম থাকে, যা দ্রুত লেনদেনের সুযোগ তৈরি করে।


OTC মার্কেটের সীমাবদ্ধতা

  • কম স্বচ্ছতা: নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধান কম থাকার কারণে OTC মার্কেটের লেনদেন স্বচ্ছতা ও তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কম হতে পারে।
  • উচ্চ ঝুঁকি: কম নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধান এবং সরাসরি লেনদেনের ফলে ঝুঁকি এবং অস্থিরতা বেশি হতে পারে।


২.৩.৬ বিনিয়োগ এবং ট্রেডিং মার্কেট (Investment vs. Trading Market)

বিনিয়োগ এবং ট্রেডিং মার্কেট (Investment vs. Trading Market) দুটি পৃথক আর্থিক কৌশল এবং বাজারের ধরণ যা বিনিয়োগকারীরা এবং ট্রেডাররা তাদের আর্থিক লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যবহার করে। এই দুটি কৌশলের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে:


২.৩.৬.১ বিনিয়োগ (Investment)

বিনিয়োগ এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্যক্তিরা আর্থিক লাভ অর্জনের জন্য সম্পদ বা সিকিউরিটি কিনে রাখে। বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ে ধীরে ধীরে সম্পদ বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল আয়ের উৎস তৈরি করা। বিনিয়োগ দুই প্রকার, যথা: দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ ও স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ।


দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ 

  • দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি: বিনিয়োগকারীরা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী লাভের জন্য বিনিয়োগ করে থাকেন, যেমন পাঁচ, দশ বা আরও বেশি বছর ধরে।
  • উদ্দেশ্য: দীর্ঘমেয়াদে বাজারের ওঠানামা কাটিয়ে ওঠার জন্য এবং উচ্চ রিটার্নের সম্ভাবনা তৈরি করা।
  • বিনিয়োগের ধরন: স্টক মার্কেট, রিয়েল এস্টেট, মিউচুয়াল ফান্ড, এবং অবসরকালীন সঞ্চয় পরিকল্পনা (যেমন: পেনশন ফান্ড)।
  • বাজারের মাধ্যামিকতা: বিনিয়োগকারীরা সাধারণত বাজারের ছোট খাটো ওঠানামা নিয়ে চিন্তা করেন না। তারা বাজারের দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা ও মৌলিক বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন।
  • স্বল্প ট্রেডিং ফ্রিকোয়েন্সি: বিনিয়োগকারীরা সাধারণত কম ট্রেড করে থাকেন। তারা তাদের বিনিয়োগ ধরে রাখার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেন।
  • লাভের উৎস: বিনিয়োগ থেকে লাভ মূলত শেয়ারমূল্যের বৃদ্ধি এবং ডিভিডেন্ড থেকে আসে। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেলে বিনিয়োগকারীরা লাভ করতে পারেন।
  • ফলাফল: দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে সাধারণত বেশি রিটার্ন প্রত্যাশা করা হয় কারণ সময়ের সাথে সাথে সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি পায়।
  • বিনিয়োগের সুবিধা: দীর্ঘমেয়াদী লাভ: বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে লাভের প্রত্যাশা করেন। শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি, ডিভিডেন্ড, বা বন্ডের সুদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আয় হতে পারে। অল্প ঝুঁকি: দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সময় ঝুঁকি কিছুটা কমে আসতে পারে, কারণ বাজারের ছোটখাটো ওঠানামা দীর্ঘমেয়াদে তেমন প্রভাব ফেলতে না পারে। প্যাসিভ আয়: বিনিয়োগকারীরা কিছু ক্ষেত্রে প্যাসিভ আয় অর্জন করতে পারেন, যেমন ডিভিডেন্ড বা বন্ডের সুদ। বাজার বিশ্লেষণ: বিনিয়োগকারীরা মৌলিক বিশ্লেষণ করেন, যা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য সেরা কোম্পানি সহ কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনা এবং আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। ট্যাক্স সুবিধা: কিছু বিনিয়োগে ট্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়, যেমন পেনশন ফান্ড বা রিটায়ারমেন্ট অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ।
  • ঝুঁকি ও রিটার্ন: সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকি কমে যায় কারণ সময়ের সাথে সাথে বাজার স্থিতিশীল হয়, বিনিয়োগকারীরা বাজারের মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে পারেন এবং বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে উচ্চ রিটার্নের আশা করতে পারেন।
  • বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা: দীর্ঘমেয়াদী সময়সীমা: বিনিয়োগ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকে, যা কিছু মানুষের জন্য অপেক্ষা করা কঠিন হতে পারে। মধ্যমেয়াদী ঝুঁকি: বাজারের পরিস্থিতি খারাপ হলে বিনিয়োগের মূল্য কমে যেতে পারে, যা মধ্যমেয়াদে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। স্বল্প লভ্যতা: কিছু বিনিয়োগ, যেমন রিয়েল এস্টেট, দ্রুত নগদীকরণের জন্য সহজে বিক্রি করা যায় না। কম দ্রুত লাভ: বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভ ধীরে ধীরে আসে, যা দ্রুত মুনাফা প্রত্যাশা করা মানুষের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।
  • উদাহরণ: স্থিতিশীল আয়ের জন্য সরকারী বা কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগ। যদি কেউ একটি শেয়ার ১০ বছরের জন্য ধরে রাখে, তাহলে বাজারে ওঠানামা সত্ত্বেও শেয়ারটির দাম বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন দিতে পারে।


২.৩.৬.২ ট্রেডিং (Trading)

ট্রেডিং এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলি স্বল্পমেয়াদী লাভের জন্য নিয়মিতভাবে সিকিউরিটি কেনা ও বিক্রি করে। ট্রেডিংয়ের মূল লক্ষ্য সাধারণত দ্রুত মুনাফা অর্জন করা এবং বাজারের ছোট খাটো ওঠানামা থেকে লাভ করা।


ট্রেডিংয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • উদ্দেশ্য: কম সময়ের মধ্যে দ্রুত মুনাফা অর্জন করা।
  • বিনিয়োগের ধরন: স্টক ট্রেডিং, বন্ড, ট্রেজারি বিল, এবং অন্যান্য লিকুইড অ্যাসেট, যা দ্রুত কেনাবেচা করা যায়।
  • স্বল্পমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি: ট্রেডাররা সাধারণত স্বল্পমেয়াদী লাভের জন্য ট্রেড করে থাকেন, যেমন দিন, সপ্তাহ, বা মাসের মধ্যে।
  • সময়সীমা: ১ থেকে ৩ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা হয়, তবে এটি কয়েক সপ্তাহ বা মাসের জন্যও হতে পারে।
  • বাজারের অস্থিরতা: ট্রেডাররা বাজারের ছোট খাটো ওঠানামা এবং অস্থিরতার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন। তারা সাধারণত টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস এবং চার্ট বিশ্লেষণ ব্যবহার করেন।
  • উচ্চ ট্রেডিং ফ্রিকোয়েন্সি: ট্রেডাররা নিয়মিতভাবে ট্রেড করে থাকেন এবং তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন।
  • লাভের উৎস: ট্রেডিং থেকে লাভ মূলত শেয়ারমূল্যের দ্রুত পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে। ট্রেডাররা সাধারণত দ্রুত লেনদেন করে মুনাফা অর্জন করেন।
  • ঝুঁকি ও রিটার্ন: ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি, কারণ বাজারের অস্থিরতা এই সময়ের মধ্যে রিটার্নের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। 
  • ফলাফল: উচ্চ ঝুঁকি থাকলেও স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগে দ্রুত মুনাফা অর্জন করা সম্ভব, তবে হঠাৎ ক্ষতির সম্ভাবনাও বেশি থাকে।


ট্রেডিংয়ের উদাহরণ

  • ডে ট্রেডিং: দিনে একাধিক ট্রেড করা যেখানে সমস্ত পজিশন দিনের শেষে বন্ধ করা হয়।
  • সুইং ট্রেডিং: একাধিক দিন বা সপ্তাহ ধরে পজিশন ধরে রাখা এবং বাজারের স্বল্পমেয়াদী পরিবর্তনের সুবিধা নেওয়া।
  • স্ক্যালপিং: একটি ট্রেডিং কৌশল যেখানে ট্রেডাররা ছোট ছোট মূল্য পরিবর্তন থেকে দ্রুত লাভ অর্জন করার জন্য বাজারে প্রচুর পরিমাণে লেনদেন করে থাকেন।


ট্রেডিংয়ের সুবিধা

  • দ্রুত লাভ: ট্রেডাররা স্বল্পমেয়াদী লেনদেনের মাধ্যমে দ্রুত মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
  • বাজারের অস্থিরতার সুযোগ: বাজারের ছোটখাটো ওঠানামার সুবিধা নিয়ে দ্রুত লেনদেন করে লাভ করতে পারেন।
  • অধিক নিয়ন্ত্রণ: ট্রেডাররা তাদের পোর্টফোলিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
  • প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ: ট্রেডাররা প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এবং চার্ট ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি পূর্বাভাস দিতে পারেন।


ট্রেডিংয়ের সীমাবদ্ধতা

  • উচ্চ ঝুঁকি: ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি সাধারণত বেশি কারণ বাজারের স্বল্পমেয়াদী পরিবর্তন ট্রেডারদের মূলধনকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • লাভের অস্থিরতা: ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে লাভ অস্থির হতে পারে এবং কিছু সময়ে ট্রেডারদের বড় ক্ষতি হতে পারে।
  • উচ্চ খরচ: নিয়মিত লেনদেনের কারণে ব্রোকারেজ ফি এবং লেনদেন খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • বাজারের চাপ: দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হওয়ার কারণে ট্রেডারদের উপর মানসিক চাপ বাড়তে পারে।


বিনিয়োগ ও ট্রেডিংয়ের তুলনা

দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলো হলো তাদের সময়সীমা, ঝুঁকি এবং প্রত্যাশিত রিটার্ন। এখানে এই দুই ধরনের বিনিয়োগের বৈশিষ্ট্য এবং পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হলো:

  • লক্ষ্য: বিনিয়োগকারীরা আর্থিক সুরক্ষা, অবসর পরিকল্পনা, এবং ভবিষ্যতের জন্য মূলধন বৃদ্ধি করতে চায়, যেখানে ট্রেডারা দ্রুত লাভ করতে চায়।
  • রিটার্নের ধরন: বিনিয়োগে সাধারণত উচ্চ রিটার্ন পাওয়া যায়, তবে তা ধীরে ধীরে আসে। ট্রেডিংয়ে উচ্চ রিটার্নের সম্ভাবনা থাকলেও তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
  • মেয়াদ: বিনিয়োগ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী, ট্রেডিং স্বল্পমেয়াদী।
  • লাভের উৎস: বিনিয়োগে লাভ মূলত শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি এবং ডিভিডেন্ড থেকে আসে, ট্রেডিংয়ে লাভ মূলত বাজারের ছোট খাটো ওঠানামা থেকে আসে।
  • ঝুঁকি ও অস্থিরতা: বিনিয়োগে ঝুঁকি এবং অস্থিরতা তুলনামূলক কম হয়, কারণ সময়ের সাথে বাজারের অস্থিরতা কমে যায়। ট্রেডিংয়ে অস্থিরতা বেশি, কারণ সময় কম এবং বাজার দ্রুত পরিবর্তনশীল।


৩. শেয়ার মার্কেটের প্রভাব

শেয়ার মার্কেটের প্রভাব ব্যাপক এবং বিভিন্ন দিক থেকে অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করে। প্রথমত, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি তে শেয়ার মার্কেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একটি দেশের শেয়ার মার্কেটের কর্মক্ষমতা অর্থনৈতিক অবস্থা, বিনিয়োগকারীদের আস্থা, এবং ব্যবসার সামগ্রিক সুস্থতা নির্দেশ করে। যখন শেয়ার বাজার উঁচুতে থাকে, এটি ব্যবসার প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক হতে পারে, কারণ কোম্পানিগুলি নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয় এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। Conversely, একটি পতিত বাজার অর্থনৈতিক মন্দার সংকেত হতে পারে এবং বিনিয়োগকারীরা কম খরচের বা ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী না হলে এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে।


দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীর ওপর প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শেয়ার মার্কেটের পরিবর্তনগুলির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারেন, কিন্তু এর সাথে ঝুঁকিও থাকে। বাজারের ওঠানামার কারণে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের মূল্য হ্রাস বা বৃদ্ধি অনুভব করতে পারে, যা তাদের আর্থিক পরিকল্পনা এবং জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি ব্যক্তিগত পেনশন পরিকল্পনা, সঞ্চয় এবং ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলে।


তৃতীয়ত, বাজারের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব মনের অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বাজারের উত্তেজনা, উদ্বেগ, বা আনন্দ বিনিয়োগকারীদের মানসিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত এবং সাধারণ জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বাজারের গতিশীলতা এবং উদ্বেগ বিনিয়োগকারীদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে।


অবশেষে, সার্বিক আর্থিক সিস্টেম এ শেয়ার মার্কেটের প্রভাব অপরিহার্য। এটি ব্যাংকিং সেক্টর, লগ্নি প্রতিষ্ঠান, এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে। একটি শক্তিশালী শেয়ার মার্কেট ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ এটি ব্যাংকগুলির সাথে লেনদেনের সুযোগ বৃদ্ধি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে গ্লোবাল অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। এইভাবে, শেয়ার মার্কেটের প্রভাব অনেকাংশে অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং ব্যক্তিগত স্তরে বিস্তৃত, এবং এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তি জীবনের মানের ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।


৪. শেয়ার বিনিয়োগের সুবিধা

শেয়ার বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ বৃদ্ধির একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করে, যা অন্যান্য বিনিয়োগের চেয়ে আলাদা। শেয়ার বিনিয়োগের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা কেবল তাদের অর্থের বৃদ্ধি নয়, বরং কোম্পানির মালিকানার একটি অংশও লাভ করেন। নিচে শেয়ার বিনিয়োগের কিছু মূল সুবিধা উল্লেখ করা হলো:

  • মূলধন বৃদ্ধি (Capital Appreciation): শেয়ার বিনিয়োগের প্রধান সুবিধাগুলোর মধ্যে একটি হলো মূলধন বৃদ্ধি। সময়ের সাথে সাথে শেয়ারের মূল্য বাড়তে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের বিক্রয়ের মাধ্যমে লাভবান হতে সাহায্য করে। যদি একজন বিনিয়োগকারী কম দামে শেয়ার ক্রয় করেন এবং পরবর্তীতে সেই শেয়ার উচ্চ দামে বিক্রি করেন, তাহলে তিনি মূলধন লাভ (Capital Gain) অর্জন করেন।
  • লভ্যাংশ আয় (Dividend Income): অনেক কোম্পানি তাদের লাভের একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে। এটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য একটি নিয়মিত আয়ের উৎস। লভ্যাংশ সাধারণত নগদ অর্থে প্রদান করা হয়, তবে এটি অতিরিক্ত শেয়ারের মাধ্যমেও বিতরণ করা যেতে পারে। লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা নিয়মিত নগদ আয় পেতে পারেন।
  • মালিকানার অংশীদারিত্ব: শেয়ার কিনে একজন বিনিয়োগকারী কোম্পানির মালিকানার অংশীদার হয়ে যান। এর মাধ্যমে তারা কোম্পানির পরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় এবং বার্ষিক সাধারণ সভায় (AGM) ভোট দেয়ার অধিকার পান। মালিকানার এই অনুভূতি অনেক বিনিয়োগকারীকে উৎসাহিত করে।
  • পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যকরণ (Portfolio Diversification): শেয়ার বিনিয়োগ পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যকরণের একটি কার্যকর উপায়, যা ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে। শেয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা তাদের ঝুঁকি ছড়িয়ে দিতে পারেন, যাতে একক বিনিয়োগের পতনের প্রভাব কমানো যায়।
  • তারল্য (Liquidity): শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের একটি বড় সুবিধা হলো তারল্য। শেয়ার মার্কেট একটি অত্যন্ত সক্রিয় বাজার যেখানে শেয়ার কেনাবেচা সহজে এবং দ্রুত করা যায়। বিনিয়োগকারীরা সহজেই তাদের শেয়ার নগদ অর্থে রূপান্তর করতে পারেন, যা অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে অনেক সময় সম্ভব হয় না।
  • উচ্চ রিটার্নের সম্ভাবনা: লং টার্মে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ সাধারণত উচ্চ রিটার্নের সম্ভাবনা তৈরি করে, বিশেষ করে যদি কোম্পানি ভালো পারফর্ম করে এবং তার শেয়ারের মূল্য সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়। শেয়ার বাজারের ইতিহাস বলে যে, সময়ের সাথে সাথে শেয়ার বিনিয়োগে রিটার্ন সাধারণত অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় বেশি হতে পারে।
  • কর সুবিধা (Tax Benefits): কিছু দেশে শেয়ার বিনিয়োগের উপর বিশেষ কর সুবিধা প্রদান করা হয়, যেমন লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স রেটে ছাড় বা লভ্যাংশ আয়ের উপর কম কর হার। এই কর সুবিধাগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার বিনিয়োগকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।
  • বাজারের উন্নতির সুবিধা: যখন অর্থনীতি এবং বাজারের অবস্থা উন্নত হয়, তখন শেয়ার বাজারেরও প্রবৃদ্ধি ঘটে। এই সময় বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি এবং লভ্যাংশের মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন।


৫. শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের ঝুঁকি ও সুরক্ষা কৌশল

শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি রয়েছে, যেমন বাজারের ওঠানামা, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। বাজারে মূল্য হ্রাস পেলে বিনিয়োগের মুনাফা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তাই বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি মোকাবিলায় সতর্ক থাকতে হয়। শেয়ার মার্কেটে সফল হওয়ার উপায় হিসেবে বাজার বিশ্লেষণ, ধৈর্য, এবং দীর্ঘমেয়াদী কৌশল প্রয়োজন। শেয়ার কেনার আগে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং বাজার ট্রেন্ড সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে বিনিয়োগ করা উচিত। সফলভাবে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করতে হলে, ডাইভারসিফিকেশন বা বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ, সঠিক সময়ে শেয়ার কেনা এবং বিক্রি করার দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের কৌশল হিসেবে বাজারের বিশ্লেষণ, সংবাদের উপর নজর রাখা এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা বিনিয়োগকারীদের সফল হতে সাহায্য করে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে হলে, প্রথমে একটি নির্ভরযোগ্য ব্রোকারেজ অ্যাকাউন্ট খুলে, সঠিক গবেষণার মাধ্যমে বিনিয়োগ শুরু করা উচিত। শেয়ার মার্কেটের ঝুঁকি ও সুরক্ষা কৌশলের মাধ্যমে শেয়ার বাজারে কিভাবে বিনিয়োগ করবেন এটা সহজেই বুঝতে পারবেন। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে লাভের সম্ভাবনা যেমন থাকে, তেমনি বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিও থাকে। শেয়ার মার্কেট ঝুঁকিগুলো সঠিকভাবে বুঝে এবং তা থেকে বাঁচার উপায় জেনে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কিছুটা কমানো সম্ভব। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের ঝুঁকি কী কী দেখা যাক:

  • শেয়ার মার্কেট ঝুঁকি (Share Market Risk): শেয়ার মার্কেটের সর্বোপরি ওঠানামার কারণে সৃষ্ট ঝুঁকিকে মার্কেট ঝুঁকি বলা হয়। অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বা অন্যান্য বৈশ্বিক ঘটনা শেয়ার বাজারে প্রভাব ফেলে এবং শেয়ারের দাম দ্রুত কমে যেতে পারে।
  • কোম্পানি সম্পর্কিত ঝুঁকি (Company-Specific Risk): কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির ব্যবসা বা ব্যবস্থাপনা খারাপ হলে সেই কোম্পানির শেয়ারের দাম হ্রাস পেতে পারে। কোম্পানির মুনাফা না হওয়া, ম্যানেজমেন্টে সমস্যা, বা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া—এসব কারণেও শেয়ারের মূল্য কমতে পারে।
  • অর্থনৈতিক ঝুঁকি (Economic Risk): দেশের অর্থনীতির অবস্থার ওপর শেয়ার মার্কেটের অনেকটা নির্ভরশীলতা থাকে। মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি, অথবা অর্থনৈতিক মন্দা হলে শেয়ার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
  • তরলতা ঝুঁকি (Liquidity Risk): যদি কোনো শেয়ার বাজারে সহজে বেচাকেনা করা না যায় বা শেয়ারটির ক্রেতা না পাওয়া যায়, তাহলে সেই শেয়ার বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়ে। একে তরলতা ঝুঁকি বলা হয়। এই ঝুঁকি বেশি হয় ছোট কোম্পানির শেয়ারে, যেগুলোর বাজারে চাহিদা কম থাকে।
  • বিনিময় হার ঝুঁকি (Exchange Rate Risk): যেসব বিনিয়োগকারী আন্তর্জাতিকভাবে শেয়ার কেনেন, তাদের জন্য বিনিময় হার একটি ঝুঁকি হতে পারে। যদি কোনো দেশের মুদ্রার মান কমে যায়, এর ফলে ওই দেশের শেয়ারের মূল্যও হ্রাস পেতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • মুদ্রাস্ফীতি ঝুঁকি (Inflation Risk): যদি দেশের মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়, তাহলে কোম্পানির ব্যবসার খরচও বেড়ে যেতে পারে, যা তার লাভজনকতাকে প্রভাবিত করে। ফলে কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
  • রাজনৈতিক ঝুঁকি (Political Risk): রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পরিবর্তন, নতুন নীতিমালা প্রণয়ন, বা কর ব্যবস্থা পরিবর্তন শেয়ার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলোর লাভ কমে যেতে পারে, ফলে শেয়ারের দামও কমতে পারে।
  • সেক্টর ঝুঁকি (Sector Risk): কোনো নির্দিষ্ট শিল্প বা খাতে বিনিয়োগ করলে সেই খাতের ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, তেল ও গ্যাসের খাত আন্তর্জাতিক তেলের দামের ওঠানামার উপর নির্ভর করে। যদি তেলের দাম কমে যায়, তবে সেই খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারেও প্রভাব পড়ে।
  • প্রযুক্তিগত ঝুঁকি (Technological Risk): যদি কোনো কোম্পানি নতুন প্রযুক্তি বা উদ্ভাবন থেকে পিছিয়ে থাকে, তাহলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। এছাড়া, নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব কোনো শিল্প খাতের বর্তমান প্রযুক্তিকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলতে পারে, যা সেই খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমিয়ে দিতে পারে।
  • আইনি ঝুঁকি (Legal Risk): যদি কোনো কোম্পানি আইনি জটিলতার মধ্যে পড়ে, যেমন মামলা-মোকদ্দমা বা নিয়ন্ত্রণ সংস্থার জরিমানা, তাহলে তা কোম্পানির ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে।
  • মানসিক বা আবেগজনিত ঝুঁকি (Emotional Risk): অনেক বিনিয়োগকারী আবেগপ্রবণ হয়ে বাজারে বিনিয়োগ করেন। মার্কেটের গুজব, ভীতি, বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ফলে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে, যা বিনিয়োগকারীর ক্ষতির কারণ হতে পারে।


সুরক্ষা কৌশল 

  • ডাইভারসিফিকেশন: বিভিন্ন খাত এবং কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো যায়।
  • সঠিক তথ্য ও বিশ্লেষণ: কোম্পানি ও মার্কেটের যথাযথ বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কিছুটা কমে।
  • দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ: স্বল্পমেয়াদি ওঠানামা থেকে দূরে থেকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে।
  • শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করতে সেরা সময় বাছাই: শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত সময় বাছাই করে বিনিয়োগ করলে শেয়ার মার্কেট লাভ করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এটি শেয়ার বাজারে লাভ করার কৌশল হিসেবে বিবেচিত।


শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য সেরা সময় কখন?

শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের সেরা সময় নির্ভর করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর। তবে, কিছু সাধারণ গাইডলাইন অনুসরণ করলে আপনি ভালো সময়ে বিনিয়োগ করতে পারেন:

  • বাজারের মন্দার সময়: বাজার যখন নিম্নমুখী থাকে এবং শেয়ারের দাম কমে যায়, তখন বিনিয়োগের একটি ভালো সুযোগ হতে পারে। তবে বাজারের মন্দার সময় শেয়ারের দাম আরও কমতে পারে, তাই দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের মানসিক প্রস্তুতি থাকা উচিত।
  • সঠিক গবেষণা এবং বিশ্লেষণ: একটি কোম্পানির ব্যবসায়িক মডেল, আয়, লাভ, ঋণের অবস্থা এবং ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধি মূল্যায়ন করার পর শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত। শেয়ার মূল্য যখন কোম্পানির প্রকৃত মানের তুলনায় কম থাকে, তখন কেনার সুযোগ থাকে।
  • বাজারে স্থিতিশীলতা আসার পর: বড় পতনের পর যখন বাজারে স্থিতিশীলতা আসে এবং পুনরায় উত্থান শুরু হয়, তখন বিনিয়োগের উপযুক্ত সময় হতে পারে।
  • বাজারে অতিরিক্ত উত্তেজনা বা গুজবের সময় এড়ানো: বাজারে যখন অনেক উত্তেজনা বা গুজব চলে, তখন অনেকেই বিনিয়োগ করেন যা শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। এসময় বিনিয়োগের চেয়ে পর্যবেক্ষণ করা ভালো।
  • দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য এবং ধৈর্য: শেয়ার বাজারের সংক্ষিপ্তমেয়াদী ওঠানামা এড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে স্থির থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো বাজারে প্রবেশ এবং সঠিক স্টক বাছাই করলে দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।


৬. শেয়ারবাজারে আয় ও লাভের উৎস

শেয়ার মার্কেট থেকে আয় করার বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এখানে প্রধান উপায়গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:


৬.১ ডিভিডেন্ড (Dividend)

ডিভিডেন্ড হলো একটি কোম্পানির মুনাফা থেকে শেয়ারহোল্ডারদেরকে প্রদত্ত অর্থ, যা তাদের শেয়ারধারনের জন্য পারিশ্রমিক হিসেবে গণ্য হয়। এটি কোম্পানির লাভের একটি অংশ, যা সাধারণত নগদ অর্থ, অতিরিক্ত শেয়ার, অথবা অন্য কোনো ধরনের বিতরণের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। ডিভিডেন্ড প্রদান করার উদ্দেশ্য হলো শেয়ারহোল্ডারদেরকে তাদের বিনিয়োগের জন্য পুরস্কৃত করা এবং কোম্পানির লাভের অংশ তাদের সাথে ভাগ করে নেওয়া। কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টরসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ ডিভিডেন্ড হিসেবে বিতরণ করা হয়, যা সাধারণত প্রতি ত্রৈমাসিক, ছয় মাসে একবার, অথবা বার্ষিক ভিত্তিতে প্রদান করা হতে পারে।


ডিভিডেন্ড একটি কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্যের একটি সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ নিয়মিত ও স্থিতিশীল ডিভিডেন্ড প্রদান কোম্পানির লাভজনকতা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে। ডিভিডেন্ডের পরিমাণ সাধারণত কোম্পানির মুনাফা, কোম্পানির নীতিমালা, এবং বাজারের অবস্থা দ্বারা নির্ধারিত হয়। কোম্পানি যদি লাভজনক হয় এবং তার উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের প্রয়োজন না হয়, তাহলে তারা অতিরিক্ত মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করে। ডিভিডেন্ড শেয়ারহোল্ডারদের জন্য একটি নিয়মিত আয় হিসেবে কাজ করে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করে। এছাড়া, কিছু বিনিয়োগকারী ডিভিডেন্ড রিইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (DRIP) এর মাধ্যমে লাভের অর্থ দিয়ে অতিরিক্ত শেয়ার কিনতে পারে, যা তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করে। ডিভিডেন্ড কেবলমাত্র একটি আয়ের উৎসই নয়, এটি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের সাথে লাভের অংশীদারিত্বের একটি প্রতীক হিসেবে কাজ করে, যা কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য ও স্থিতিশীলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।


৬.২ ক্যাপিটাল গেইন (Capital Gain)

ক্যাপিটাল গেইন (Capital Gain) হলো একটি আর্থিক লাভ যা বিনিয়োগের মূল্যের বৃদ্ধি থেকে অর্জিত হয়। এটি ঘটে যখন একটি বিনিয়োগ, যেমন শেয়ার, সম্পত্তি, অথবা অন্যান্য সম্পদ, তার ক্রয়ের মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করা হয়। ক্যাপিটাল গেইন সাধারণত দুটি প্রকারের হতে পারে: স্বল্পমেয়াদী ক্যাপিটাল গেইন এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্যাপিটাল গেইন। স্বল্পমেয়াদী ক্যাপিটাল গেইন তখন ঘটে যখন একটি সম্পদ এক বছরের মধ্যে কেনা এবং বিক্রি করা হয়, এবং এই ধরনের লাভ সাধারণত উচ্চ করের আওতায় পড়ে। দীর্ঘমেয়াদী ক্যাপিটাল গেইন ঘটে যখন একটি সম্পদ এক বছরের বেশি সময় ধরে রাখা হয়, এবং এই ধরনের লাভ সাধারণত কম করের আওতায় থাকে। 


ক্যাপিটাল গেইন একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি বিনিয়োগকারীদেরকে তাদের বিনিয়োগের মূল্যের বৃদ্ধি থেকে অতিরিক্ত লাভ অর্জনের সুযোগ প্রদান করে। এটি বিনিয়োগের সফলতা ও বাজারের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভরশীল এবং শেয়ারবাজারের ওঠানামার সাথে সম্পর্কিত। ক্যাপিটাল গেইনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের মূলধনের বৃদ্ধি দেখতে পারেন এবং এটি তাদের সামগ্রিক পোর্টফোলিওর মূল্য বৃদ্ধির সহায়ক হয়। ক্যাপিটাল গেইন অর্জন করার জন্য বিনিয়োগকারীদের বাজারের ধরণ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, এবং কোম্পানির পারফরম্যান্স সম্পর্কিত ধারণা থাকতে হয়। এই লাভ সাধারণত লগ্নি পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে গণ্য হয় এবং এটি বিনিয়োগকারীদেরকে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। তবে, ক্যাপিটাল গেইন লাভের সাথে সাথে এর করযোগ্যতা এবং বাজারের অস্থিরতা সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি, কারণ শেয়ারবাজারের ওঠানামার প্রভাবে ক্যাপিটাল গেইন পরিবর্তিত হতে পারে।


ডিভিডেন্ড এবং ক্যাপিটাল গেইন একসাথে কাজ করে বিনিয়োগকারীদের আয় উৎস হিসেবে, যেখানে ডিভিডেন্ড নিয়মিত আয় প্রদান করে এবং ক্যাপিটাল গেইন বিনিয়োগের মূল্যের বৃদ্ধি থেকে অতিরিক্ত লাভ দেয়। একদিকে, ডিভিডেন্ড বিনিয়োগের স্থিতিশীল আয় নিশ্চিত করে, অপরদিকে, ক্যাপিটাল গেইন বিনিয়োগের দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধি ও লাভের সম্ভাবনা বাড়ায়। শেয়ার মার্কেট থেকে আয় করার এই দুটি হলো প্রধান উপায়।


৬.৩ ডিভিডেন্ড রিইনভেস্টমেন্ট (Dividend Reinvestment)

ডিভিডেন্ড রিইনভেস্টমেন্ট একটি জনপ্রিয় বিনিয়োগ কৌশল যা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের অর্থ পুনরায় শেয়ার ক্রয়ের জন্য ব্যবহার করার সুযোগ প্রদান করে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে, বিনিয়োগকারীরা নগদ লভ্যাংশ গ্রহণ না করে, বরং সেই লভ্যাংশের অর্থ দিয়ে অতিরিক্ত শেয়ার কিনতে পারেন। এটি সাধারণত ডিভিডেন্ড রিইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (DRIP) নামে পরিচিত। এই কৌশল বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদী লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে সহায়তা করে, কারণ পুনরায় বিনিয়োগকৃত শেয়ারগুলোও ভবিষ্যতে লভ্যাংশ অর্জন করতে পারে এবং তাদের মূল্য বৃদ্ধির সুবিধা নিতে পারে। ডিভিডেন্ড রিইনভেস্টমেন্ট পরিকল্পনাগুলি বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা প্রদান করে। প্রথমত, এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লভ্যাংশ পুনঃবিনিয়োগের সুযোগ দেয়, যা নির্ধারিত পরিমাণে অতিরিক্ত শেয়ার কেনার মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয়ত, এই কৌশলটি বিনিয়োগকারীদের বাজারের ওঠানামা থেকে নিরাপদে দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল অর্জনে সহায়তা করে, কারণ কম মূল্যে শেয়ার কেনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তৃতীয়ত, ডিভিডেন্ড রিইনভেস্টমেন্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা কম কমিশন খরচে এবং অতিরিক্ত ফি ছাড়াই নতুন শেয়ার অর্জন করতে পারে, যা তাদের খরচ সাশ্রয় করে।


এই কৌশলের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এটি বিনিয়োগকারীদেরকে নিয়মিত এবং বৃহত্তর পরিমাণে বিনিয়োগ করতে সহায়তা করে, যা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সফলতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে, বিনিয়োগকারীদের এই কৌশল ব্যবহার করার আগে তাদের বিনিয়োগ লক্ষ্য, ঝুঁকি সহনশীলতা এবং বাজারের অবস্থার প্রতি সচেতন থাকা উচিত, কারণ শেয়ার বাজারের ওঠানামার প্রভাব পুনরায় বিনিয়োগকৃত শেয়ারগুলোর মূল্য পরিবর্তন করতে পারে।


৬.৪ স্টক স্প্লিট (Stock Split)

স্টক স্প্লিট হলো একটি কর্পোরেট কর্মকাণ্ড যা একটি কোম্পানির শেয়ারের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করা হয়, সাধারণত শেয়ারের মূল্য কমানোর জন্য। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোম্পানি তার বিদ্যমান শেয়ারের সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে বিভক্ত করে, যেমন ২-for-১, ৩-for-১, বা ৫-for-২। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি কোম্পানি ২-for-১ স্টক স্প্লিট ঘোষণা করে, তাহলে প্রতিটি শেয়ারহোল্ডারকে বর্তমান একটির পরিবর্তে দুইটি নতুন শেয়ার দেওয়া হবে, এবং শেয়ারের বাজার মূল্য অর্ধেকে নেমে আসবে।


স্টক স্প্লিটের প্রধান উদ্দেশ্য হলো শেয়ারের বাজারমূল্যকে এমন স্তরে আনা যাতে এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও সাশ্রয়ী এবং বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। যখন একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়, তখন ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি ক্রয় করা কঠিন হতে পারে। স্টক স্প্লিট এই সমস্যার সমাধান করে, শেয়ারগুলোর সংখ্যা বাড়িয়ে এবং মূল্য কমিয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি আরও সাশ্রয়ী করে তোলে। এছাড়া, এটি সাধারণভাবে শেয়ারের তরলতা উন্নত করে এবং বাজারে একটি ইতিবাচক সংকেত প্রদান করে, যা কোম্পানির সুষ্ঠু পরিচালনার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়। যদিও স্টক স্প্লিট শেয়ারহোল্ডারদের মোট মূলধন বা কোম্পানির বাজার মূলধন পরিবর্তন করে না, এটি বিনিয়োগকারীদের মনোভাব ও বাজারের প্রতিক্রিয়া প্রভাবিত করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত কোম্পানির সুস্থ আর্থিক পরিস্থিতি এবং শেয়ার মূল্যের বৃদ্ধি নির্দেশ করে, যা বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদী বিশ্বাস ও আগ্রহ ধরে রাখতে সাহায্য করে। স্টক স্প্লিটের পরে শেয়ারের মূল্য কমে যায়, কিন্তু শেয়ারহোল্ডারদের মোট শেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, ফলে তাদের সামগ্রিক বিনিয়োগের মান অপরিবর্তিত থাকে। এটি সাধারণত কোম্পানির বৃদ্ধির লক্ষ্য এবং বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বজায় রাখার জন্য একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


৬.৫ বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটি থেকে আয় (Interest from Bonds)

বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটি থেকে আয় (Interest from Bonds) হলো একটি নির্ভরযোগ্য এবং পূর্বানুমানযোগ্য আয়ের উৎস যা বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করে। বন্ড একটি ঋণপত্র যা কোনো কোম্পানি, সরকার বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের মূলধন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ইস্যু করে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সুদ হারে অর্থ ধার দেয়। এই সুদ সাধারণত নির্দিষ্ট সময় অন্তর, যেমন প্রতি ছয় মাস বা প্রতি বছর পরিশোধ করা হয় এবং এটি কুপন পেমেন্ট নামে পরিচিত। বিনিয়োগকারী তার ধার দেওয়া মূলধনের উপর এই সুদ আয় করে থাকে যা একটি নির্ধারিত পরিমাণ এবং সময়ের মধ্যে প্রদত্ত হয়। বন্ডের সুদ হার, যাকে ফিক্সড রেট বা ফ্লোটিং রেট বলা হয়, বন্ডের প্রকারভেদ এবং বাজারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। ফিক্সড রেট বন্ড বিনিয়োগকারীদের একটি স্থিতিশীল এবং পূর্বানুমানযোগ্য আয় প্রদান করে, কারণ সুদের হার নির্দিষ্ট থাকে এবং কোনো পরিবর্তন হয় না। অন্যদিকে, ফ্লোটিং রেট বন্ডের সুদের হার বাজারের সুদের হার বা অন্য কোনো সূচকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে, যা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে।


অন্যান্য সিকিউরিটি, যেমন সঞ্চয়পত্র, মিউচুয়াল ফান্ড, এবং ডিবেঞ্চার থেকেও সুদের আয় সম্ভব। সঞ্চয়পত্র সাধারণত নিরাপদ এবং স্থিতিশীল সুদ প্রদান করে এবং সরকার বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা ইস্যু করা হয়। মিউচুয়াল ফান্ড বিভিন্ন ধরনের বন্ড ও সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করে, যা সুদের আয় এবং মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদেরকে আয়ের সুযোগ দেয়। বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটি থেকে আয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি তাদের পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য যোগ করে এবং বাজারের ওঠানামার ঝুঁকি কমায়। যদিও এই ধরনের আয় সাধারণত শেয়ার বাজারের মতো উচ্চ রিটার্ন প্রদান করে না, তবে এর স্থিতিশীলতা এবং নির্ভরযোগ্যতা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে।


৬.৬ ট্রেডিং প্রফিট (Trading Profit)

ট্রেডিং প্রফিট (Trading Profit) হলো আর্থিক লাভ যা একজন ট্রেডার শেয়ার, ফরেক্স, কমোডিটি, ক্রিপ্টোকারেন্সি, বা অন্যান্য ট্রেডিং সম্পদ ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জন করে। ট্রেডিং প্রফিট তখনই অর্জিত হয় যখন একটি সম্পদ ক্রয়ের দামের চেয়ে বিক্রয়ের দাম বেশি হয়। এই লাভের পরিমাণ ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যকার পার্থক্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ট্রেডার ১,০০০ টাকা মূল্যে একটি শেয়ার ক্রয় করেন এবং ১,২০০ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন, তাহলে তার ট্রেডিং প্রফিট হবে ২০০ টাকা। ট্রেডিং প্রফিটের জন্য ট্রেডারদের বাজারের পরিস্থিতি, মূল্য ওঠানামা, এবং অর্থনৈতিক সূচকের উপর নজর রাখতে হয়। বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণের জন্য ট্রেডাররা সাধারণত প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ, মৌলিক বিশ্লেষণ, এবং বিভিন্ন ধরনের ট্রেডিং স্ট্রাটেজি ব্যবহার করে। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ মূলত মূল্য চার্ট এবং সূচক ব্যবহার করে বাজারের গতিপথ নির্ধারণে সহায়তা করে, যেখানে মৌলিক বিশ্লেষণ কোম্পানির আর্থিক তথ্য, শিল্পের অবস্থা, এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ফ্যাক্টর বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়।


ট্রেডিং প্রফিটের আকর্ষণ হলো তার দ্রুততার সঙ্গে আর্থিক লাভের সম্ভাবনা; তবে এটি উচ্চ ঝুঁকির সাথেও সম্পৃক্ত। ট্রেডিং প্রফিট অর্জনের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সঠিক সময়ে ক্রয়-বিক্রয়, এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা অপরিহার্য। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল যেমন স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার, পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যকরণ, এবং লিভারেজ ব্যবস্থাপনা ট্রেডারদের ক্ষতি সীমিত করতে সাহায্য করে। যদিও ট্রেডিং প্রফিটের মাধ্যমে দ্রুত আর্থিক লাভের সুযোগ থাকে, তবে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং সঠিক জ্ঞান ও কৌশল ছাড়া এখানে সফলতা অর্জন কঠিন হতে পারে। বাজারের অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা ট্রেডারদের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, তাই ট্রেডারদের সবসময় সতর্ক এবং সঠিক বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করা উচিত। এছাড়া, অভিজ্ঞতা ও ধারাবাহিক শিখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন ট্রেডার তার ট্রেডিং প্রফিট উন্নত করতে পারে।


৬.৭ অপশনস এবং ফিউচারস (Options and Futures)

অপশনস এবং ফিউচারস হলো ডেরিভেটিভ সিকিউরিটিজের দুটি সাধারণ প্রকার যা বিনিয়োগকারীদেরকে তাদের বিনিয়োগ কৌশল এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে সাহায্য করে। এগুলি মূলত স্টক, কমোডিটি, মুদ্রা, এবং অন্যান্য আর্থিক সম্পদের মূল্য ওঠানামার বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে এবং লাভের সুযোগ সৃষ্টি করে। যদিও অপশনস এবং ফিউচারসের মধ্যে বেশ কিছু মিল রয়েছে, তবে তাদের কার্যপ্রণালী এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পার্থক্য বিদ্যমান।


অপশনস (Options)

অপশনস হলো একটি চুক্তি যা বিনিয়োগকারীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট মূল্যে একটি নির্দিষ্ট সম্পদ ক্রয় বা বিক্রয়ের অধিকার প্রদান করে, তবে বাধ্যবাধকতা নয়। অপশনস প্রধানত দুই প্রকারের হয়ে থাকে: কল অপশন (Call Option) এবং পুট অপশন (Put Option)। কল অপশন ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে শেয়ার কেনার অধিকার দেয়, যেখানে পুট অপশন ক্রেতাকে শেয়ার বিক্রয়ের অধিকার দেয়। অপশন ক্রেতারা সাধারণত একটি প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন, যা তাদের ক্রয় বা বিক্রয়ের অধিকার প্রদান করে। অপশনসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বাজারের ওঠানামা থেকে সুরক্ষা নিতে পারেন এবং অল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে বাজারের মূল্য পরিবর্তনের সুযোগ নিতে পারেন। অপশনসের সুবিধা হলো এর সীমিত ক্ষতি (প্রিমিয়াম পরিমাণে সীমাবদ্ধ) এবং বিপুল লাভের সম্ভাবনা।


ফিউচারস (Futures)

ফিউচারস একটি চুক্তি যা বিনিয়োগকারীকে ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট তারিখে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ ক্রয় বা বিক্রয়ের বাধ্যবাধকতা প্রদান করে। ফিউচারস চুক্তি স্টক, কমোডিটি, সূচক, এবং মুদ্রাসহ বিভিন্ন সম্পদের জন্য উপলব্ধ। ফিউচারস চুক্তি বাধ্যতামূলক, অর্থাৎ ক্রেতা এবং বিক্রেতা নির্দিষ্ট তারিখে নির্ধারিত মূল্যে সম্পদ বিনিময় করতে বাধ্য। ফিউচারস সাধারণত হেজিং বা মূল্যের ঝুঁকি হ্রাস করতে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারীদের মূল্যের ওঠানামা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যকরণে সহায়তা করে। তবে, ফিউচারসে ক্ষতির পরিমাণ সীমিত নয়, এবং এটি অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।


অপশনস এবং ফিউচারসের মধ্যে পার্থক্য

অপশনস এবং ফিউচারসের মূল পার্থক্য হলো বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে। অপশনস ক্রেতাকে একটি অধিকার প্রদান করে, যেখানে ফিউচারস চুক্তি ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়কেই বাধ্যবাধকতার মধ্যে ফেলে। অপশনসের ক্ষতি সীমিত, যেখানে ফিউচারস চুক্তিতে ক্ষতির পরিমাণ অসীম হতে পারে। এছাড়া, অপশনসের জন্য একটি প্রিমিয়াম দিতে হয়, যা ফিউচারসে প্রয়োজন হয় না। অপশনস এবং ফিউচারস উভয়ই বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং লাভের সুযোগ সৃষ্টি করে, তবে তাদের ব্যবহারের আগে সঠিক জ্ঞান এবং কৌশল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অপশনস এবং ফিউচারসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের আর্থিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন।


৬.৮ শেয়ার ডিভিডেন্ড (Stock Dividend)

শেয়ার ডিভিডেন্ড হলো একটি ধরনের ডিভিডেন্ড যা কোম্পানি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের নগদ অর্থের পরিবর্তে অতিরিক্ত শেয়ারের আকারে প্রদান করে। এটি একটি সাধারণ উপায় যার মাধ্যমে কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদেরকে তাদের আয়ের অংশ বিতরণ করে, তবে নগদ অর্থের পরিবর্তে শেয়ারের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। শেয়ার ডিভিডেন্ড সাধারণত তখন দেওয়া হয় যখন কোম্পানির হাতে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ না থাকে বা তারা তাদের নগদ অর্থ সংরক্ষণ করতে চায়, কিন্তু শেয়ারহোল্ডারদেরকে লাভের একটি অংশ দিতে চায়। শেয়ার ডিভিডেন্ডের ফলে শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানার শতাংশ অপরিবর্তিত থাকে, কারণ প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডার তাদের পূর্বের শেয়ার হোল্ডিংয়ের অনুপাতে অতিরিক্ত শেয়ার পান। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি কোম্পানি ১০% শেয়ার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে এবং একজন শেয়ারহোল্ডারের কাছে ১০০ শেয়ার থাকে, তাহলে তিনি অতিরিক্ত ১০ শেয়ার পাবেন, ফলে তার মোট শেয়ারের সংখ্যা হবে ১১০।


শেয়ার ডিভিডেন্ডের সুবিধা

  • নগদ সংরক্ষণ: শেয়ার ডিভিডেন্ড প্রদান করে কোম্পানি তাদের নগদ অর্থ সংরক্ষণ করতে পারে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক বিনিয়োগ বা অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে।
  • বিনিয়োগকারীদের মালিকানা বৃদ্ধি: অতিরিক্ত শেয়ার প্রাপ্তির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানিতে মালিকানা বৃদ্ধি পায়, যা ভবিষ্যতে নগদ ডিভিডেন্ড বা শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে লাভের সম্ভাবনা বাড়ায়।
  • পুনঃবিনিয়োগের উৎস: বিনিয়োগকারীরা অতিরিক্ত শেয়ার পেয়ে ভবিষ্যতে সেই শেয়ারগুলোর মাধ্যমে পুনঃবিনিয়োগ বা লাভ অর্জনের সুযোগ পান।


শেয়ার ডিভিডেন্ডের সীমাবদ্ধতা

  • শেয়ারের মূল্য হ্রাস: শেয়ার ডিভিডেন্ডের ফলে বাজারে শেয়ারের সংখ্যা বেড়ে যায়, যা শেয়ারের বাজারমূল্যকে কমিয়ে দিতে পারে।
  • অপছন্দনীয় হতে পারে: কিছু বিনিয়োগকারী যারা নগদ আয়ের উপর নির্ভর করেন, তারা শেয়ার ডিভিডেন্ডকে কম পছন্দ করতে পারেন কারণ এতে তাৎক্ষণিক কোনো নগদ আয় হয় না।
  • অর্থনৈতিক প্রভাব: শেয়ার ডিভিডেন্ডের ঘোষণা অনেক সময় বিনিয়োগকারীদেরকে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে মিশ্র সংকেত দিতে পারে, বিশেষ করে যদি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী না হয়।


৬.৯ শেয়ার বিক্রি করে লাভ অর্জন (Profit from Sale of Shares)

শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে লাভ হলো একটি আর্থিক প্রক্রিয়া যেখানে বিনিয়োগকারী তার মালিকানাধীন শেয়ারগুলো বাজারে বিক্রি করে এবং সেই বিক্রয়ের মাধ্যমে লাভ অর্জন করে। শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে লাভ সাধারণত মূলধন লাভ (Capital Gain) হিসেবে গণ্য করা হয়, যা তখনই অর্জিত হয় যখন শেয়ার বিক্রয়ের মূল্য তার ক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি হয়। শেয়ার বাজারে শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের মধ্যে যে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে, সেটিই বিনিয়োগকারীর লাভের মূল উৎস।


শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে লাভের প্রক্রিয়া

  • বাজার বিশ্লেষণ: বিনিয়োগকারীরা প্রথমে বাজার বিশ্লেষণ করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন কখন শেয়ার বিক্রি করলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যাবে। বাজার বিশ্লেষণে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ, মৌলিক বিশ্লেষণ, এবং বাজারের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
  • শেয়ার বিক্রয়: বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিনিয়োগকারী যখন তার শেয়ারের মূল্য সর্বোচ্চ মনে করেন, তখন বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন। বিক্রয়ের জন্য ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে লগইন করে শেয়ার বিক্রয়ের অর্ডার প্লেস করা হয়।
  • লাভের পরিমাণ নির্ধারণ: শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত লাভ হলো শেয়ার বিক্রয়ের মূল্য থেকে ক্রয়মূল্য এবং কোন লেনদেন খরচ বাদ দিলে যা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন বিনিয়োগকারী ৫০০ টাকা প্রতি শেয়ারে শেয়ার ক্রয় করেন এবং ৭০০ টাকা প্রতি শেয়ারে বিক্রি করেন, তাহলে তার প্রতি শেয়ারে লাভ হবে ২০০ টাকা।


শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে লাভের সুবিধা

  • তাৎক্ষণিক লাভ: শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগের লাভ তাৎক্ষণিকভাবে নগদ অর্থে রূপান্তর করতে পারেন, যা তার আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • মার্কেট সুযোগ গ্রহণ: শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীরা বাজারের অস্থিরতা বা অন্যান্য আর্থিক সংকট থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন।
  • ক্যাশ ফ্লো: শেয়ার বিক্রয় থেকে পাওয়া নগদ অর্থ বিনিয়োগকারীর জন্য ক্যাশ ফ্লো বৃদ্ধি করে, যা অন্য বিনিয়োগে পুনঃবিনিয়োগ বা ব্যক্তিগত খরচের জন্য ব্যবহার করা যায়।


শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে লাভের সীমাবদ্ধতা

  • বাজারের অস্থিরতা: শেয়ার বাজারের অস্থিরতার কারণে কখনো কখনো শেয়ার বিক্রয় প্রত্যাশিত লাভ দিতে নাও পারে, এবং বিপরীতে ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকে।
  • কর: শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত লাভের উপর সাধারণত মূলধন লাভ কর (Capital Gain Tax) আরোপ করা হয়, যা মোট লাভকে হ্রাস করতে পারে।
  • অসুবিধাজনক সময়: বাজারের দরপতনের সময় শেয়ার বিক্রি করলে লাভের পরিবর্তে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।


৭. শেয়ারের দাম ওঠানামার কারণ

শেয়ারের দাম ওঠানামার পিছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করে, যা সাধারণভাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, এবং বাজারের মানসিকতাসমূহ দ্বারা প্রভাবিত হয়। প্রথমত, একটি কোম্পানির আর্থিক পারফরম্যান্স যেমন আয়, মুনাফা, ও খরচের প্রতিবেদন সরাসরি শেয়ার মূল্যকে প্রভাবিত করে। কোম্পানির লাভজনকতা বৃদ্ধি পেলে শেয়ারের দাম সাধারণত বেড়ে যায়, এবং লাভ কমলে দাম কমে যায়। দ্বিতীয়ত, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যেমন দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, এবং সুদের হারও শেয়ার বাজারের দামের ওঠানামায় বড় ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে খরচ বাড়াতে পারে, যা কোম্পানির মুনাফায় প্রভাব ফেলতে পারে। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা, সরকারী নীতি পরিবর্তন, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শেয়ার বাজারের ওপর প্রভাব ফেলে। একটি দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অথবা নতুন নীতির ঘোষণার ফলে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। চতুর্থত, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যেমন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, বা মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবও স্থানীয় বাজারে পড়ে। পঞ্চমত, বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যও শেয়ার দামকে প্রভাবিত করে; যখন কোন শেয়ারের চাহিদা বেড়ে যায় এবং সরবরাহ কমে যায়, তখন তার দাম বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা এবং বাজারের অনুভূতি শেয়ারের দামের ওঠানামায় বড় ভূমিকা রাখে। সংবাদ ও বিশ্লেষণমূলক রিপোর্ট যা কোম্পানির পারফরম্যান্স অথবা অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত হয়, সেগুলিও শেয়ার বাজারের দামকে প্রভাবিত করতে পারে। এই সমস্ত উপাদানের সমন্বয়ে শেয়ার মার্কেটের দাম ওঠানামা ঘটে, যা বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।


৭.১ শেয়ারের দাম বাড়ার সম্ভাব্য কারন

শেয়ারের দাম বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে ওঠানামা করে। সাধারণত শেয়ারের দাম বাড়ার মূল কারণগুলো হলো:

  • কোম্পানির ভালো পারফরম্যান্স: কোম্পানি যদি ভালো ব্যবসা করে, বেশি মুনাফা অর্জন করে এবং তার ব্যবসার সম্প্রসারণে সফল হয়, তবে বিনিয়োগকারীরা সেই কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এতে চাহিদা বাড়ে এবং শেয়ারের দামও বাড়ে।
  • লভ্যাংশ ঘোষণা: যখন কোম্পানি উচ্চ লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড) ঘোষণা করে, তখন বিনিয়োগকারীরা সেই কোম্পানির শেয়ার কিনতে চায়, কারণ তারা লভ্যাংশ থেকে লাভ পেতে চায়। এই চাহিদার বৃদ্ধির ফলে শেয়ারের দামও বেড়ে যায়।
  • মার্কেটের সার্বিক অবস্থান: যদি দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে থাকে এবং বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আস্থা পায়, তবে শেয়ার মার্কেটের সার্বিক চাহিদা বাড়ে। এ সময় বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামও বাড়তে থাকে।
  • নতুন প্রজেক্ট বা উদ্ভাবন: যদি কোম্পানি কোনো নতুন প্রজেক্ট বা উদ্ভাবনী পণ্য বাজারে আনে যা ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা বেশি শেয়ার কেনে। এর ফলে চাহিদা বাড়ে এবং শেয়ারের দামও বেড়ে যায়।
  • বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস: বিনিয়োগকারীরা যদি বিশ্বাস করেন যে কোম্পানির ভবিষ্যত উজ্জ্বল, তাহলে তারা বেশি শেয়ার কিনতে আগ্রহী হয়। এটা বাজারে চাহিদা বাড়ায়, এবং দামও বাড়তে থাকে।
  • মার্কেটের জল্পনা-কল্পনা: কখনও কখনও বাজারে গুজব বা জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে যে একটি কোম্পানি বড় চুক্তি করতে যাচ্ছে বা ভালো খবর প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে শুরু করে, যার ফলে শেয়ারের দাম বেড়ে যায়।
  • সরবরাহ ও চাহিদা: যদি কোনো শেয়ারের সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকে, অর্থাৎ অনেকেই সেই শেয়ার কিনতে চান, তবে স্বাভাবিকভাবে শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে। চাহিদা ও সরবরাহের এই ভারসাম্য দাম নির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করে।


৭.২ শেয়ারের দাম কমার সম্ভাব্য কারন

শেয়ারের দাম বিভিন্ন কারণের প্রভাবে কমতে পারে। মার্কেটের অবস্থান, কোম্পানির পারফরম্যান্স, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, এবং অন্যান্য বহিরাগত উপাদান শেয়ারের দামের ওপর প্রভাব ফেলে। নিচে শেয়ারের দাম কমার প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • কোম্পানির খারাপ পারফরম্যান্স: যদি কোনো কোম্পানি প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জন করতে না পারে বা ব্যবসায়িক খারাপ পারফরম্যান্স দেখায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করে। এর ফলে শেয়ারের দাম কমে যায়। যেমন, যদি কোনো কোম্পানির আয় বা মুনাফা আগের চেয়ে কমে যায় বা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা সেই কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়ে।
  • নেতিবাচক সংবাদ বা ইভেন্ট: কোম্পানির সাথে কোনো নেতিবাচক ঘটনা ঘটে, যেমন বড় কোনো প্রজেক্টের ব্যর্থতা, পরিচালনা কমিটির অভ্যন্তরীণ সমস্যা, বা কোনো আইনি জটিলতা, তাহলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায় এবং শেয়ার বিক্রি বেড়ে যায়। এর ফলে দাম হ্রাস পায়।
  • মন্দা বা অর্থনৈতিক সংকট: দেশের বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি, বা মন্দার কারণে মার্কেটের সামগ্রিক অবস্থা খারাপ হলে শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে। অর্থনৈতিক মন্দার সময় বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তার জন্য শেয়ার বিক্রি করে এবং পুঁজির নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে, যেমন গোল্ড বা বন্ডে বিনিয়োগ করে।
  • শেয়ার মার্কেটের ভোলাটিলিটি (Volatility): শেয়ার বাজারে সবসময়ই ওঠানামা থাকে। মার্কেটের অত্যধিক ভোলাটিলিটি বা অস্থিতিশীলতার কারণে অনেক সময় শেয়ারের দাম কমতে থাকে। বিনিয়োগকারীরা যদি শেয়ার বাজারে অস্বস্তি অনুভব করেন বা বাজারে গুজব ছড়ায়, তবে তারা শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করে, যার ফলে দাম কমে।
  • সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য: যদি শেয়ারের বাজারে সরবরাহ বেশি হয় এবং চাহিদা কম থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই দাম কমতে শুরু করে। এর অর্থ, যখন বেশি বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করতে চায় কিন্তু শেয়ার কিনতে চাওয়া বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কম থাকে, তখন দাম কমে যায়।
  • লাভের অংশগ্রহণ কমানো (Reduced Dividend): কোম্পানি যদি লভ্যাংশ প্রদানের হার কমিয়ে দেয় বা লভ্যাংশ বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে শেয়ার বিক্রি করতে পারে। এর ফলে শেয়ারের দাম কমে যায়।
  • মার্কেটের জল্পনা ও গুজব: বাজারে অনেক সময় বিভিন্ন গুজব বা অনুমানের কারণে শেয়ারের দাম কমতে পারে। যেমন, যদি কোনো কোম্পানির দেউলিয়া হওয়ার গুজব ছড়ায় বা কোনো নেতিবাচক তথ্য ছড়ায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি শুরু করে এবং এর ফলে দাম হ্রাস পায়।
  • সুদের হার বৃদ্ধি: যখন কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি করে, তখন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যেতে পারে। কারণ, উচ্চ সুদের হারের কারণে বন্ড বা অন্যান্য নিরাপদ বিনিয়োগে রিটার্ন বেশি পাওয়া যায়। এতে শেয়ার বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে শেয়ারের দাম কমে।
  • প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি: কোনো নির্দিষ্ট শিল্প বা খাতে নতুন কোম্পানি আসলে বা বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেলে পুরনো কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক লাভ কমে যেতে পারে। এই প্রতিযোগিতা কোম্পানির আয়কে প্রভাবিত করলে তার শেয়ারের দামও কমে।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বৈশ্বিক ইভেন্ট: বৈশ্বিক মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা যুদ্ধের মতো ঘটনা শেয়ার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের ঘটনার কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে আস্থা হারায় এবং শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে দাম কমে।
  • নিয়ন্ত্রক পরিবর্তন (Regulatory Changes): সরকার বা নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কোনো কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন বা কর বৃদ্ধি শেয়ার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো শিল্প খাতে কর বাড়ানো হয় বা নতুন নিয়ন্ত্রক নীতি প্রণয়ন করা হয়, যা কোম্পানির উপর চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে সেই কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে।
  • নতুন পণ্যের ব্যর্থতা: যদি কোনো কোম্পানি নতুন পণ্য বা সেবা বাজারে আনে, এবং সেই পণ্য বা সেবা বাজারে সফল না হয়, তাহলে কোম্পানির শেয়ার মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে প্রযুক্তি বা ভোক্তা পণ্যের ক্ষেত্রে এটি বেশি ঘটে।
  • বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হয়ে বিক্রি করা: কখনও কখনও বিনিয়োগকারীরা মার্কেটের সামান্য ওঠানামায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং তাদের শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন। এই আতঙ্কের বিক্রি (Panic Selling) অনেক সময় শেয়ারের দাম কমার কারণ হতে পারে।
  • বড় বিনিয়োগকারীর বিক্রি: যদি কোনো বড় বিনিয়োগকারী বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করা হয়, তাহলে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ তৈরি হয়, যা শেয়ারের দাম কমিয়ে দেয়।


৮. শেয়ার মার্কেটের মূল উপাদান

শেয়ার মার্কেটের মূল উপাদানগুলি বাজারের কার্যক্রম এবং বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম এবং সেবাসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে। প্রথমত, স্টক এক্সচেঞ্জ এমন একটি বাজার যেখানে শেয়ার ও অন্যান্য সিকিউরিটিজ কেনাবেচা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE) এর মতো এক্সচেঞ্জগুলি বাজারের সার্বিক অবস্থার সূচক হিসেবে কাজ করে। ব্রোকারেজ ফার্ম এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, যারা বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে শেয়ার কেনা-বেচা সম্পন্ন করে। ব্রোকারেজ ফার্মগুলি অনলাইন অথবা অফলাইন পরিষেবা প্রদান করে এবং বিভিন্ন ধরনের কমিশন এবং ফি দিয়ে তাদের সেবা প্রদান করে। ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট শেয়ারগুলির ডিজিটাল সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয়, যা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার লেনদেনের সুবিধা দেয় এবং হারানোর ঝুঁকি কমায়।


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো স্টক ইনডেক্স, যা বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিমাপ করে। উদাহরণস্বরূপ, ডিএসই কম্পোজিট ইনডেক্স বাজারের সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে নির্দেশ করে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC) বা অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারের নিয়ম ও আইন প্রয়োগ করে, যা বাজারের স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করে। ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম যেমন ব্রোকারের ওয়েবসাইট বা ট্রেডিং অ্যাপস বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা-বেচার সুযোগ দেয়। শেয়ার মূল্য বাজারের প্রাপ্তি এবং ডিভিডেন্ড শেয়ারহোল্ডারদের লাভের অংশ হিসেবে প্রদান করা হয়। মৌলিক বিশ্লেষণ এবং কারিগরি বিশ্লেষণ শেয়ার মূল্য নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে মৌলিক বিশ্লেষণ কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ করে এবং কারিগরি বিশ্লেষণ বাজারের ডেটা ও চার্টের মাধ্যমে ভবিষ্যতের মূল্য অনুমান করে। এই উপাদানগুলো একত্রে শেয়ার মার্কেটের কার্যক্রম এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।


৯. বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট

বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে অন্যান্য দেশের শেয়ার বাজার থেকে আলাদা করে তোলে। প্রথমত, এটি একটি উদীয়মান বাজার, যেখানে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এখনও পরিপক্বতার অনেক দূরত্ব বাকি। শেয়ার বাজার দুটি প্রধান এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পরিচালিত হয়—ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE)। DSE দেশের বৃহত্তম এবং প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে বেশিরভাগ কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। । বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে ছোট ও মাঝারি আকারের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে, তাদের বিনিয়োগ সাধারণত স্বল্প মেয়াদি এবং অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র বাজারের ধারা এবং গুজবের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন, যা বাজারের অস্থিরতা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে আরও একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো "স্পেকুলেশন" বা অনুমানমূলক লেনদেন। কিছু বিনিয়োগকারী শেয়ারের প্রকৃত মানের ওপর ভিত্তি না করে স্বল্পমেয়াদে উচ্চ মুনাফার আশা করে বিনিয়োগ করেন। ফলে, বাজারের দাম হঠাৎ করেই অনেকটা বেড়ে যেতে পারে এবং একইভাবে হ্রাসও পেতে পারে।


শেয়ার মার্কেটের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো স্বচ্ছতা এবং নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি। যদিও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC) নিয়মিতভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, তবু কিছু অসাধু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বাজারকে প্রভাবিত করে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে। এছাড়াও, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সঠিক শিক্ষার অভাব এবং কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের ধীরগতি বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেশ কিছু সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন কোম্পানির আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শেয়ার লেনদেন সহজতর করা। এগুলোর ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট আরও পরিপক্ব এবং স্থিতিশীল হওয়ার আশা করা যায়। আশা করা যায় অচিরেই বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করার আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে।



১০. শেয়ার কেনার প্রক্রিয়া

শেয়ার কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয় একটি ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে, যা শেয়ারগুলির ডিজিটাল মালিকানা নিশ্চিত করে। ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি ব্রোকারেজ ফার্ম বা ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট সাইজ ফটোগ্রাফ এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে। এর পরে, একটি ব্রোকার নির্বাচন করা হয়—যে অনলাইন বা অফলাইন ব্রোকারের মাধ্যমে শেয়ার বাজারে লেনদেন সম্পন্ন করা যাবে। ব্রোকারের কমিশন এবং সেবার বিবরণ যাচাই করে আপনার ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে, এবং সেই অ্যাকাউন্টের সাথে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত করতে হবে। অর্থ জমা দেওয়ার পর, আপনি শেয়ার কেনার জন্য প্রস্তুত।


শেয়ার কেনার পরবর্তী ধাপে শেয়ার নির্বাচন করা। এটি করার জন্য কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, বাজারের প্রবণতা এবং বিভিন্ন স্টক স্ক্রীনিং টুল ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করা হয়। নির্বাচিত শেয়ার কেনার জন্য মার্কেট অর্ডার (বর্তমান বাজার মূল্যে কিনুন) অথবা লিমিট অর্ডার (নির্দিষ্ট দামে কিনুন) প্লেস করতে হয়। অর্ডার দেওয়ার পর, একটি কনফার্মেশন পাবেন যা নিশ্চিত করবে যে আপনার অর্ডার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এরপর, শেয়ারগুলির পারফরমেন্স নিয়মিতভাবে মনিটর করা এবং বাজারের খবর ও আপডেট অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পোর্টফোলিওর স্বাস্থ্য নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এবং পুনর্বিন্যাস করা হয়, যা আপনার দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


১০.১ শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য কোন কোন অ্যাপ ব্যবহার করা হয়?

শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করা হয়, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ, দ্রুত এবং সাশ্রয়ী উপায়ে শেয়ার কেনা-বেচার সুযোগ দেয়। বাংলাদেশে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (DSE) নিজস্ব "DSE Mobile App" বিনিয়োগকারীদের কাছে জনপ্রিয়, কারণ এটি রিয়েল-টাইমে শেয়ারের মূল্য যাচাই, বাজার বিশ্লেষণ এবং শেয়ার কেনা-বেচার সুবিধা প্রদান করে। এছাড়াও, IDLC Investments Limited-এর মতো স্থানীয় অ্যাপগুলি বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট এবং সহজ ট্রেডিংয়ের সুবিধা দেয়। অনেক ব্রোকারেজ ফার্ম তাদের নিজস্ব অ্যাপ সরবরাহ করে, যা ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারেন। আন্তর্জাতিকভাবে, "Robinhood", "E*TRADE", এবং "Webull" এর মতো অ্যাপগুলি খুবই জনপ্রিয়, কারণ এগুলো বিনা কমিশনে শেয়ার কেনা-বেচার সুযোগ দেয় এবং উন্নত বিশ্লেষণ টুলস সরবরাহ করে। Robinhood বিশেষ করে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযোগী, কারণ এর ব্যবহারবান্ধব ইন্টারফেস এবং শিক্ষামূলক সামগ্রী বিনিয়োগের জগতে প্রবেশকে সহজ করে তোলে। "Fidelity Investments" এবং "TD Ameritrade" পেশাদার বিনিয়োগকারীদের জন্য আরো উন্নত ট্রেডিং ফিচার এবং গবেষণার সুযোগ দেয়, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে। এই অ্যাপগুলো বিভিন্ন বাজার পরিস্থিতি এবং শেয়ার বিশ্লেষণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর এবং বিনিয়োগকারীদের মোবাইল বা ডেস্কটপের মাধ্যমে সহজে ট্রেডিং পরিচালনা করতে সহায়তা করে।


১০.২ শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য সেরা ব্রোকার

শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য সেরা ব্রোকার নির্বাচন করা বিনিয়োগকারীর সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একটি ভালো ব্রোকার নির্ভরযোগ্য সেবা, কম ফি, উন্নত ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম, এবং বাজার বিশ্লেষণের সুযোগ প্রদান করে। বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্রোকার রয়েছে, যেমন IDLC Securities Ltd, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি এবং গ্রাহক সেবার জন্য পরিচিত। তাদের ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম অত্যন্ত ব্যবহারবান্ধব এবং বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন বাজার গবেষণার তথ্য সরবরাহ করে। LankaBangla Securities বাংলাদেশের বৃহত্তম ব্রোকারেজ ফার্মগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা রিয়েল-টাইম ট্রেডিং এবং মার্কেট বিশ্লেষণের সুবিধা প্রদান করে। এছাড়াও BRAC EPL Stock Brokerage এবং City Brokerage-ও শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান, যারা গ্রাহকদের জন্য উন্নত প্রযুক্তি এবং নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান করে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারের ক্ষেত্রে, Fidelity Investments দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য সেরা ব্রোকার হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্নত গবেষণা ও বিশ্লেষণ টুলস সরবরাহ করে, যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা আরো সুসংগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। Charles Schwab এবং TD Ameritrade-ও উন্নত ট্রেডিং টুলস, রিয়েল-টাইম বাজার বিশ্লেষণ এবং বিনিয়োগ শিক্ষামূলক উপকরণ দিয়ে সমৃদ্ধ, যা নতুন এবং অভিজ্ঞ উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযোগী। Robinhood, যেটি কমিশন মুক্ত ট্রেডিংয়ের সুবিধা দেয়, বিশেষত নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়, কারণ এটি সহজ ব্যবহারযোগ্য এবং বিনিয়োগকে আরো সাশ্রয়ী করে তোলে। ব্রোকার নির্বাচন করার সময় ফি, গ্রাহক সেবা, এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারযোগ্যতা বিচার করে নির্বাচন করা উচিত, যাতে বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা সুবিধা পান।


শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য সেরা কোম্পানি

শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য সেরা কোম্পানি নির্ধারণ করতে হলে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়, যেমন কোম্পানির আর্থিক স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা, মুনাফা, এবং বাজারে তাদের অবস্থান। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ভালো পারফর্ম করা কোম্পানিগুলোই সাধারণত বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হয়। বাংলাদেশের বাজারে, Grameenphone (GP) শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি দেশের বৃহত্তম টেলিকম সেবাদাতা এবং ধারাবাহিকভাবে ভালো লভ্যাংশ প্রদান করে। British American Tobacco Bangladesh (BATBC) একটি উল্লেখযোগ্য কোম্পানি, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী লাভজনকতার একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে, Square Pharmaceuticals এবং Renata Limited-এর মতো প্রখ্যাত কোম্পানিগুলি দেশের প্রধান ওষুধ উৎপাদক এবং প্রবৃদ্ধির প্রতি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়াও, ব্যাংকিং খাতে BRAC Bank এবং Eastern Bank Limited (EBL) অন্যতম সেরা ব্যাংক, যারা নিয়মিত ভালো মুনাফা করে এবং শক্তিশালী ব্যাংকিং কাঠামো বজায় রাখে। আন্তর্জাতিক বাজারে, কিছু সেরা কোম্পানি হলো Apple (AAPL), যা বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি এবং ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। Amazon (AMZN) ই-কমার্স এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, যার কারণে তাদের শেয়ার দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয়। Microsoft (MSFT) ও শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি এবং তারা ক্লাউড কম্পিউটিং ও সফটওয়্যার সেক্টরে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। Tesla (TSLA) বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে নেতৃত্ব দেওয়া কোম্পানি, যার প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। Johnson & Johnson (JNJ) স্বাস্থ্যসেবায় একটি বৈশ্বিক কোম্পানি, যা দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষিত বিনিয়োগের জন্য বিখ্যাত। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের আগে কোম্পানির আর্থিক বিবরণ এবং বাজার বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে বিনিয়োগকারীরা লাভজনক এবং নিরাপদ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।


উপসংহার

শেয়ার ও শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে আলোচনা শেষ করতে গেলে, এটির প্রভাব, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার সমন্বিত মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার মার্কেট একটি দেশের অর্থনীতির হৃদয়, যা ব্যবসার বৃদ্ধিতে অর্থায়ন সরবরাহ করে এবং সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগের মাধ্যমে সঞ্চয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতিতে শেয়ার মার্কেটের ভূমিকা ক্রমেই বাড়ছে, যদিও এটি এখনও পুরোপুরি পরিপক্ব হয়নি। শেয়ার মার্কেটের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো, এটি সাধারণ মানুষকে ছোট পরিসরে বিনিয়োগের মাধ্যমে বৃহৎ ব্যবসার অংশীদার হওয়ার সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে পুঁজি প্রবাহিত হয়, যার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। তবে শেয়ার মার্কেটের আর্থিক অবকাঠামোকে আরও মজবুত করা এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব হলো বাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং কোনো ধরনের অসাধু কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শেয়ার মার্কেটের অস্থিতিশীলতা এবং ঝুঁকি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষত, যারা শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদে মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করেন, তারা অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হন। অতএব, বিনিয়োগকারীদের জন্য সঠিক জ্ঞান ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল অবলম্বন করা অপরিহার্য। একইসঙ্গে, শেয়ার বাজারের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের বেসরকারি খাতের বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং পুঁজিবাজারের আধুনিকীকরণের মাধ্যমে শেয়ার মার্কেটের গতিশীলতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সহজে লেনদেন করা, স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং সিস্টেম চালু করা, এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য শিক্ষা ও পরামর্শমূলক সেবা আরও সম্প্রসারণ করা দরকার। শেয়ার এবং শেয়ার মার্কেট একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফা অর্জনের সুযোগ তৈরি করে, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করে। তবে এর সুষ্ঠু পরিচালনা, স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যতের টেকসই বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে—নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। ভবিষ্যতের শেয়ার বাজার একটি সুরক্ষিত এবং লাভজনক বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, যদি সঠিক নীতি, জ্ঞান ও কৌশল ব্যবহার করা হয়।


শেয়ার ও শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে আলোচনা প্রথম পর্ব শেষ হলো। এই পর্বে শেয়ার ও শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। দ্বিতীয় পর্বে শেয়ার বিনিয়োগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার মার্কেট বিশ্লেষণ এবং তৃতীয় পর্বে থাকবে শেয়ার মার্কেট টিপস ও ট্রিকস। শেয়ারে বিনিয়োগ করার পূর্বে শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে ডিটেইলস জ্ঞান অর্জন না করে বিনিয়োগ করা খুবই ঝুকিপূর্ণ। তাই কিভাবে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ শুরু করবেন সেই লক্ষে এই নিবন্ধ সিরিজের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব তথ্যাবলী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং পরবর্তি পর্বে আলোচনা করা হবে। এই নিবন্ধ থেকে বিশেষ করে নতুনদের জন্য শেয়ার মার্কেট বিনিয়োগে সামন্যতম উপকৃত হওয়ার মাঝেই এই লেখার স্বার্থকতা।


Feriwala এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Post a Comment

0 Comments